×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • ব্রহ্মপুত্র চরের উপাখ্যান: হত্যা, উচ্ছেদ, ভিটে হারানোর দিনপঞ্জি

    রাতুল গুহ | 29-11-2021

    প্রতীকী ছবি, আকবর হোসেন মল্লিকের তোলা

    ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় পলি পড়ে গড়ে ওঠে চাষজমি, ভিটে। বছর বছর চরবাসী বীজতলা সাজায়  ফসলের স্বপ্নে। কিন্তু নদী কেবল গড়েই না, ভাঙে নির্ধারিত সমীকরণ, গ্রাস করে জমি! কেবল তো নদী নয়, চরবাসী রাত কাটায় বিধ্বংসী বুলডোজারের আতঙ্কে। নাগরিক পঞ্জিতে নাম তোলার লড়াই শেষে আসামের চরবাসী আজও ‘বিদেশি', ‘জমি খাদক'!

     

    আসামে দ্বিতীয়বার ক্ষমতা দখলের পরে হেমন্ত বিশ্বশর্মার নেতৃত্বে হিন্দুত্ববাদী প্রকল্প এগোচ্ছে দুর্দমনীয় বেগে। তারই ধারাবাহিক পরিণতিতে দারাং জেলায় ব্রহ্মপুত্র-চরবাসী ‘মিয়া মুসলমান'-দের  উচ্ছেদ এবং হত্যার ঘটনা সামনে এসেছে। নির্বাচনের প্রাক্কালেই বিশ্বশর্মা প্রতিশ্রুতি দেন, 49লক্ষ বিঘা (6652 বর্গকিমি)  জমি তিনি ‘পুনরুদ্ধার' করবেন জবরদখলকারীদের হাত থেকে। সেপ্টেম্বরে ঘটে যাওয়া দুই ব্যক্তির মৃত্যু প্রসঙ্গে নিরুত্তাপ হেমন্তের মতে, এলাকাবাসীদের মধ্যে উগ্রপন্থী কোনও গোষ্ঠী যুক্ত। বাস্তবে এই বক্তব্যের কোনও তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। এলাকার উচ্ছেদ হওয়া কিছু মানুষের মতে, কয়েক জন বাচ্চাদের পড়াতে আসত এবং সামাজিক কাজেও তারা যুক্ত ছিল। এখন প্রশ্ন উঠছে, যদি জৈব পদ্ধতিতে কৃষিকাজের পরিকল্পনা থাকে, তবে এই ভিটেহারাদের কর্মক্ষেত্রে নিয়োগের কথা ভাবছে কি না সরকার। বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস বলছে, '70-এর দশকে বরাপেটা, গোয়ালপাড়া, ধুবড়ি জেলার ভিটেহারা চরবাসী ফুরাতলিতে এসে ওঠেন। এঁদেরকেই জবরদখলকারী বলে চিহ্নিত করা হয়। তথ্য বলছে, সিপাঝারের পুরনো অধিবাসীরাও বহুক্ষেত্রে জমি বিক্রি করেছেন বাইরে থেকে এখানে আসা কৃষিজীবীদের কাছে৷

     

    আরও পড়ুন:মায়ানমার থেকে অনুপ্রবেশ: এক যাত্রায় দুই ফল

     

    কিন্তু, 1980-র পরবর্তী সময়ে অহমিয়া এবং বাংলাভাষী মুসলমানদের সম্পর্ক আগের মতো থাকল না৷ বাঙালি তাড়ানোর জাতিগত আবেগ থেকে গড়ে ওঠা আন্দোলন ক্রমশ ডান দিকে বাঁকতে বাঁকতে জন্ম নিল হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনের। দেখা গেল, আসাম গণ পরিষদ সমেত জাতিসত্তার অধিকারের লড়াইরত সংগঠন, দলগুলিকে গ্রাস করে সর্বাধিনায়ক হয়ে উঠল সঙ্ঘ পরিবারের সাম্প্রদায়িক, বিদ্বেষের রাজনীতি। বর্তমান সময়ে এলাকার বহু অধিবাসীর কাছেই চরবাসীদের পরিচয় "বাংলাদেশি' কিংবা "জবরদখলকারী'।  কেবলমাত্র রাজনৈতিক ভাবে ব্যাখ্যা সম্ভব নয় এই ঘটনাপরম্পরা ও উচ্ছেদের। নদীর গতিপথের বদল ও ভাঙা গড়ার খেলা প্রান্তিক চরবাসীদের জীবনের অন্যতম নিয়ন্ত্রক।

     

    জবরদখলের ইতিহাস-ভূগোলের হালহকিতের দিকে চোখ ফেরানো যাক। বরাপেটার একদা বাসিন্দা মহম্মদ উমর আলির জমি ব্রহ্মপুত্রের চরে তলিয়ে যাওয়ার পর তিনি আশ্রয় নেয় নিম্ন আসামের সরকার অধিকৃত জমিতে৷ সেখান থেকেও উচ্ছেদ হওয়ার পর ওঠেন ফুরাতলির চরে। বাস্তবেই উমর আলিদের স্থায়ী বাসভূমি নেই, নেই ভবিষ্যতও। আজও প্রাচীন পদ্ধতিতে তাঁরা জমি ভাগ করে নেন পরস্পর। এই কূলে কোনও চাষি জমি হারালে ওই কূলে জেগে ওঠা জমিটা অলিখিত ভাবে তাঁর অধিকারে ধরা হয়। কিন্তু নদী সাঁতরে নিত্য যাতায়াত সম্ভব নয়, তাই অন্য কেউ চাষবাস করেন সেখানে। নদীমাতৃক অঞ্চলের জমিসম্পর্কিত বোঝাপড়ায় যেন অনেক ধাপ এগিয়ে চরবাসীরা। তাই কেবল 'মিয়া মুসলমান'-দের প্রতি বিদ্বেষ নয়, প্রান্তিক মানুষের জমির অধিকার, অধিগ্রহণের প্রশ্নেও উদাসীন রাষ্ট্র।


    রাতুল গুহ - এর অন্যান্য লেখা


    প্রতি দিনের রেলযাত্রা যেন এঁকে দেয় জীবনেরই জলছবি। বুনে চলে পাওয়া না-পাওয়ার আখ্যান।

    বেকারত্বে জীর্ণ দেশের যৌবন, বিক্ষুব্ধ কর্মপ্রার্থীরা পথে নামছেন দেশের নানান প্রান্তে

    ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রছাত্রীদের বোঝানো হচ্ছে গীতার শ্লোক, মোদীজির মহৎ কীর্তি।

    গবেষক হলেও দলিত তো! বদলায় না নির্মম ইতিহাস।

    বাংলার সাগরতটের কপিলমুনির আশ্রম আর সাগরের মেলায় মিশে আছে বহু সত্য, বহু মিথ, বহুত্বের চেতনা।

    শ্রীলঙ্কায় কাগজের অভাবে বন্ধ পরীক্ষা, খাদ্যদ্রব্য, জ্বালানির এমন তীব্র আকাল কখনও দেখেনি সেই দেশ।

    ব্রহ্মপুত্র চরের উপাখ্যান: হত্যা, উচ্ছেদ, ভিটে হারানোর দিনপঞ্জি-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested