লকডাউনে মানুষ প্রায় পুরোপুরি অনলাইন নির্ভর। ইলেকট্রিক বিলের টাকা দেওয়া, কিংবা মোবাইল রিচার্জ, বা অনলাইনে বাজার করা, সবটাই এখন বাড়িতে মোবাইল বা ল্যাপটপের মাধ্যমে করে ফেলছে বর্তমানের ইন্টারনেট-স্বচ্ছন্দ প্রজন্ম। ভেতো ল্যাদখোর বাঙালির নতুন জীবন নিয়ে ওই ইন্টারনেটেই মিমের ছড়াছড়ি। কিন্তু, এই স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন উপভোগ কি সবাই করতে পারছেন আদৌ? এখানেও কি অনলাইনে ক্লাস করার মতো একটা ডিজিটাল ডিভাইড নেই? আর ডিজিটাল পাঁচিলের ওপারে যারা, তারা ওপারে থাকার জন্যই কি এই সংক্রান্ত চর্চায় এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট পরিমাণে আসছেন না?
ষাটোর্ধ্ব এক নিঃসন্তান দম্পতি থাকেন উত্তর কলকাতার এক আবাসনে। ইন্টারনেট ব্যবহার তাঁদের কাছে সহজ বিষয় নয়। তাঁরা এই লকডাউনে কী করছেন? মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে তাঁদেরই পরিচিত এক চল্লিশোর্ধ্ব দম্পতি থাকেন, তাঁদের স্মার্টফোনই নেই। তাঁদের বছর দশেকের মেয়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার জানে, কিন্তু টাকা-পয়সা লেনদেন স্বভাবতই দুর্বোধ্য তার কাছে। বেলগাছিয়া বস্তিতে থাকা এক দম্পতি ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপ করতে অভ্যস্ত হলেও কোনওদিনই ইন্টারনেটে টাকাপয়সা লেনদেন করেননি। এই মানুষগুলোর জীবনে লকডাউন এলেও ইন্টারনেটের সুবিধা এখনও এসে পৌঁছতে পারেনি। এখনও পাশের বাড়ির ছেলেটি বা পাড়ার মেয়েটি বা কোনও আত্মীয়ই ভরসা এঁদের সাধারণ দৈনন্দিন জীবনযাপনে।
আর্থ-সামাজিক বিচারে একটু সবল হলেও কিন্তু কাজের ব্যাপারে ইন্টারনেট ব্যবহারে সকলে সক্ষম নন। দমদমের বহুতলে থাকেন বছর ষাটের শ্রীময়ী রায়। তাঁর কাছে ইন্টারনেটের অর্থ ফেসবুকে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব বা প্রতিবেশীর লেখা পড়া এবং তাঁদের ছবি দেখে সাময়িক ভাবে মনোরঞ্জনের উপাদান খুঁজে নেওয়া। শ্রীময়ী দেবীর কথায়, “আমি বা আমার স্বামী তো ইন্টারনেটের সঙ্গে সেই অর্থে অভ্যস্ত নই কেউই, আমার পাশের বাড়ির ছেলেটি আমার ইলেকট্রিক বিল দেওয়া এবং ফোন রিচার্জ অনলাইনে করে দেয়। বাড়ির নীচে যে সব্জিওয়ালা ভ্যান নিয়ে আসে, তার থেকেই সব্জি কিনি। আমরা দু’জনেই রিটায়ার্ড মানুষ, একদিন কিনলেই অনেকদিন চলে। কালিন্দী থেকে একজন মাছওয়ালা আসে, ওর থেকেই মাছ কিনি। বাজারে যাওয়া তো সম্ভব না আমাদের এই বয়সে এখন, এইভাবেই চলছে আমাদের লকডাউন।” বেলগাছিয়ার সীমা দেবীর কথায়, “আমার ছেলে ইলেকট্রিক বিলের টাকা অফিসে গিয়ে দিয়ে আসে। আমাদের বাড়ির সামনেই বাজার। বাজার ওখান থেকেই করি আমরা। বাজারে জিনিসপত্র দেখে কেনা যায়, ইন্টারনেটে সেসব সম্ভব নয়।”
মেদিনীপুরের ঘাটাল এবং দাসপুরের অবস্থাও একই। সমগ্র গ্রাম নির্ভরশীল ‘পার্টি’-র ছেলেদের উপর। বাজার বসছে। তবে সেখানে এত ভিড়, সবসময় যাওয়া সম্ভব নয়। পার্টির (যার মানে অবধারিতভাবেই শাসক দল) ছেলেদের ফোন করলে সব্জি, বাজার, মাছ সবকিছু বাড়িতে দিয়ে যাচ্ছে। বাজারের থেকে বেশি দাম, তবে বাড়ি থেকে বের হতে হচ্ছে না বয়স্ক মানুষদের।
লকডাউন অনেককে নতুন করে শেখাল ইন্টারনেটের ব্যবহার। অনলাইন আদানপ্রদানের ফলে কীভাবে খরচ এবং পরিশ্রম কমানো যায়, তা বুঝেছেন অনেকেই। যাঁরা এখনও ইন্টারনেটে অভ্যস্ত হতে পারেননি, তাঁদের ভরসা পাড়া-প্রতিবেশী, স্থানীয় সমাজ। আধুনিক প্রযুক্তির সুযোগ থেকে তাঁরা বঞ্চিত। আবার অন্য দিক থেকে দেখলে মানুষের নিবিড়তর সংযোগে তাঁরা ঋদ্ধ। প্রযুক্তি ভাল, মানুষও মন্দ নয়!
আমার নাগরিকত্বের প্রমাণ চাওয়ার তুমি কে হে বাপু?
রবীন্দ্রভারতীর কর্তৃপক্ষ পরবর্তী বছর থেকে অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করবেন বলে জানিয়েছেন
লকডাউনে সবার কাছে সেই মুক্তির জানলা হল সোশাল মিডিয়া।
সোশাল ডিস্ট্যানসিং বজায় রাখা তো দূরের কথা, বাজারের থলে হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়েই চলছে অনর্গল গল্প।
বর্তমান থেমে গিয়েছে, ভবিষ্যৎ কী?? আমরা জানি না।
করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রেও পরিবেশ রক্ষার মতোই দীর্ঘমেয়াদী এবং কঠোর পদক্ষেপ করেছে সিকিম রাজ্য সরকার।