উত্তর-পূর্ব সিকিমের ছোট্ট একটি হ্রদের নাম 'খেচিপেরলি লেক'। স্থানীয় নাম খা-ছট্-প্যারলি। হ্রদটি আয়তনে 12 বর্গকিমি, গভীরতা প্রায় 24 ফুট। হ্রদের চারপাশে হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মের নানা পূজাপার্বণ হয়, পর্যটকরা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বেশ কিছুটা হেঁটে আসেন এই হ্রদটি দেখতে। এছাড়া স্থানীয় মানুষের আনাগোনা তো রয়েছেই। হ্রদটির বৈশিষ্ট্য হল এর পরিচ্ছন্নতা। স্বচ্ছ জলের উপর থেকে পরিষ্কার দেখা যায় মাছ কিলবিল করছে। স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস, এটা একটা পবিত্র হ্রদ, তাই কেউ নোংরা করলে নাকি তার নিজের জীবনেই কোনও ক্ষতি হবে। গাইডদের ভাষায়, ‘হ্রদে একটি পাতা পড়ে থাকলে পর্যন্ত কোনও পাখি তা এসে মুখে করে সরিয়ে নিয়ে যায়’। সত্যি যায় কি না যায়, তার চেয়ে অনেক বড় হল এই বিশ্বাস। পরিবেশকে ধর্মস্থানের মতো পরিচ্ছন্ন রাখার এই মানসিকতা, ঠিক এই খেচিপেরলি হ্রদের মতোই সচেতনতা দেখা যায় সিকিমের সর্বত্র। প্রতি বছর সিকিমে প্রচুর পর্যটক আসে। মাত্র সাড়ে ছয় লক্ষ জনসংখ্যার এই রাজ্যে 2019- এ পর্যটকের সংখ্যা ছিল, 1 লক্ষ 33 হাজারের বেশি। ভারতের 'পূর্বের সুইজারল্যান্ড' বলে অভিহিত এই রাজ্য বহু বছর ধরেই সম্পূর্ণ প্লাস্টিক-মুক্ত। পরিবেশ সচেতনতা এবং পরিচ্ছন্নতাকে সরকারি কর্মসূচি আর পাঠ্যপুস্তকের বাইরে এনে মানুষের জীবনযাপনের সঙ্গে যুক্ত করতে পেরেছে সিকিম।
আরও পড়ুন
করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রেও পরিবেশ রক্ষার মতোই দীর্ঘমেয়াদী এবং কঠোর পদক্ষেপ করেছে সিকিম রাজ্য সরকার। গোটা রাজ্যটাই সাত মাসের জন্য যেন আইসোলেশন বা স্বেচ্ছা-নিভৃতবাসে চলে গিয়েছে। সিকিমে মে মাস পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য। সম্প্রতি রা-বাংলার একজন 25 বছর বয়সি ছাত্রী চিকিৎসার কারণে দিল্লিতে থাকার পর ফিরে আসেন সিকিমে। তিনিই সিকিমের প্রথম করোনা পজিটিভ রোগী। বর্তমানে পশ্চিম সিকিমে বাইরে থেকে আসা আরও 6 জন করোনা পজিটিভ। অর্থাৎ সিকিমে বর্তমানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাটা 7। রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত কোনও বিদেশী পর্যটক আসতে পারবে না এই রাজ্যে এবং দেশীয় পর্যটকদের জন্য এই বিধি 20 অক্টোবর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। মার্চ মাসের প্রথমেই এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং। সিকিমের অর্থনীতির একটা বড় অংশ পর্যটন। সেই ব্যবসা বন্ধ থাকায় প্রচুর লোকের উপার্জন বন্ধ হবে বলে সরকার তাদের জন্য বিশেষ ভাতারও ব্যবস্থা করেছে।
আরও পড়ুন
অন্যদিকে সিকিমের লাগোয়া রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা 9.3 কোটি। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা 8,613। 9 জুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা একদিনে 426 জন বেড়েছে। এরই মধ্যে 8 জুন রাজ্যে প্রায় লকডাউন উঠেই গেল। বেসরকারি অফিস, ধর্মস্থান, শপিং মল, বাজার সমস্ত কিছু খুলে দেওয়ার অনুমতি দিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। বাজারে গেলে তো লকডাউন চলছে তা বোঝারই সাধ্য নেই। সিকিমের মতো ছোট রাজ্য এবং পশ্চিমবঙ্গের বাস্তবতা অনেকটাই আলাদা। কিন্তু ভাইরাসকে অবাঞ্ছিত বলে গণ্য করার এবং তার থেকে সমাজ ও পরিবেশকে মুক্ত রাখার মৌলিক ধারণাটি সর্বত্রই এক। খেচিপেরলি লেকের আশেপাশেও হিন্দু-বৌদ্ধ রীতি মেনেই পূজা অর্চনা হয়, যেমনটা হয় তারকেশ্বর, তারাপীঠ, দক্ষিণেশ্বরে। সেখানে দুর্গাপূজা, কালীপূজা এবং বিশেষত ছটপুজোর পর কলকাতার জলাশয়গুলি খুবই খারাপ অবস্থা হয়। পরিবেশের পার্থক্যটা কিন্তু সকলেরই চোখে পড়তে বাধ্য।
আরও পড়ুন
বর্তমান থেমে গিয়েছে, ভবিষ্যৎ কী?? আমরা জানি না।
জীবন গোছানোর তাগিদে তাঁর পড়াশোনাটা হয়ে ওঠেনি কখনোই
লকডাউনে সবার কাছে সেই মুক্তির জানলা হল সোশাল মিডিয়া।
দুই বাংলার শিল্পীদের নিয়ে তৈরি হল গান-
বাজারে চাল, আলু, মুড়ি একেবারেই নেই। আর নেই যেটা সচেতনতা।
ইরফান খানের 13টা উল্লেখযোগ্য সংলাপ, যা মানুষকে উজ্জীবিত করে।