×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • তোমার ঈদ তো আমার কী!

    বিতান ঘোষ | 28-04-2022

    প্রতীকী ছবি।

    বাংলা জুড়ে প্রখর দাবদাহে প্রগতিশীল বাঙালি আটকে গেছে ক্যালকাটা ক্লাবের বাতানুকূল বিতর্কে। সূক্ষ্ম হাস্যরস, রাজনৈতিক আকচাআকচি, অন্তরঙ্গে স্বার্থমগ্নতা, অথচ বহিরঙ্গে সুশীলতা। শিক্ষিত ভদ্রবিত্ত বাঙালির ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার। এই স্বার্থমগ্নতাই অপরাপর ভেদ করতে শেখায়৷ খাস কলকাতায় সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ক্লাসের মধ্যে অবলীলায় পড়ুয়াকে বলে বসেন, ‘তোমার ঈদ তো আমার কী?’

    মাঝে রবীন্দ্র-নজরুলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহনের ভার জমল বাঙালির পিঠে। খেল পিঠে, কিছু সইল পেটে, কিছু বা সইল না
    বইয়ের তাকে সঞ্চয়িতা রইল, রইল সঞ্চিতা-ও, তবু কিছুই হল না সঞ্চয়। এ পার বঙ্গে বাঙালি জাতিসত্তা ধর্মের গণ্ডির ওপর উঠতে পারল কই? সাধারণ জ্ঞানের বই বলল, বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। এই শ্রেষ্ঠত্ব কি সর্বজনমান্য? হতে পারে দুর্গাপুজোর একটা অসাম্প্রদায়িক চরিত্র আছে। কিন্তু উভয় বাংলাকে না মিলিয়ে কি বাঙালির শ্রেষ্ঠ বলাটা ঠিক? শুধু এ পার বঙ্গের ধরলেও তার সর্বত্র কি দুর্গাপুজো সর্বজনের উৎসব হয়ে উঠতে পেরেছে? বাংলার গুরুত্বপূর্ণ পত্রপত্রিকাগুলোর কি শারদ সংখ্যার মতো কোনও ঈদ সংখ্যা বেরায়? এই অস্বস্তিকর প্রশ্নগুলো কোনও সচেতন বিভেদ প্রয়াসের তাগিদে তোলা হচ্ছে না, বরং বিবিধের মহামিলনের মাঝেও লক্ষ যোজন ফাঁককে তুলে ধরছে এই প্রশ্নগুলো।

    শিক্ষা সংস্কৃতিতে আপন ঐতিহ্যে আত্মশ্লাঘা বোধ করা কসমোপলিটান উচ্চবর্ণ বাঙালি ঈদের দিনে যতই তার অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিজ্ঞাপন দিক, নানা অন্তর্বিরোধে দীর্ণ তার বৃহত্তর চেতনা। কলকাতার অন্যতম এলিট উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে, ঈদের দিন ক্লাস টেস্ট নেওয়ার কথা ছিল। জনৈক ছাত্র যখন ঈদের কথা জানিয়ে এই সূচি পুনর্বিবেচনার আবেদন জানালেন, অধ্যাপক বললেন, ‘তোমার ঈদ তো আমার কী?’ সত্যিই তো মুসলমান ছাত্রের ঈদে একজন উচ্চবর্ণের হিন্দু বাঙালির কীই বা যায় আসে। শেষে উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের হস্তক্ষেপে পরীক্ষার সূচি পরিবর্তিত হয়েছে বলে জানা গেছে।


    আরও পড়ুন: বাহুবলী বুলডোজারে পিষ্ট ভারতীয়ত্ব


    রাজ্য সরকার পোষিত বহু বিদ্যালয়েই মে মাসের দুই তিন তারিখ থেকে প্রথম সামগ্রিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে— যে সময় সারা দেশে ঈদ পালিত হওয়ার কথা। সংখ্যাগরিষ্ঠ পড়ুয়া ও অভিভাবকরা যেহেতু এই বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাননি, তাই এক্ষেত্রে সূচি পরিবর্তনের অনুনয়-বিনয়ের প্রশ্নই ওঠেনি।

    বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর কাছে আস্থাভাজন হয়ে ওঠার জন্য রাজ্যের শাসকদল ইদানিং সেইসব জনগোষ্ঠীর সর্বজনমান্য নেতার জন্মদিনে ছুটি ঘোষণা করছে
    যেমন সম্প্রতি হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিনে ছুটি ঘোষণা করে মতুয়াদের মন জয়ের প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে ‘ত্রিশ শতাংশ’-এর বাংলাভাষী মুসলমানদের উৎসব অনুষ্ঠানের প্রতি কেন আন্তরিকতা দেখা যাচ্ছে না বৃহত্তর জনসমাজের তরফে? এখানেও কি ‘সংখ্যালঘু তোষণ’ নামক এক বায়বীয় অভিযোগের তকমা গায়ে লেগে যাওয়ার ভয় রয়েছে? নাকি অসাম্প্রদায়িকতার গর্ব করা বাঙালি সংঘের প্রোপাগান্ডা অনুযায়ী সত্যিই মনে করছে, তাদের মৌরসীপাট্টায় ভাগ বসিয়ে বাঙালি মুসলমান প্রাপ্যের অতিরিক্ত পেয়ে যাচ্ছে?

    অবশ্য বাঙালিত্বের ধারণাতেই তো অস্পষ্টতা ষোলো আনা। শিক্ষিত ভদ্রবিত্ত বাঙালিদের একাংশ তো মুসলমান আর বাঙালিকে পৃথক ভাবে দেখতেই অভ্যস্ত। নজরুল, শেখ মুজিব বাঙালি, কিন্তু মুসলমান পড়শির ছেলেটা মুসলমান! বাঙালি আত্মপরিচয়কে ক্রমে সংকীর্ণ ও ক্ষুদ্রবৎ করে তোলা হিন্দু উচ্চবর্ণ বাঙালি তার উৎসবে সকলকে সামিল হওয়ার আহ্বান জানাবে। অথচ বাঙালি মুসলমানের উৎসবকে কেন পর করে রাখবে? বাঙালিয়ানার মানদণ্ডে কি উত্তীর্ণ হতে পারবে না বাঙালি মুসলমান আর তাদের উৎসব-আয়োজন? ঈদের বিরিয়ানি সিমাইতে মিলবে না সব ধর্মের বাঙালি?

     


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    সন্তানের বাবার নাম জানতে সমাজের যতই নোলা ছকছক করুক, মা তা জানাতে বাধ্য নন।

    নীলকন্ঠ পাখি ওড়াতে গিয়ে যারা নীলকন্ঠ হল যারা, তাদের প্রণাম।

    ঈশান কোণে মেঘ থাকলেও বিসমিল্লার সুরে, ফৈয়জের কবিতায় এই দেশ বেঁচে থাকবে।

    বিশ্বে দেশ নামক ধারণাকে যত কঠিন করা হচ্ছে, দেশহীন শরণার্থীদের সংখ্যা ততই বাড়ছে।

    অহোম জাতীয়তাবাদে ভর করে আজ হিমন্তরা উচ্চপদে, আর কত মানুষ অসমের অ-সম রাজনীতির বলি হবে?

    দিল্লির বুক থেকে ইসলামিক ও ব্রিটিশ শাসনের অস্তিত্ব মুছতে উদ্যোগী মোদীর সরকার।

    তোমার ঈদ তো আমার কী!-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested