গোলাপ, গাঁদা, গন্ধরাজ, রজনীগন্ধা... গন্ধে একেবারে ম ম করছে। করোনা-কোভিডের ভাইরাসও খানিক বিশ্রাম নিয়ে শুঁকছে। ধরাধামে রমরম করে আবির্ভাব হওয়ার পর থেকে সক্কলে খালি গালমন্দই করেছে ওদের। এই প্রথম হাসপাতালের উপর পুষ্পবৃষ্টি হল। হোক না তা ডাক্তার-নার্স-হাসপাতালের কর্মীদের জন্য। এক যাত্রায় তো আর পৃথক ফল হয় না। ফুলের পাপড়িতে স্নান তো ভাইরাসের বংশধররাও করেছে।
এত ভাল কাজ করেও কোনও লাভ নেই। এ দেশের মানুষ ভাল কাজের বাহবা দিতেই জানেন না। যাঁরা দিনরাত এত পরিশ্রম করে রোগীদের সেবা করছেন তাঁদের জন্য এটুকু করা কি অন্যায়? একেবারেই নয়। ওসব মাস্ক, পিপিই, টেস্ট কিট সব ফালতু। ওইসব করে কোনও লাভ নেই। তা হলে তো আরও বেশি রোগী ধরা পড়বে। আরও বেশি পরিশ্রম করতে হবে ডাক্তার-নার্সদের। তার চেয়ে বরং এই ভাল। সুন্দর গন্ধওয়ালা পাপড়ি দিয়ে গোবর ঢেকে দাও। পচা গন্ধ কারও বাবাও টের পাবে না। অবিশ্যি গোবর না ঢাকলেও চলত, পড়ে থাকত না। এত ভক্তকূলের কেউ না কেউ ঠিক পেন্নাম ঠুকে ‘প্রসাদ’ খেয়ে নিত।
বাজে লোকজন খালি গেল গেল বলে চেঁচায়। আরে চেঁচালেই কি এত্ত বড় দেশ চালানো যেত? পাঁচ পেরিয়ে ছয় নম্বর বছরেও একা একা বুক ঠুকে বলে যান কত্তা। একটি বারও পাল্টা প্রশ্ন করার সুযোগ দেন না। এ কি কম বড় কথা? হাঁড়ি-কড়াই বাজিয়ে, পিদিম জ্বেলে অকাল দিওয়ালি অবধি দেশে এনে ছেড়েছেন তিনি। সেখানেই তো অর্ধেক ভাইরাস আত্মহত্যা করেছে। ভক্তকূল তো প্রচারও করেছিল, পিদিম জ্বালালে করোনা রক্তবমি করে মারা যাবে। রক্ত আমাশা হবে ওদের। পরে সেই গভীর রাতেই বাজি পোড়া খোলের সঙ্গে করোনার রক্ত আর বমি পরিষ্কার করতে ঝাঁটা নিয়ে মাঠে নেমেছিল ভক্তকূল। কত্ত বড় আত্মত্যাগ। এঁরা না থাকলে দেশ যে কোন অন্ধকারে ডুবে যেত তার ঠিক নেই!
এট্টু মেইন ইভেন্টের দিকেও নজর দিন। থালাবাটির পর হাতে হ্যারিকেন ধরানো ছিল সেমি ফাইনাল। ফাইনালে গোল করলেন পাপড়ি ছুঁড়ে। সামরিক বিমান-চপার থেকে দেশের প্রায় সব বড় শহরের বড় বড় হাসপাতালের ওপর ফুলের বৃষ্টি হল। ওহঃ, সে এক দেখার মতো দৃশ্য। কত্তাও গাইলেন, চপারোঁ ফুল বরসাও, মেরা মেহবুব...। না তাঁর তো আবার মেহবুব থেকেও নেই। এই বৃষ্টিতে বাকি করোনার পঞ্চত্ব প্রাপ্তি হবে, কোনও সন্দেহ নেই। তবে এক ফোঁটা চোনার মতো সারা দেশ থেকে একটা কোলাহল, চাপা গোঙানি ভেসে এসেছে ওই একই সময়। ভুখা পেটে থেকেও গলার জোর এত হয় কী ভাবে ওদের, সেটাই মাঝে মধ্য কত্তা ভেবে পান না! সাহস কত বড় ওদের, অ্যাঁ। আজ বাদে কাল না খেয়েই মরবি, তার পরেও কিনা, রাজার মূর্তির মুখে ঢেলা ছুঁড়ে মারে!
গোঙানিটা ঠিক করে শুনলে বোঝা যেত, ডাকটা ওদের পেট থেকেই আসছিল। গলায় জোর নেই ওদের। খালি পেটের ডাকই সারা দেশে অশরীরীর মত ঘুরে বেড়াচ্ছে। অসহায় চোখে ওরা দেখছিল আর ভাবছিল, যদি ফুলের পাপড়ির বদলে ওগুলো রুটি, বাতাসা, মুড়ি, মিষ্টি হত, তবে কেমন হত? গুপী-বাঘা শুধু রূপকথাতেই হয়। উদয়ন মাস্টাররা অনেকেই মুখে টাকা গুঁজে চুপ করে গিয়েছেন। যাঁরা করেননি তাঁরা হয় জেলে, না হয় চিতায়, না হয় মাটির নীচে। আর যাঁরা আছেন, তাঁরা পাহাড়ের গুহায় গুপী-বাঘার অপেক্ষা করছেন।
৫ জানুয়ারি রবিবার সন্ধ্যায় জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখ ঢাকা গুন্ডাদের আক্রমণের পর এ ভাষায় গর্জে
পেটের জ্বালায় মায়ের বুকে হয়তো একটু আশ্রয় খুঁজছিল শিশু মন।
করোনার কালো গ্রাসে এ বছর সবই গিয়েছে। না রয়েছে বিক্রেতাদের পসার, না হয়েছে মেলা, বাতিল হয়েছে বাউল গান
মাননীয় হঠাৎ আটের আস্ফালন ছেড়ে ৯-এর ঘাড়ে চড়ে বসলেন কেন? কারণ নিশ্চয়ই আছে।
ভাল করে বাংলা না বলেও বাংলার মানুষের জন্য প্রাণ কেঁদে ওঠে যাঁর, সেই ঘোষবাবু বদলের সঙ্গে বদলার স্বপ্ন
বিগত সাড়ে তিন দশক ধরে চেরনোবিল সারা বিশ্বের বহু মানুষের কাছে কৌতুহলের বিষয়। ঠিক কী হয়েছিল সে রাতে?