“My birth is my fatal accident”, জীবন-মরণের সীমানায় দাঁড়িয়ে রোহিত ভেমুলা তাঁর চিঠিতে এ ভাবেই ব্যক্ত করেছিলেন জাতিগত বৈষম্যের মর্মান্তিক পরিণতিকে! তার পর কৃষ্ণা-গোদাবরী দিয়ে বয়েছে বহু জল, বদলায়নি নির্মম ইতিহাস।
সম্প্রতি কেরলের মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতিবৈষম্যের অভিযোগ তুলে প্রতিবাদে বসেন দলিত গবেষক দীপা মেহানন। প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর নন্দকুমারের প্রতি এ ক্ষেত্রে জাতিবিদ্বেষের অভিযোগ। দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ার কারণে দীপার গবেষণার কাজ বিলম্বিত করা হচ্ছিল নানান অছিলায়, এমনই অভিযোগ। ল্যাবরেটরি ব্যবহারে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা, বৃত্তি বন্ধ করে দেওয়া হয় দলিত গবেষক দীপার। এর প্রতিবাদে তিনি প্রতিবাদ করায় অবশেষে কর্তৃপক্ষ ইতিবাচক সাড়া দেন এই ঘটনার প্রেক্ষিতে। নন্দকুমারকে পদচ্যুত করার পাশাপাশি আগামী সময়ে গবেষণার কাজে দীপা মেহাননকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে ‘পর্যবেক্ষক কমিটি’ গঠন করা হয়েছে দীপার পরিবারের সদস্যের যুক্ত করে। কর্তৃপক্ষের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে সদর্থক হলেও আগামীতে কোন পথে এগোবে প্রান্তিক সমাজের প্রতিনিধি দীপার গবেষণা, জাতপাতের বাধা আর আসবে কি না, এ সব প্রশ্ন অবশ্য থেকেই যাবে। প্রশ্ন থেকে যাবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জাতপাতের বৈষম্যের ‘ধারাবাহিকতা’ নিয়ে।
2021 সাল থেকে সময়রেখা ধরে আমরা যদি কিছুটা পিছিয়ে যাই 2016 সালে, রোহিত ভেমুলার স্মৃতি জীবন্ত হয়ে ওঠে দৃশ্যপটে। হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের দলিত গবেষক রোহিত ও আরও চার জন দলিত গবেষক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন ‘দেশবিরোধী’ কার্যকলাপ চালানোর অপরাধে! 2013 সালে রোহিতরা ক্যাম্পাসে ‘মুজঃফরনগর বাকী হ্যায়' তথ্যচিত্রটি প্রদর্শনের পরিকল্পনা করে। মুজফফরনগর দাঙ্গায় সঙ্ঘ পরিবার ও ভারতীয় জনতা পার্টির ভূমিকা প্রকাশ্যে আসার ভয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় প্রদর্শন। এর পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে আমরা দেখি তৎকালীন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি কিংবা সুষমা স্বরাজের বক্রোক্তি। অন্য দিকে, কেউ কেউ রোহিতকে তুলনা করেন মোহনদাস গান্ধীর সঙ্গে। সেই সময়কালে ছাত্রছাত্রী সমাজে আলোড়ন তুলেছিল রোহিতের আত্মহত্যার ঘটনা এবং তার স্বপ্নভঙ্গের চিঠিখানা। আত্মহত্যা নয়, এই ঘটনাকে অনেকে ‘প্রাতিষ্ঠানিক হত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন...রোহিতের আত্মহত্যা ভারতবর্ষের রাজনীতিতে জাতপাতের প্রশ্নকে আরও এক বার নতুন করে হাজির করেছিল মাত্র, কোনও সমাধান সূত্র আমরা পাইনি আজও।
আরও পড়ুন: স্বেচ্ছাচারের পৌষমাস, স্বাধীনতার সর্বনাশ
কেবলমাত্র উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপির শাসনকালেই কি জাতপাতের বৈষম্যের বাড়বাড়ন্ত? সম্ভবত নয়। সেন্থিল কুমারের নাম হয়তো আমাদের অনেকের অজানা। 2008 সালে হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সিন্থিল আত্মহত্যা করেন জাতি বৈষম্যের শিকার হয়ে। 2010 সালে তেলুগু সাহিত্যের গবেষক আর বলরাজ আত্মহত্যা করেন হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বুকেই। 2013 সালে আর এক দলিত গবেষক মাদারি বেঙ্কটেশও হার মানেন ব্রাহ্মণ্যবাদের কাছে। আপাত ‘জাতিভেদ-মুক্ত’ পশ্চিমবঙ্গে লোধা উপজাতির মেয়ে চুনী কোটালের আত্মহত্যাও যেন আমরা মনে রাখি।
জাতিভেদ প্রথা আসলে সিঁড়িবিহীন বহুতলের মতো, যেখানে প্রতিটি তলই অনতিক্রম্য। এক জাত কর্তৃক নিম্নতর জাতের শোষণের জাঁতাকলে প্রগতি রুদ্ধ করার আয়োজনের পোশাকি নাম ‘ব্রাহ্মণ্যবাদ’। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা যেমন আছে, তেমনই আছে সমাজ, সমাজে চলমান রীতিনীতি, ন্যায় বিচারের ধারণা। ভারতবর্ষে আর্যদের আগমন পরবর্তীতে বৈদিক মতে বর্ণপ্রথা আসে 3500 বছর আগেই, আর বর্ণাশ্রমের হাত ধরেই বিকশিত হয় জাতিভেদ, অস্পৃশ্যতার ধারণা ও অনুশীলন। ফলে সমাজের মাটিতে দীর্ঘ দিন ধরেই জল-হাওয়া পেয়েছে এই প্রগতিবিরুদ্ধ প্রথা। অন্য দিকে, যদি আমরা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর দিকে তাকাই, দেখতে পাব ব্রাহ্মণ ও উঁচু জাতের আধিপত্য। 1950 থেকে 2020 পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মধ্যে 47 শতাংশ ব্রাহ্মণ। 2007-এর একটি রিপোর্ট বলছে, আমলাতন্ত্রে 37.4 শতাংশ পদ ব্রাহ্মণদের দখলে। পরিসংখ্যান বলছে রাষ্ট্র এবং তার প্রতিষ্ঠানগুলিতে কাদের আধিপত্য! ফলে আজও ভারতবর্ষে জাতি বৈষম্যের সমাধান সূত্র অধরা। সমাজেরই একটি অংশ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্র। সেখানেও জাতিবিদ্বেষের ছবিটা আবছা নয়, জোরালো। কেবল ছাত্রছাত্রী নন, শিক্ষক-শিক্ষিকারাও শিকার হন এই সামাজিক অসুখের।
দীপারা কি শেষমেশ এ দেশে সুবিচার পাবেন?
কৃষক আন্দোলনের নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ পথ দেখাচ্ছে লিঙ্গসাম্যের ভাবনাকে।
মাধ্যমিকের শূন্য খাতা আরও একবার দেখাল ডিজিটাল ক্লাসরুমের প্রকৃত ছবিটা
বাংলায় রাজনীতিতে সাম্প্রতিক হিংসাত্মক ঘটনাবলীল তার চিরায়ত অহিংসার ধারণার সঙ্গে একেবারেই মেলে না।
কাজের জগতে ইংরেজির বিকল্প নেই এই সত্যি কথাটা মানতে না পেরে সোশাল মিডিয়ায় ক্ষেপে উঠল সেন্টিমেন্টাল আত
শাসকবিরোধী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বদলি প্রসঙ্গে বেফাঁস মন্তব্য করলেন নির্মল মাজি
বেকারত্বে জীর্ণ দেশের যৌবন, বিক্ষুব্ধ কর্মপ্রার্থীরা পথে নামছেন দেশের নানান প্রান্তে