×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • হনোলুলু থেকে বাংলাদেশ: সম্ভবামি যুগে যুগে

    বিতান ঘোষ | 30-03-2021

    প্রতীকী ছবি।

    দাড়িটা আড়ে বহরে বেশ হয়েছে। এক মনে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সেই দাড়িতে হাত বোলাচ্ছিলেন কিংলায়ার। আয়নায় নিজেকে দেখে তিনি এত পুলকিত হলেন যে, তাঁর মনে আত্মরতির ভাব জন্মাল। হঠাৎই আয়নার ভেতর থেকে অবিকল তাঁরই মতো দেখতে, সাদা শশ্রুগুম্ফ সমন্বিত একজন বেরিয়ে এলেন। কিং লায়ার সশ্রদ্ধ ভঙ্গিতে বললেন, ‘আপনি কে মহাশয়? আপনিই কি রাউন্ড-ওয়াকার, যার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে আমি হাফপ্যান্ট পরে অনুশীলন করতাম?’ মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে সেই প্রতিবিম্ব বলল, ‘নারে বাবা না। আমি হচ্ছি গিয়ে তোর অন্তরাত্মা।' তারপর তাঁদের দুজনের মধ্যে যা যা কথা হল, তা নীচে অবিকল ভাবে তুলে ধরলাম।



    কিং লায়ার— অন্তরাত্মা! সেটা তো খুব সুবিধার জিনিস নয়।

    অন্তরাত্মা— কেন?

    কিং লায়ার— আমি বঙ্গদেশে দেখেছি, এই অন্তরাত্মা যখনই কারও মধ্যে জেগে ওঠে, তখনই সে দল এবং ভোল দুটোই পরিবর্তন করে। কিন্তু আমি এখন একক মেজোরিটি। আমি কোনও অবস্থাতেই এখন দল বদলাব না, এই বলে রাখলাম।

    অন্তরাত্মা— বেশ বেশ। তোকে দল বদল করতে হবে না। আমি তোর মধ্যে জেগে উঠেছি অন্য একটা উদ্দেশ্যে। তুই সেদিন মনে মনে বলছিলি না, কষিয়ে দেশপ্রেম তৈরি করতে হবেতা এই দেশপ্রেমের রেসিপিটা কি শেষমেশ বানাতে পারলি?

    কিং লায়ার— (কাঁচুমাচু মুখে) কই আর ঠিকঠাক বানানো হল। যখনই আমি রেসিপিতে পরিমাণ মতো মিথ্যা, কথার মারপ্যাঁচ মেশাচ্ছি, তখনই রেসিপিটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেকে বলছে এই রেসিপিটা আমি রাঁধতেই পারব না। কেননা, এই রেসিপিটা আমরা কখনওই বানাতে শিখিনি।

    অন্তরাত্মা— ভুলে যাস না, তোর লক্ষ্য এখন বাংলা। তুই সারা দেশে যে উপাদানে এই রেসিপিটা রান্না করিস, এখানে সেই একই ফর্মুলায় রান্নাটা হবে না। সারা দেশে তোরা ভারত মাতা কি জয়’, ‘জয় শ্রী রাম মশলা দিয়ে রান্নাটা করিস, আর প্রয়োজনে আগে সংঘশক্তি, পরে দেশপ্রেম কিংবা দেশের জন্য আমি আমার প্রাণটা দিয়ে দিতে প্রস্তুত— এসব পাঁচফোড়ন দিস। এখানে এগুলো দিলেই রান্নাটা হয়ে যাবে না।

    কিং লায়ার— তবে?

    অন্তরাত্মা— তিষ্ঠ! সব বলছি। আগে তোকে বাংলা আর বাঙালির একটা মিশ্রণ দিয়ে আগের সব উপকরণগুলোকে মাখিয়ে নিতে হবে— রাঁধুনিদের পরিভাষায় যাকে ম্যারিনেট করা বলে। বাঙালিরা কিন্তু তোদের মতো শুধু বানিয়া হয়েই বসে থাকেনি, স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছে। কারাবরণ, মৃত্যুবরণ করেছে। অতএব, তোকে কোনও একটা সংগ্রাম বা বিপ্লবের গরম কড়াইতে ওই মাখিয়ে নেওয়া জিনিসটাকে ভেজে নিতে হবে। আচ্ছা তুই কোনও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, বিপ্লব বা সংগ্রাম সম্পর্কে পড়াশোনা করেছিস?

    কিং লায়ার— হ্যাঁ, হ্যাঁ। ওই তো এই শতকের গোড়ার দিকে গুজরাত দা...

    অন্তরাত্মা— চোপ! এইসব উপাদান দিয়ে কি আর দেশপ্রেমের রেসিপি হয়! ওই রেসিপিটাতেও ধর্ম ব্র্যান্ডের এত ঘি ঢেলেছিস যে, ওটাকে আর দেশপ্রেমের রেসিপি বলে চালানো যায় না। যাক গে ছাড়, তেভাগার নাম শুনেছিস কিংবা নকশালবাড়ি?

    কিং লায়ার— হেডমন্ত্রীর পরামর্শে আর্বান নকশাল বলে কিছু প্রজাকে জেলখানায় ঢুকিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এগুলোর তো নাম শুনিনি!


    অন্তরাত্মা— তা কেন শুনবে (মুখে ব্যঙ্গের ভাব নিয়ে)! তুমি শীঘ্রই পদ্মাপারে যাচ্ছ না? ওখানকার ইতিহাসটাও তুমি নিশ্চয়ই জানো না। যাও গিয়ে একটু পড়াশোনা করো। ওখানে মুক্তিযুদ্ধ বলে একটা জিনিস পাবে। ওটা ওই দেশপ্রেমের রেসিপিতে মেশালেই গন্ধে বাংলা এমন ম ম করবে যে, বাংলার ভোটাররা পাগল হয়ে যাবে। তারা তোমায় ধন্য ধন্য করবে।

    কিং লায়ার— কীভাবে মেশাব এটা?

    অন্তরাত্মা— তোমার ওই মিথ্যার সঙ্গে সমপরিমাণে এই উপকরণটা দিতে হবে। দেওয়ার আগে বলবে, তুমি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছো এবং জেলও খেটেছো। বাকিটা আমি বুঝে নেব।

    কিং লায়ার— কিন্তু আমি তো কোনও যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করিনি...!

    অন্তরাত্মা— সে তো তোমার রাউন্ড-ওয়াকার আর তার প্রতিষ্ঠানও দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেনি। অত ভেবো না। তুমি ওই নির্জলা মিথ্যাটা বলেই, মিথ্যা আর মুক্তিযুদ্ধ উপকরণ দুটো রান্নায় মিশিয়ে দেবে।

    কিং লায়ার— এতে কি কাজের কাজ কিছু হবে? কেউ যদি ধরে ফেলে আমার মিথ্যেটা?

    অন্তরাত্মা— আমি আছি কী করতে? শোনো এটা উত্তর-সত্য যুগ। তুমি চিৎকার করে একটা মিথ্যা কথাকে বেশ কয়েকবার আওড়ালেই সেটা সত্য হয়ে যাবে। আর এখনকার কজনই বা ইতিহাসের পাতা উলটে দেখে? যদি দেখত, তবে কি তুমি আর রাজা হতে...যাক সে অন্য প্রসঙ্গ! তাছাড়া তোমার তো আইটি সেলের রেডিমেড ইতিহাস রইলই। ওরাই প্রমাণ করে দেবে, ভিয়েতনাম থেকে হনোলুলু, হনোলুলু থেকে হনুমানু হয়ে বাংলাদেশ— সর্বত্র যে কোনও কালে, যে কোনও আন্দোলনে তুমি ছিলে, আছে, থাকবে। একদম সম্ভবামি যুগে যুগে কেস!

    কিং লায়ার— কেউ আরটিআই করে সঠিক তথ্যটা জানতে চাইলে?

    অন্তরাত্মা— হেঁহেঁ! কেন বোকা সাজছ? তুমি তো আগেই আরটিআই আইনে বদল এনে নিজেকে সত্য মিথ্যার উর্ধ্বে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছ!

    কিং লায়ার— আর এতে কি ওই দেশপ্রেম আর জাতীয়তাবাদের রেসিপিটা সুস্বাদু হবে?

    অন্তরাত্মা— সুস্বাদু হবে কিনা জানি না। তবে বর্ণে আর গন্ধে অতুলনীয় হবে, টুকু বলতে পারি। শোনো, আর একটা কথা। এসব রেসিপি অনেক জোড়াতাপ্পি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। তুমি এগুলো আবার কাউকে খাওয়াতে যেও না। দূর থেকে দেখাবে আর গন্ধ শুঁকিয়ে কেটে পড়বে।

    কিং লায়ার— আর খাওয়ালে কী হবে?

    অন্তরাত্মা— যে খাবে, সে আর পরেরবার খেতে চাইবে না, সে তুমি তাতে যে উপকরণই দাও না কেন। তাই সেফ সাইডে খেলাই ভাল


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    আমাদের 70 লক্ষ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। তাই, আমরা যে কোনও মিথ্যা খবরকে সত্য করতে পারি

    পুরুষ সদস্যের মুখাপেক্ষী না থেকে, আর্থসামাজিক স্বাবলম্বনকে বুঝি 'ভিক্ষাবৃত্তি' বলে?

    দেশপ্রেমের রেসিপিতে একটু মুক্তিযুদ্ধের মশলা মেশালে ঝাঁঝ বাড়ে।

    দুর্গাপুজোয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রচারে মত্ত উচ্চবর্ণের হিন্দু বাঙালির ঈদ নিয়ে আপত্তি ঠিক কোথায়?

    গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন সীমান্ত দ্বৈরথ কেন এমন রক্তক্ষয়ী মল্লযুদ্ধের চেহারা নিল, তার ময়নাতদন্তে..

    দুর্বল, প্রায় অনিচ্ছুক নেতৃত্বের পক্ষে নানা রাজ্যের সম্ভাবনাময় তরুণ নেতাদের কংগ্রেসে ধরে রাখা কঠিন।

    হনোলুলু থেকে বাংলাদেশ: সম্ভবামি যুগে যুগে-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested