একদিকে ভাগীরথী, অন্যদিকে মুড়িগঙ্গা, আর একদিকে বড়তলা নদী, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। ঠিক মধ্যিখানে 19 মাইল দীর্ঘ সাগরদ্বীপ। মূল ভূখণ্ডের বাইরে, মোহনায় অবস্থিত এই দ্বীপকে ঘিরে ইতিহাস, কিংবদন্তি, মিথ আর মেলার আয়োজন। বাংলায় দক্ষিণ সীমায় বঙ্গোপসাগর আর গঙ্গা নদীর মোহনায় অবস্থিত সাগরদ্বীপকে কেন্দ্র করেই প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় গঙ্গাসাগর মেলা। কপিল মুনির আশ্রমে ধর্মভীরু মানুষেরা আসেন মনইচ্ছা পূরণের আশায়, সাধুসন্তরা আসেন উত্তর ভারত থেকে। কতটা মিথ, কতটা ইতিহাসের প্রামাণ্য তথ্য রয়েছে কপিলমুনির আশ্রম ও সাগরের মেলা সম্পর্কে?
কপিল মুনির আশ্রমের সূচনা সম্পর্কে স্পষ্ট করে জানা যায় না বাংলার অবস্থানগত কারণে। নদীমাতৃক সমুদ্র বেলাভূমিজাত বাংলার অভ্যন্তরে প্রস্তরযুগের সভ্যতা কালের কোনও প্রস্তর নির্মিত যন্ত্র আজও পাওয়া যায়নি। যা কিছু জানা যায় সংস্কৃত গ্রন্থগুলি থেকেই।
ঋগবেদে ‘বাতরশন’ মুনির দুই সমুদ্রে ভ্রমণ করার প্রসঙ্গ আছে। কথিত আছে, কপিল মুনি ব্রাহ্মণদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে মিথিলা থেকে বাংলায় এসে আশ্রয় নেন। দক্ষিণ বাংলায় আজকের কপিল মুনির আশ্রম সেই ধারাবাহিকতায় দেখেন অনেক ইতিহাসবিদ। বৈদিক পরবর্তী মৌর্য যুগে গৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক ইতিহাসে দেখা যায়, বৈদিক ক্রিয়াকাণ্ড বিরোধী ব্যক্তিবর্গ ‘বঙ্গ’ ও ‘মগধ’-এ প্রচারকার্য চালাচ্ছেন। কপিল মুনি বাংলায় আশ্রম স্থাপন করেছেন ও জিনাচার্য্যগণও এ দেশে (বাংলা) এসেছেন, এমন অনুমান ড: ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত'র। বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাসের দিক থেকে কপিল মুনির গুরুত্ব এখানেই। ব্রাহ্মণরা মিথিলা বা বাংলার প্রতি বিদ্বেষচারী ছিলেন, তার অন্যতম কারণ বোধহয় বৈদিক ধর্মের বিপক্ষবাদী বৌদ্ধধর্ম, আজীবিক ও জৈন প্রচারকরা পূর্ব ভারতে রুদ্ধ করেছিলেন ব্রাহ্মণ্যবাদী সাম্রাজ্যের বিস্তার।
বর্তমানে কপিল মুনির আশ্রমের দায়িত্বে মোহান্ত শ্রীজ্ঞানদাস। ঘরের দেওয়ালে শ্রীরামের বাঁধানো ছবি। ঠিক তার পাশে স্থান পেয়েছে গৌর-নিতাই, বাংলার সম্পদের দেবী লক্ষ্মী আর চণ্ডালদেবী কালী। পূর্বের ইতিহাস প্রমাণিত হয় বর্তমানের কষ্টিপাথরে। কুম্ভমেলার থেকে এখানেই আলাদা সাগরমেলা, তার সংস্কৃতি। এর ভিত্তি বৈষ্ণব সংস্কৃতি, বাংলার সম্প্রীতির দীর্ঘ ইতিহাস।
সাগর রাজার অশ্বমেধ যজ্ঞ ও পুত্র হারানো সংক্রান্ত যে পৌরাণিক কথনটি চালু আছে, তার কোনও প্রমাণ অন্তত পাওয়া যায় না কোনও সাহিত্য, ভ্রমণ কাহিনি কাব্যে। একদল ঐতিহাসিক বলেন, বড়লাট ওয়ারেন হেস্টিংস সাগরদ্বীপের ‘প্রবর্তক’। ব্রিটিশ শাসনকালে সমুদ্র তীরবর্তী সুন্দরবন অঞ্চলে বসতি স্থাপনের উদ্যোগ ইংরেজরাই নেন, তাঁদের অর্থনৈতিক স্বার্থেই। 1819 সালে হেস্টিংস 30 টাকা অনুমোদন করেন সাগর দ্বীপ অঞ্চলে জনবসতি স্থাপনের জন্য। মূল ভূখণ্ডের অধিবাসী না গেলেও আজকের মায়নমার (আরাকান) থেকে মানুষ এসে সাগরে জনপদ গড়ে তোলেন। একদল ঐতিহাসিকের মতে আজকের কপিলমুনির আশ্রম ও সাগর মেলা তাই হেস্টিংসের বদান্যতায়!
বহু মিথ, অতিকথন চলতি হাওয়ায় ভাসে। বিশেষত ধর্মাচারীদের ভিড়ে। কিন্তু পুরাণ কাহিনীর ভিত্তিতে কিছু সত্য নিহিত থাকে। বস্তুনিষ্ঠ ভাবে সত্যের সন্ধানে উন্মোচিত হয় প্রকৃত ইতিহাস। আর এই সত্যের সংখ্যা একাধিক হয়। তাই, সাগরের ইতিহাসও বহন করছে বহু সত্য, বহু ধারণা-ইতিহাস। একইভাবে সাগর মেলার সংস্কৃতিতে মিশে আছে বহুত্ববাদের চেতনা। কেবল সাধু-সন্তরা নন, দলে দলে মানুষ আসেন সপরিবারে। জাতপাতের ভেদ নেই সাগরে। হিন্দুদের তীর্থ হলেও নেই ধর্মভেদের প্রাচীর। আর বহু সত্য, বহুত্বের সংস্কৃতি নিয়ে বেঁচে আছে সাগর মেলা।
মাধ্যমিকের শূন্য খাতা আরও একবার দেখাল ডিজিটাল ক্লাসরুমের প্রকৃত ছবিটা
শ্রীলঙ্কায় কাগজের অভাবে বন্ধ পরীক্ষা, খাদ্যদ্রব্য, জ্বালানির এমন তীব্র আকাল কখনও দেখেনি সেই দেশ।
সরাসরি ধর্মের জিগির না তুলে অর্থনৈতিক শোষণ এবং বঞ্চনার মাধ্যমে ভারতের মুসলিম সমাজকে দুর্বল করার চেষ্
মরিচঝাঁপির দলিত উদ্বাস্তু গণহত্যার চাপা পড়া ইতিহাস আজও প্রাসঙ্গিক
গবেষক হলেও দলিত তো! বদলায় না নির্মম ইতিহাস।
বাংলার সাগরতটের কপিলমুনির আশ্রম আর সাগরের মেলায় মিশে আছে বহু সত্য, বহু মিথ, বহুত্বের চেতনা।