×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • বেকারত্বের ক্রোধ জমছিল, আছড়ে পড়ল  দেশজুড়ে

    রাতুল গুহ | 05-02-2022

    নিজস্ব ছবি

    "দুয়ারে সরকার, রাস্তায় বেকার' এমন পোস্টার হাতেই শত শত যুবক-যুবতীকে দেখা গেল কলকাতার রাস্তায়। গত 2 ফেব্রুয়ারি বিক্ষুব্ধ কর্মপ্রার্থীরা সমাবেশিত হয়েছিলেন পাবলিক সার্ভিস কমিশন ভবন (PSC) -এর দরজায়। দ্রুত স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন কর্মপ্রার্থীরা। অভিযোগ কোভিডের অযুহাতে দীর্ঘদিন নিয়োগ বন্ধ পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন সরকারি পদে। বহু ক্ষেত্রে পরীক্ষার পরবর্তীতে ফলপ্রকাশ হতে ঘুরছে বছর। 2017সালের প্রাইমারী টেট পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও পরীক্ষা নেওয়া হয় 2021 সালের 31 জানুয়ারী। পরীক্ষা নেওয়ার পরেও প্রায় নয় মাস অতিবাহিত হয়েছে। যদিও ফল প্রকাশ করা হয়নি। এই নিয়েও প্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। জেলায় জেলায় DPSC অফিসে ডেপুটেশন জমা দিচ্ছে চাকরী প্রার্থীরা, জোরদার প্রচার চালাচ্ছেন সামাজিক মাধ্যমেও।

     

    পরিসংখ্যান বলছে নতুন বছরে ভারতের বেকারত্বের হার ছয় শতাংশ, গত দু’বছরে সর্বনিম্ন। কিন্ত যুবসমাজের বিপুল অংশ কাজে যুক্ত হচ্ছেন স্বল্প বেতনে, চুক্তির ভিত্তিতে। যারা কাজে যুক্ত হচ্ছেন, তাঁরা প্রকৃত শ্রমমূল্যের তুলনায় পাচ্ছেন কম পারিশ্রমিক। বর্তমানে ওলা, উবের, জোমাটো ইত্যাদি কোম্পানিতে নিযুক্ত  চুক্তি ভিত্তিক সস্তার শ্রমিকরা  (GIG Worker) সরকারের খাতায় বেকার হিসেবে গণ্য হন না। কর্মহীন কিংবা চুক্তিবদ্ধ কর্মচারিদের অবস্থা নির্দেশ করে দেশের কর্মসংস্থানের বাস্তব পরিস্থিতি৷

     

    সম্প্রতি বিহারের রাস্তায় নেমে যুবসমাজ জানান দিয়েছেন বেকারত্বের যন্ত্রণা, ক্রোধ৷ "We are graduates, we are jobless, we are hungry. Don't kick us in our stomachs' বক্তব্যকে সামনে রেখে বিক্ষোভে নামা যুব সমাজ প্রশ্ন তোলেন রেলপরিষেবা ক্ষেত্রের নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে৷ দীর্ঘদিনের সঞ্চিত ক্রোধের বহিঃপ্রকাশিত হয়, পুড়তে থাকে রেলের কামরা৷ ডবল ইঞ্জিন সরকারও ব্যর্থ কর্মসংস্থানের মতো প্রাথমিক প্রশ্নে৷ বিহার, উত্তরপ্রদেশের মতো কৃষিভিত্তিক রাজ্যগুলির ছাত্রছাত্রীরা পারিবারিক পুঁজিকে সম্বল করে শহরে আসেন চাকরির প্রস্তুতি নিতে৷ কিন্তু সাম্প্রতিককালের ছবিতে বদল ঘটেছে বিস্তর৷ শহরের মেসবাড়িগুলি ফাঁকা হচ্ছে, বন্ধ হচ্ছে লেখাপড়া-প্রস্তুতি। সরকারি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান যেন আজ প্রাগৈতিহাসিক ঘটনা। বিপর্যস্ত কোটি কোটি কর্মহীন যুবক-যুবতী।

     

    অর্থনীতিবিদদের মতে,  শিক্ষিত বেকারত্ব ভারতবর্ষের বহুদিনের সমস্যা, কিন্তু বর্তমানে তার হার আরও উর্ধ্বগামী৷ যুবসমাজ পাচ্ছে না যোগ্যতার ভিত্তিতে কাজ-পারিশ্রমিক এবং সামাজিক সুরক্ষা। সার্বিকভাবে সরকারিক্ষেত্রকে দুর্বল, অপ্রাসঙ্গিক করে বেসরকারি কোম্পানিগুলির হাতে আজ বাজারের নিয়ন্ত্রণ। বেসরকারি কোম্পানির কোনও দায় নেই দেশের জণগণের প্রতি, তাঁরা শ্রমিক-কর্মচারীকে জাঁতাকলে পিষে উৎপাদন সচল রাখেন পুঁজির স্বার্থে৷

     

    আরও পড়ুন:‘এক’ নয়, অনেক ভারতই ‘শ্রেষ্ঠ’ ভারত

     

    1990 পরবর্তী সময়ে নয়াউদারনীতির মডেল বিপুল কর্মসংস্থান, স্বাচ্ছন্দ্যের স্বপ্ন দেখিয়েছিল দেশবাসীকে। সদ্য চালু হওয়া এবং দ্রুত বর্ধনশীল তথ্যপ্রযুক্তির মতো কয়েকটি  ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানও হচ্ছিল ভালই। কিন্তু অর্থনীতির সুষম বিকাশ অধরাই থেকে যায়। জিডিপি বৃদ্ধির হারের সুখের আবহে সরকার কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক অসাম্য কমানোর দিকে নজর দেয়নি। কৃষিতে বিনিয়োগ হয়নি। শিল্পক্ষেত্রের আধুনিকীকরণ হয়নি, বিশ্ব বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তাকে সক্ষম করে তোলার জন্য সরকারও বিশেষ কিছু করেনি। 2014 সালের পর থেকে ভারতের অর্থনীতির মূল অভিমুখের যে পরিবর্তন হয় তাতে অল্প কয়েকজন বড় শিল্পপতির স্বারথই প্রাধান্য পেয়েছে। কর্মসংস্থান এবং চাকরির নিরাপত্তার বিষয়টি ক্রমশ আরও পিছনে চলে গিয়েছে।

     

    কর্মহীনতা এবং কাজের নিরাপত্তা সমগ্র ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিরই একটি প্রধান সংকট এই মুহূর্তে। ভারত তার ব্যতিক্রম নয়, এবং ভারতের মধ্যে বাংলা, বিহার কিংবা অন্ধপ্রদেশের অবস্থাও উনিশ বিশ মাত্র। এই অবস্থায় দেশব্যপী কর্মপ্রার্থীদের বিক্ষোভে ফেটে পড়া ছিল সময়ের অপেক্ষা মাত্র। ভারতের প্রেক্ষিতে দেখলে, 2014 সালে কংগ্রেসের শাসনের পতন ঘটেছিল দুর্নীতি, কর্মসংস্থানের প্রশ্নেই৷ তখন পুঁজির প্রয়োজন ছিল অতি দক্ষিণপন্থী শাসক। এক্ষেত্রে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার মডেল নয়াউদারনীতির ভারতীয় সংস্করণ বলা চলে। কিন্তু, শুধুই পুঁজির সেবা করতে গিয়ে শ্রমিকের স্বার্থ ক্রমাগতই উপেক্ষিত হচ্ছে । ক্রোনি ক্যাপিটালের দাসত্ব করছেন শাসকবর্গ,  নাজেহাল হচ্ছেন আমজনতা। বিহার উত্তরপ্রদেশের বিক্ষোভে ছাত্রছাত্রীদের সাথে সামিল হচ্ছেন টিউশন সেন্টারের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। এই সরকারের আমলে তৈরি নয়া লেবার কোডের বিরুদ্ধে ধিকিধিকি ক্ষোভ জমা হচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে। দিল্লির উপান্তে কৃষক আন্দোনলের মতো আগামী দিনে দেশব্যাপী কোনও শ্রমিক আন্দোলন দেখা যাবে না তো?

     


    রাতুল গুহ  - এর অন্যান্য লেখা


    বাংলার সাগরতটের কপিলমুনির আশ্রম আর সাগরের মেলায় মিশে আছে বহু সত্য, বহু মিথ, বহুত্বের চেতনা।

    গবেষক হলেও দলিত তো! বদলায় না নির্মম ইতিহাস।

    বন্ধু বা আস্থাভাজন সঙ্গীর দ্বারা ধর্ষণের প্রবণতা সাম্প্রতিক কালে ক্রমবর্ধমান হচ্ছে ভারতের সমাজজীবনে।

    দারাং জেলায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হত্যা ও উচ্ছেদের প্রেক্ষাপটে রয়েছে একাধারে জমির অধিকারের প্রশ্ন

    সাম্প্রদায়িক বিভাজনের নয়া ময়দান কুতুব মিনার

    শ্রীলঙ্কায় কাগজের অভাবে বন্ধ পরীক্ষা, খাদ্যদ্রব্য, জ্বালানির এমন তীব্র আকাল কখনও দেখেনি সেই দেশ।

    বেকারত্বের ক্রোধ জমছিল, আছড়ে পড়ল  দেশজুড়ে-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested