×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • ছবিটাই পরিস্থিতি বোঝানোর জন্য যথেষ্ট

    রজত কর্মকার | 28-05-2020

    মায়ের চাদর ধরে টেনে ঘুম থেকে ওঠানোর চেষ্টা খুদের

    ও মা... ওঠো না মা...।

     

    মুখে ঠিকমতো কথা ফোটেনি। চিরঘুমে থাকা মায়ের চাদর ধরে টেনে ওঠানোর চেষ্টা করছে শিশুটি। মনে মনে নিশ্চয়ই ওই কথাগুলিই বলছিল সে। তবে মা যে আর কোনওদিন উঠবে না তা বোঝার মতো ক্ষমতা ওর নেই। বোধ হয় পেটের জ্বালায় মায়ের বুকে একটু আশ্রয় খুঁজছিল। ততক্ষণে সেই একই জ্বালা আর তৃষ্ণায় মৃত্যুর কোলে আশ্রয় নিয়েছেন অভাগী।

     

    গত কাল থেকে সোশাল মিডিয়ায় এই ছবি (ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন এখানে) দেখে বহু মানুষ নিঃশব্দে চোখের জল ফেলেছেন। হয়তো এই প্রতিবেদন পড়ার সময়ও তাঁদের চোখের কোল চিকচিক করবে। করোনা পরবর্তীকালে পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যু মিছিলের নয়া সংযোজন ক্ষুধা-তৃষ্ণা-ক্লান্তিতে প্রাণ হারানো এই জননী। আহমেদাবাদ থেকে বিহারে ফিরছিলেন ওই মহিলা। দুই সন্তান এবং পরিবারের সঙ্গে গত শনিবার শ্রমিক স্পেশালে চেপেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাড়ি আর ফেরা হল না।

     

    লকডাউনে আটকে পড়ায় জমা-পুঁজি বহুদিন আগেই শেষ হয়েছে। খাবার বা জল কেনার সামান্য টাকাও হাতে ছিল না মহিলার। বহুক্ষণ ট্রেনের মধ্যে অসুস্থতার কথা বলছিলেন। মুজফ্ফরপুর স্টেশনে এসে টলে পড়ে যান। তখন সপরিবারে স্টেশনেই নেমে যান সকলে। প্ল্যাটফর্মেই শুইয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। তারপরই ওই মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী হয় গোটা দেশ। হয়তো সামান্য খাবার এবং জল তাঁকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারত। কিন্তু ট্রেনে সে সবের কোনও ব্যবস্থাই ছিল না। যে সমস্ত স্টেশনে ট্রেন থেমেছে সেখানেও জল অপর্যাপ্ত বা অমিল। খাবারের কথা না হয় বাদই দেওয়া গেল। বিভিন্ন স্টেশনে নিঃস্ব পরিযায়ীদের হাহাকার আর ক্ষোভ বারবার এই চরম অব্যবস্থার কঙ্কালসার চেহারা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে।

     

    এর আগেও বহু মর্মান্তিক ঘটনার ছবি দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। মহারাষ্ট্রের রেল ট্র্যাকে ছিন্নভিন্ন ষোলো জন শ্রমিকের দেহ, উত্তরপ্রদেশে ট্রাকের ধাক্কায় মৃত শ্রমিকরা, কখনও বা হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে বন্ধুর কোলে মাথা রেখেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া যুবক। 28 মে বৃহস্পতিবার নতুন করে সুপ্রিম কোর্টে পরিযায়ীদের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে শুনানিগত শুনানিতে কেন্দ্রের পিঠ থেকে দায়ের বোঝা নামাতে সক্ষম হয়েছিল শীর্ষ আদালত। নতুন শুনানিতে কী হয় তা নিয়ে আর যাই হোক পরিযায়ীদের কোনও মাথাব্যথা নেই। গত দু-তিন মাসে ওঁরা এই সারসত্য বুঝে গিয়েছেন, ওঁরা শুধুমাত্র ভোটার। তাই ভোটের সময় ওদের পা ধুইয়ে দেওয়া হয়। এটা-সেটা পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। সামান্য কিছু উপরি পাওনাও জোটে।

     

     

    সেই ভ্রম থেকেই হয়তো ওঁরা ভাবেন, আহা এমন রাজা ক জন রাজা হয়...। সকলের ঘুম যে ভাঙবে না তা আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। এ দেশে মানুষের ঘুম খুব গাঢ়। বারবার ধাক্কা দিয়েও তাঁদের ঘুম থেকে জাগানো মুশকিল। দেশে কত রকম ঘুমপাড়ানি গান আছে। ধর্ম, জাতপাত, পাকিস্তান, 20 লক্ষ কোটি...। ওঁদের সামনে মুলোর টোপের কোনও অভাব নেই। যে কোনও একটা গিললেই ফের ঘুম। কিন্তু যাঁদের ঘুম ভেঙেছে, তাঁরা দয়া করে নিজেদের শুধুমাত্র ভোটার ভাববেন না।

     

    এ দেশে প্রত্যেক মানুষের জন্য বিশেষ কিছু অধিকার এবং ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে। কেউ সে কথা আপনাদের বোঝাতে আসবে নাকারণ সাধারণ মানুষ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হলে ক্ষমতাধারীদের সমূহ বিপদ। তাই একটাই অনুরোধ, দেশের অধিকাংশ মানুষ গণতন্ত্র বলতে যা বোঝেন, সেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করার আগে অন্তত ওই ঘুমপাড়ানি গানগুলি নর্দমায় বিসর্জন দিন। আঙুলে কালি লাগানোর আগে একটু ভাবুন। অন্তত ওই অভাগা শিশুটির মুখ চেয়ে একটু ভাবুন।


    রজত কর্মকার - এর অন্যান্য লেখা


    এমনিতেই মোদীবাবুর গুণের শেষ নেই। এত গুণের সঙ্গে তিনি কি ভবিষ্যৎদ্রষ্টাও?

    ৫ জানুয়ারি রবিবার সন্ধ্যায় জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখ ঢাকা গুন্ডাদের আক্রমণের পর এ ভাষায় গর্জে

    এ বারের বক্তিমে “ছাত্রোঁ কে লিয়ে”। ওই “মিত্রোঁ”বলতে গিয়ে ছাত্রোঁ বলে ফেলেছেন। তা বলে ফেলেছেন যখন, তখ

    বিরাট অর্থনৈতিক ক্ষতে আপাতত মলমের কাজ করছে ওয়ার্ক ফর্ম হোম।

    খাদ্য-খাদক সম্পর্ক না থাকলেও যে এ ভাবে অন্য প্রজাতির খাবার লোপাট করা যায়, তা দিল্লি গেলে বুঝবেন।

    শুধুমাত্র বিদ্যা বালানের অভিনয়ের জন্যেই সিনেমাটি একাধিকবার দেখে ফেলা যায়, ‘বিদ্যা কসম’।

    ছবিটাই পরিস্থিতি বোঝানোর জন্য যথেষ্ট-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested