×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • এভাবে আর কতদিন! ‘লাইভ আর্টস’ কবে আনলক হবে?

    অর্যমা দাস | 20-07-2020

    বর্তমান থেমে গিয়েছে, ভবিষ্যৎ কী?? আমরা জানি না।

    তিন মাসের মাথায় দুর্গোৎসব। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে জড়িয়ে রয়েছেন নানা ধরনের অসংখ্য শিল্পী, বছরে একবারই যাঁরা পুরো সময়ের কাজ করে যোগ্যতামাফিক রোজগার করেন। তাঁদের একটা বড় অংশের আবার 'বিবাহ' নামক সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানটি উপলক্ষেও বছরের কয়েকটা মাস রোজগারপাতি হয়। মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে তাঁদের সকলেরই বাধ্যতামূলক কর্মবিরতি চলছে – তা সে সরকারি ঘোষণায় সময়টা লকডাউন হোক বা আনলক। পেশাগতভাবে তাঁরা সকলেই চরম সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। 

     

    ভাদ্র মাস পড়ে গেল, অথচ কোনও বড় কাজ নেই, অর্ডার নেই, টাকাপয়সার লেনদেন একেবারেই বন্ধ। এই সময় কুমোরটুলির এমন চেহারা নজিরবিহীন। মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে বিপন্ন প্যান্ডেল-কারিগর, প্রতিমা বহনকারী, প্রতিমা-সাজসজ্জা কারিগররাও। অন্যদিকে, রোজগার বন্ধ বিয়েবাড়ির ডেকরেটর, হল মালিক, পুরোহিত, ফটোগ্রাফার, মেকআপ আর্টিস্টদের। কারও জমানো টাকা শেষের পথে, কেউ কেউ ইতিমধ্যেই নিঃস্ব। এভাবে আর কতদিন!

     

    কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী-সমিতির সভাপতি কার্তিক পালের কথায়, “আমরা খুবই আশাবাদী। তবে, মাত্র তিন মাস বাকি, এখনও বড় প্রতিমার বায়না আসেনি। 8 ফুট থেকে 9.5 ফুট পর্যন্ত প্রতিমার বায়না এসেছে কিছু। নিশ্চয়ই আগস্টের শেষে অন্যান্য ক্লাব থেকেও বায়না আসবে বড় ঠাকুরের। কাজ চলছে, তবে আগের থেকে অনেক কম।“

     

    প্রতি বছর পুজোর মাস তিনেক আগেই ঝুড়ি ঝুড়ি প্যান্ডেল তৈরির অর্ডার পান ডেকরেটর বিকাশ ঘোষ। এই বছর  বিগত চার মাস তাঁর কোনও কাজ নেই। দুঃশ্চিন্তায় কাটছে তাঁর প্রতিটা দিন। বিকাশবাবুর কথায়, “আমার তো ডেকরেশনের ব্যবসা। জমানো টাকা দিয়ে চলল এতদিন। আমার কর্মচারীরা থাকেন বনগাঁ, বসিরহাটের দিকে। তাঁরা এখন জামাকাপড় সেলাই করে, অন্যের জমিতে চাষাবাদ করে কোনও রকমে দিনযাপন করছেন। কবে যে আবার দিন ফিরবে জানা নেই। আমার বাঁধাধরা কাস্টমারদের ফোন করছি, তাঁরাও বলছেন জানেন না।“

     

    বাঙালির ‘বিয়ের সিজন’ বলতে মূলত বছরের দুটো সময়, বৈশাখ-শ্রাবণ আর মাঘ-ফাল্গুন, ব্যবসা চলে রমরমিয়ে; অন্যান্য বছরগুলোতে এইসময়ে হাঁফ ছাড়ার সময় হয় না। হবেই বা কীকরে? ছোট-বড় বিয়ের কাজ থেকে সঞ্চিত অর্থেই তো সারা বছর চলে তাঁদের। এদিকে, করোনার পর থেকে একের পর এক বিয়ের কাজ বাতিল হয়েছে, হচ্ছে। গড়িয়ার ওয়েডিং-ফটোগ্রাফার অভিনন্দন দে'র কথায়, “করোনার সময়ে এই অবস্থায় কাজে যাওয়া, কাজ করা দুইই ভয়ের হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রিয়েটিভ কাজ করতে গেলে যে মানসিক শান্তি প্রয়োজন সেটা আর নেই। আমি নিজেই জুন মাসে একটা ছোট্ট ওয়েডিং শুট করতে গিয়ে বুঝেছিলাম যে, সব পাল্টে গেছে। শুধু ভয়, ভয় আর ভয়।“ আসলে কাজই নেই। মোটামুটি সব বিয়ের অনুষ্ঠানই স্থগিত। প্রচুর ফটোগ্রাফারের মার্চ থেকেই কাজ নেই। এভাবে আর কতদিন চলবে কেউ জানে না। অভিনন্দনের কথায়, “এখন ক্যামেরার লেন্সের ইএমআই সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় গ্যাজেট, ফোন, ইন্টারনেট, এডিটিং সফ্টওয়্যার এসবের খরচ চালিয়ে এতগুলো মাস সংসার চালানোই বড় চ্যালেঞ্জ। ভ্যাকসিন না এলে এই অবস্থা থেকে মুক্তি অসম্ভব। “

     

    মেকআপ আর্টিস্টদেরও একই সমস্যা। বারাসতের মেকআপ আর্টিস্ট মৃত্তিকা বৈদ্যের কথায়, “এই সময় অনেকগুলো বিয়েবাড়ির অর্ডার ছিল। লকডাউনের জন্য সবকটা অর্ডারই বাতিল হয়েছে। শুধু বিয়েবাড়িই নয়, মডেল শুটও বন্ধ। ফলে, আমার রোজগারের কোনও পথই এখন আর খোলা নেই।“

     

    লকডাউনের জেরে থিয়েটার বা ‘লাইভ আর্টস’ একেবারেই বন্ধ। প্রেক্ষাগৃহ এখনও খোলেনি। দর্শক আবার কবে থিয়েটারমুখো হবে, তার কোনও উত্তর নেই এখনও। তপন থিয়েটারের ম্যানেজার অশোক রায় 2000 সাল থেকে হলের মালিক। তাঁর কথায়, “চার মাস ধরে হল বন্ধ। মাইনে পাচ্ছি অর্ধেক। আমাদের সংসার আর চলছে না। তবু, বাড়িতে বসে থাকতে পারছি না, প্রতিদিন হলে আসছি আমরা। একটু গল্প করলেও মন ভাল হয়। শিল্পীরা কম টাকার বিনিময়ে মাঝেমধ্যে কিছু নাটকের প্র্যাকটিস করছেন। সেটুকুই হোক। এই তো কিছুদিন আগে পরমব্রত, যীশু, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এসে একটা ছবির রিহার্সাল করে গেলেন। এই রকমই চলছে। পাবলিক হলের কর্মচারীদের কিছু মাসোহারার জন্য আবেদন করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। এখনও কোনও উত্তর আসেনি। কী যে হবে! আমরা জানি না।“

     

    থিয়েটার অভিনেত্রী সম্প্রীতি চক্রবর্তীর কথায়, “থিয়েটারটাই আমার পেশা। বিগত চার মাস ধরে কোনও স্টেজ-পারফরম্যান্স নেই, কোনও রিহার্সাল নেই। ক্রিয়েটিভ কাজ করি, কাজ করতে না পেরে মন একদম ভাল নেই আমার। যাঁদের সংসার চলে থিয়েটারের টাকায়, তাঁরা সত্যিই বিপদে পড়েছেন। আমরা বন্ধুবান্ধবরা যতটা পারছি সাহায্য করছি। তবে সেটা আর ক’দিন? আমাদের জমানো টাকাও তো শেষ হতে চলেছে।“

     

    দুর্গাপুজো, বিয়েবাড়ি, থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত অসংখ্য শিল্পী, শ্রমজীবী মানুষ এখনও কোনও আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না। মানুষ যখন বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত তখন শিল্পের জন্য সময়, উদ্যম, অর্থ কোথায়?   

     


    অর্যমা দাস - এর অন্যান্য লেখা


    অনলাইন আদানপ্রদানের ফলে কীভাবে খরচ এবং পরিশ্রম কমানো যায়, তা বুঝেছেন অনেকেই।

    রঙের আমি, রঙের তুমি, রং দিয়ে যায় চেনা।

    জীবন গোছানোর তাগিদে তাঁর পড়াশোনাটা হয়ে ওঠেনি কখনোই

    রবীন্দ্রভারতীর কর্তৃপক্ষ পরবর্তী বছর থেকে অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করবেন বলে জানিয়েছেন

    গোটা হলঘর সুশান্তের হাসিতে গমগম করছিল।

    এভাবে আর কতদিন! ‘লাইভ আর্টস’ কবে আনলক হবে?-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested