কর্মসংস্থানের সরকারি তথ্য বলছে বেকারত্ব কমছে। Centre of Monitoring Indian Economy-র রিপোর্ট দেখাচ্ছে প্রতি মাসে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে দেশ যা এপ্রিলের শেষে এসে দাঁড়িয়েছে 7.83 শতাংশে।
ভারতের কর্মক্ষেত্র সংগঠিত ও অসংগঠিত দুই ভাগে বিভক্ত। সরকারি হিসেবে দেখা যাচ্ছে 2021 সালের এপ্রিল-জুন মাসে 3.08 কোটি কর্মীবাহিনী সংগঠিত ক্ষেত্রে যুক্ত চিল, যা জুন-সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর-ডিসেম্বরে বৃদ্ধি পেয়ে যথাক্রমে 3.1 কোটি ও 3.14 কোটিতে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই পরিসংখ্যানের ভিত্তি দেশের সংগঠিত ক্ষেত্র, যা মোট কর্মক্ষেত্রের প্রায় 20 শতাংশ। অর্থাৎ এই হিসেবে বিপুল সংখ্যক অসংগঠিত ক্ষেত্র বাদ রয়েছে। অন্যদিকে, CMIE -এর রিপোর্টে সংগঠিত ও অসংগঠিত দুই ক্ষেত্রই সমান গুরুত্বপূর্ণ পেয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী মার্চ থেকে এপ্রিল মাসে বেকারত্বের হার 0.23 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে 7.83 শতাংশ। CMIE-এর পরিসংখ্যান আরও বলছে, বিগত এক বছরে বেকারত্বের হার গড়ে 8.2 শতাংশ।
বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যা কর্মসংস্থানের আশা ছাড়ছেন। সংখ্যাটা 45 কোটির অধিক, দেশের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। বিপুল অংশের কর্মপ্রার্থীরা ছদ্ম বেকারত্বের শিকার। অর্থাৎ, তাদের যোগ্যতা, কর্মক্ষমতা অনুযায়ী অনুকূল পরিবেশ পাচ্ছেন না কর্মক্ষেত্রে৷ দেশের অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মচারী, শ্রমজীবীদের গড় উপার্জন মাসে আট থেকে দশ হাজার টাকা। অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক কাজের ঝুঁকি যেমন থাকছে, তেমন পাচ্ছেন না উপযুক্ত পারিশ্রমিক। শ্রমঘন্টাও কোথাও দশ ঘন্টা তো কোথাও বারো ঘন্টা।
বেকারত্বের চলতি সংজ্ঞার নিরিখে দেশে বেকারত্বের সঠিক পরিসংখ্যান বা পরিস্থিতি জানা সম্ভব নয়। বিপুল অংশের কর্মপ্রার্থীরা ছদ্ম বেকারত্বের শিকার। অর্থাৎ, তাদের যোগ্যতা, কর্মক্ষমতা অনুযায়ী অনুকূল পরিবেশ পাচ্ছেন না কর্মক্ষেত্রে৷ দেশের অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মচারী, শ্রমজীবীদের গড় উপার্জন মাসে আট থেকে দশ হাজার টাকা। অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক কাজের ঝুঁকি যেমন থাকছে, তেমন পাচ্ছেন না উপযুক্ত পারিশ্রমিক। শ্রমঘন্টাও কোথাও দশ ঘন্টা তো কোথাও বারো ঘন্টা। ফলে বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যা কর্মসংস্থানের আশা ছাড়ছেন। সংখ্যাটা 45 কোটির অধিক, দেশের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ।
বাসস্থানের থেকে কর্মক্ষেত্রের দূরত্বও একটি অন্যতম নির্ণায়ক। পরিবহন ব্যয় ও অন্যান্য খরচ বাবদ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অধিক দূরত্ব অতিক্রম করে স্বল্প বেতনের কাজ করতে নারাজ তাঁরা। যে কারণেও অনেকে দূর শহরে কাজের সন্ধান না করে স্থানীয় কাজে যুক্ত হচ্ছেন বা ছোট ব্যবসায় নামছেন। কোন্নগরের তিয়াসার কথায়, "প্রতিদিন সেক্টর ফাইভে যাওয়ার খরচ, খাওয়া দাওয়ার খরচ এত বেশি, সেই তুলনায় বাড়িতে বসে প্রোজেক্ট বেসড কাজ করা সুবিধাজনক।'
বহু মানুষ উপার্যনের জন্য বেছে নিচ্ছেন আংশিক সময়ের কাজ, তিন মাস বা ছয় মাসের স্বল্প দিনের চুক্তিতে। স্থায়ী কাজের বদলে এই খেপ খেলার মত কাজেই অভ্যস্ত হচ্ছে যুব সমাজ, যাকে অর্থনীতির পরিভাষায় বলা হচ্ছে গিগ ইকোনমি। এমনই এই কর্মী শ্রীকান্ত'র কথায়, “আইটি সেক্টরে কাজ করার সময় সপ্তাহে ছয় দিন সারাদিন কেটে যেত পথেঘাটে আর অফিসে, এখন কন্টেন্ট রাইটিংয়ের কাজ করে অল্প টাকায় পাচ্ছি। কিন্তু, কিছুটা সময় পরিবার, বন্ধুদের সাথে কাটাতে পারছি।''
বিশেষত কোভিড পরবর্তী সময়ে গোটা বিশ্বের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়েছে এই অস্থায়ী কর্মসংস্থান। বেতন কাঠামোর সর্বনিন্মে গিগ ওয়ার্কাররা অবস্থান করেন, অর্থনৈতিক বা সামাজিক সুরক্ষার দায়ও নেয় না কোম্পানি, তারপরেও বিপুল বেকার বাহিনী নাম লেখাচ্ছেন এই নয়া অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। অর্থাৎ, উপার্যনের পাশাপাশি সামাজিক ক্ষেত্রেও সময় দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন অনেকে।
2021 সালের তথ্য বলছে, দেশের 10 কোটি শ্রমিক কাজের সূত্রে ভিটে ছেড়ে বসবাস করছেন মুম্বাই, কলকাতা, চেন্নাই, ব্যাঙ্গালোরের মত মেট্রোপলটন শহরগুলিতে। লকডাউনের আগে মূলধারার আর্থ-সামাজিক আলোচনায় অপ্রসঙ্গিক ছিলেন এই মানুষগুলি। লকডাউন কালে পরিযায়ী শ্রমিকের দুর্দশা স্পষ্ট করেছিল কর্মক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিস্থিতে বেঁচে থাকার ছবি। পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশ আর ফিরে যাননি প্রবাসে, ভিন রাজ্যে। রায়দীঘীর আরমান মণ্ডল বস্ত্রবয়ন শিল্পের কাজে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন দক্ষিণ ভারতে। লকডাউনে ফিরে আসার পর জমানো টাকা পুঁজি করে খুচরো চা পাতার ব্যবসায় নেমেছেন।
চাকরির আশায় বছরের পর বছর প্রস্ততি নিয়ে যাচ্ছেন একাংশ কর্মপ্রার্থী। নিয়োগ তলানীতে অথচ বিদ্যালয়-কলেজ , সরকারি অফিস কিংবা ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র, সর্বত্র শূণ্যপদের সংখ্যা বাড়ছে বছর বছর, কিন্ত । কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য বলছে, 1 লক্ষ 12 হাজার 885 টি পদ ফাঁকা সরকারী কর্মক্ষেত্রে। বেসরকারিকরণের যুগে সরকারি চাকরির আকাল হওয়াটাই বাস্তবিক, তারপরেও কেন কর্মপ্রার্থীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন অক্লান্ত পরিশ্রম করে, পরীক্ষায় কারচুপি নিয়ে নামছেন পথে? এই সংকটকালে এখনও অনেকেই ভরসা করছেন কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের স্থায়ী চাকরি। সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য, কর্মচারীর অধিকারগুলি নিশ্চিত করার জন্য আজও ভরসা সরকারি ক্ষেত্র। সাম্প্রতিক কালে দেশজোড়া কর্মপ্রার্থীদের অসন্তোষ স্পষ্ট করে সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতিরত যুব সমাজের আর্তনাদ, বেকারত্বের জ্বালা। বেগমপুরের সুভাষ দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিসিএস পরীক্ষার জন্য। তাঁর আক্ষেপ, “ দেখতে দেখতে 28 বছর বয়স হয়ে গেল। বছরের পর প্রস্তুতি নিয়েছি, সঠিক সময়ে পরীক্ষা হয়নি। শূন্য পদ ফাঁকাই থেকেছে। আর এখন তো প্রাইভেটাইজেশনের বাজার!”
শিক্ষা, স্বাস্থ্য কিংবা পরিসেবা ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের যেমন বাড়ছে, তেমন শ্রমিক-কর্মচারিদের কাজের অনুকূল পরিবেশ হারাচ্ছে। কনট্রাকচুয়াল লেবারের অধিকার খর্ব হচ্ছে প্রতি মুহুর্তে, পারিশ্রমিক কিংবা শ্রমঘণ্টার প্রশ্নে। কর্মক্ষেত্রের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নিন্মমানের খাদ্য আর স্বল্প বেতনে খাটানো হচ্ছে চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকদের। তাই বহুক্ষেত্রেই সুযোগ পেলে কাজ ছেড়ে ফিরে আসছেন তাঁরা, বা অন্য সংস্থায় কাজের খোঁজ করছেন। শ্রীরামপুরের রাজীব গয়নার কাজে মুম্বাই গিয়েছিল। তাঁর অভিজ্ঞতায়, "ঠিক করে খাওয়া-পরার ব্যবস্থাটুকু ছিল না। সারাদিন কাজ করিয়ে 1000 টাকা দিলেও থাকায় রুমগুলো ছিল খুবই ছোট, অপরিস্কার। বড় শহরে ভাড়া ঘরে থাকাও অনেক টাকায় ব্যাপার।" টাকা উপার্জন করলেও সম্মান ছিল না ওখানে মনে করেন রাজীব।
সার্বিকভাবেই অনিশ্চয়তা, উৎকণ্ঠা গ্রাস করছে শ্রমবাহিনীকে, বেকার যুবকযুবতীদের। ‘সরকারি খাতা’য় বেকারত্বের গ্রাফ ক্রমহ্রাসমান হলেও সামগ্রিক বিশ্লেষণে বেকারত্বের আঁতুড় ঘর ভারতবর্ষ, আর সে কারণে সস্তা শ্রমিকের যোগানদারও এই দেশ। একেই হয়তো প্রধানমন্ত্রী ‘সোনালীযুগ’ আখ্যায়িত করেছেন।
সাম্প্রতিক ইউক্রেন সংকট তুলে ধরল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী সংঘাতকেই।
শাসকবিরোধী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বদলি প্রসঙ্গে বেফাঁস মন্তব্য করলেন নির্মল মাজি
বন্ধু বা আস্থাভাজন সঙ্গীর দ্বারা ধর্ষণের প্রবণতা সাম্প্রতিক কালে ক্রমবর্ধমান হচ্ছে ভারতের সমাজজীবনে।
বেকারত্বে জীর্ণ দেশের যৌবন, বিক্ষুব্ধ কর্মপ্রার্থীরা পথে নামছেন দেশের নানান প্রান্তে
সাম্প্রদায়িক হিংসার বাতাবরণে শ্রীরামপুরে অনুষ্ঠিত হল সম্প্রীতির লক্ষ্যে পদযাত্রা
মরিচঝাঁপির দলিত উদ্বাস্তু গণহত্যার চাপা পড়া ইতিহাস আজও প্রাসঙ্গিক