নতুন ভারতের কুরুক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে মুহ্যমান পার্থর মনে সাহস জোগালেন পার্থসারথি। এমনিতে পার্থর নার্ভাস ব্রেকডাউন হয় না। কিন্তু এখন তাঁর সামনে সারে সারে দাঁড়িয়ে পার্থর প্রিয়জনেরা। তাদের কারও নাম গণতন্ত্র, কারও নাম বহুত্ববাদ, কারও বা ব্যক্তিস্বাধীনতা। এদের পিছনে স্বশাসন, স্বাধিকাররাও দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই প্রিয়জনদের হত্যা করতে বলছেন সর্বশক্তিমান সারথি? পার্থ তো প্রায় হাল ছেড়েই দিয়েছিলেন। এমন সময় তাঁকে প্রবোধ দিতে এগিয়ে এলেন পার্থসারথি স্বয়ং। বললেন, ‘সামনে যাদের দেখছ, তাদের তো আমি আগেই হত্যা করেছি। তুমি এক্ষেত্রে নিমিত্তমাত্র। তাছাড়া অবচেতনে তুমিও এদের সর্বদা হত্যা করতেই চেয়েছ, তোমার মনে নেই?' সারথির আশ্বাসেও যেন দেহ-মনে বল পান না পার্থ। শেষে পার্থসারথি নিজের বিশ্বরূপ দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দিলেন তাঁর প্রিয় পার্থকে।
কী নেই সেই রূপে। পার্থ চোখ বিস্ফারিত করে দেখছেন, সকল বিশ্বের যা কিছু সত্য, সারাৎসার সব একটা ক্লিকে মিথ্যে হয়ে যাচ্ছে।আবার কত মিথ্যে এক নিমেষে সত্য হয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ পার্থসারথির ওই অসীম আয়তনের মধ্যে। সেখানে ঘনঘন মেসেজ আসছে, টাইপিং হচ্ছে। কতশত ভাইরাল হওয়া ভিডিও সেখানে। পার্থ এসব দেখে নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে অনেকটা লালমোহনবাবুর ঢঙে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি ঠিক কে বলুনতো? আপনাকে তো কাল্টিভেট করতে হচ্ছে মশাই!' সারথি মুখে ব্যঙ্গের হাসি এনে বললেন, ‘তোমার ভক্তরা তো বিশ্বাস করে, তুমি থাকলে সবকিছু হওয়া সম্ভব। তা সেই তুমি আমাকে এতকাল কাল্টিভেট করতে পারলে না? তোমার অনুগত ভাই কিন্তু তোমার চেয়ে বেশি বুদ্ধি ধরে। মনে করে দেখো, সে কিছুকাল আগেই রাজস্থানে গিয়ে বলে এসেছে, আমাদের 70 লক্ষ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। তাই, আমরা যে কোনও মিথ্যা খবরকে সত্য করতে পারি। এটা সে কার জোরে বলতে পারছে বল তো? এই আমার জোরে।'
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাওয়া পার্থ প্রায় কিছুই না বুঝে মাথা চুলকোতে লাগলেন। তার সেই অসহায় অবস্থার দিকে তাকিয়ে পার্থসারথি হেসে বললেন, ‘তা তোমাদের যে কয়েক লাখ অক্ষৌহিণী সেনা পাঠালাম, তারা এখন কেমন কাজ করছে?' তারপরই নিজের পরিবর্তিত স্থান-কালকে স্মরণ করে, সারথি নিজের ভুল শুধরে বললেন, ‘ওহ! এখন তো তোমরা তাদের আইটি সেল বলে ডাকতেই অভ্যস্ত।' পার্থ এবার কিছুটা স্বাভাবিক আর নরম হয়ে বললেন, ‘আজ্ঞে, এমনিতে তারা খুব ভাল কাজই করছে। তবে আমার সোশাল মিডিয়ায় ফলোয়ার বাড়ানোর কাজে আর বিরোধীদের প্রোফাইলগুলোয় রিপোর্ট করার কাজে একটা বড় গাফিলতি থেকে যাচ্ছে।' সারথি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, ‘চিন্তা করতে হবে না, আমি উপরমহলে খবর পাঠিয়ে দিয়েছি, সোশাল মিডিয়ায় তোমার বিরুদ্ধে যেই মুখ খুলবে, তার প্রোফাইলটাকে বসিয়ে দেওয়া হবে।' পার্থ গদগদ হয়ে বললেন, ‘আর আমার ব্র্যান্ড ভ্যালুটা কি আর একটু বাড়বে...',কথা শেষ করার আগেই উল্টোদিক থেকে দৃঢ় জবাব এল, ‘ধৈর্য আর সংযম রাখতে হবে পার্থ, একজন ব্যক্তিপিছু পাঁচটি করে অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে তোমার গুণকীর্তনই তো করা হচ্ছে দিকে দিকে। এতখানি আত্মকেন্দ্রিক হওয়া ঠিক না। তোমার জন্য আমায় কত মিথ্যা কথা বলতে আর বলাতে হচ্ছে জানো? অবশ্য প্রেমে আর রণে কোনও নীতি থাকে না— বহুকাল আগেই আমি এটা বলে গিয়েছিলাম।'
এদিকে পার্থ মরিয়া তার সারথির আসল পরিচয় জানতে। তিনি প্রায় নতমস্তকে আরও কিছু টিপস জেনে নিতে চাইছেন সারথির কাছ থেকে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, পার্থসারথি পার্থর থেকেও বেশি পেশাদার, আরও বেশি পারফেকশনিস্ট। হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বলেউঠলেন, ‘এবার তো আমায় যেতে হবে পার্থ।' পার্থ দেঁতো হাসি হেসে বলেন, ‘তবে এই লড়াইটা লড়বে কে?' সারথি এবার একটু অবাক হয়ে বলে, ‘কেন তুমি? ধর্ম আর চমকে তো ভালই চলছে লড়াইটা। মনে রাখবে পার্থ, এই স্বশাসন, স্বাধিকার এদের কোনও অস্তিত্ব তোমার নতুন ভারতে থাকবে না। এরা থাকলেই কিন্তু তোমার বিপদ বাড়বে।' পার্থ অভিমান করে বলেন, ‘তাহলে আপনি আমায় ফেলে চলেই যাবেন? আমি ভাবছিলাম আপনাকে আমার আপিসের হেড আমলার পদটা কিংবা ভাল একটা রাজ্যের রাজ্যপাল পদটা গিফট করব।' সারথি এবার ফিসফিস করে বলেন, ‘আমেরিকার একটা পত্রিকা তোমার আর আমার অন্তরঙ্গতার কথা ফাঁস করে দিয়েছে। তাই এখন তোমারআর আমার একসঙ্গে থাকা মানায় না। আমি তো গোপনে তোমার সঙ্গেই আছি নাকি?' পার্থ বললেন, ‘তা এবার আপনি কোথায় যাবেন?' রহস্যের হাসি হেসে পার্থসারথি বললেন, ‘মার্কিন মুলুকে। এমনিতেই ওখানে আমার হেড আপিস, তার উপর নভেম্বরে সেখানে ভোট। তোমার বন্ধুও যে তোমার মতোই আমার কাছে টিপস চেয়েছে। বিদায় বন্ধু। আপাতত নিজেকে লগ আউট করে নিও।'
বোম্বে বন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে স্প্যানিশ ফ্লু যা পরে বোম্বে ফ্লু নামে পরিচিত হয়।
আচ্ছা মৃত্যুর পর কী? মৃত্যুতেই কি সবকিছুর পরিসমাপ্তি নাকি, তার মধ্যে থেকেই সৃষ্টির বীজ উপ্ত হয়?
নীলকন্ঠ পাখি ওড়াতে গিয়ে যারা নীলকন্ঠ হল যারা, তাদের প্রণাম।
কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এই দেশ, আবারও না হয় পরীক্ষা দেবে।
পুরুষ সদস্যের মুখাপেক্ষী না থেকে, আর্থসামাজিক স্বাবলম্বনকে বুঝি 'ভিক্ষাবৃত্তি' বলে?
সমাজ নির্মিত ‘খুনি' হিসাবে একাকী রিয়াকে যে অসম লড়াইটা লড়তে হচ্ছে, সেই লড়াইয়ে সংহতি থাকবে।