×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • ভিক্ষা নয়, স্বাধিকার

    বিতান ঘোষ | 14-09-2021

    প্রতীকী ছবি।

    ভাদ্রের তপ্ত দিনে রোদের ছোঁয়াচ এড়াতে একটি গাছের ছায়াকে কয়েকজন মিলে ভাগ করে নিয়েছে। সামনে দীর্ঘ লাইন এঁকেবেঁকে চলে গেছে একটা স্কুলবাড়ির দিকে। লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের ফর্মফিলআপ এবং জমা নেওয়া চলছে। ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকা একজন শশব্যস্ত হয়ে বললেন, ‘উফ! কাজ কারবার ছেড়ে কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকব?’ পাশেরজন খানিক স্তোক দেওয়ার ভঙ্গিতে বললেন, ‘আহা, তোমার গিন্নি টাকা পাবে, তার জন্য একটু কষ্ট সইতে পারবে না?’ প্রথম ভদ্রলোক ভ্রুভঙ্গি করে বললেন, ‘গিন্নি পাবে তো আমার কী! আমি তো আর পাব না। তাছাড়া আগে কারণে অকারণে দু'টো কথা শোনাত। এখন পয়সা হাতে পেলে আরও কথা শোনাবে।'

     

     

    এইটুকু শুনলে উপরিউক্ত কথোপকথনকে সংসারের বারোমাস্যা বলেই মনে হতে পারে। কিন্তু তলিয়ে দেখলে এর মধ্যে একটা সামাজিক-রাজনৈতিক ছায়াও ক্রমে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অর্থ শুধু বৃহত্তর পরিসরে নয়, ঘরের অন্দরেও এক ক্ষমতার জন্ম দেয়। আর গড়পড়তা পরিবারে যেহেতু বাড়ির পুরুষ সদস্যই অর্থোপার্জন করেন, তাই তার ক্ষমতা পরিবারে নির্বিকল্প। সেই ক্ষমতার সমান্তরাল কোনও ক্ষমতা জেগে উঠুক, তা হয়তো এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ চায় না। তাই গৃহকর্মে নিপুণা ঘরনী হাউজওয়াইফ থেকে যতই ক্রমে হোমমেকার হয়ে উঠুন, তার স্বাধিকার, স্বাচ্ছন্দ্য রক্ষিত হয় ওই ক্ষমতার প্রশ্নেই

     

     

    ভোরের ট্রেনে কাঁচা সবজি নিয়ে এসে বাজারে বসা অমলা পিসি কিংবা মদ্যপ, অসুস্থ স্বামীকে ঘরে শুইয়ে রেখে শহরে কাজে যাওয়া বেনীদিদারাও রোজগেরে। মাসান্তে তাদের হাতেও নগদ আসে। কিন্তু সেই রোজগারে তাদের অধিকার কতটুকু? বেকার, ভবঘুরে স্বামীর নেশার পিছনে এই টাকার সিংহভাগ ব্যয় হয়। বাকিটা সংসারের চাল, তেল, নুনের খরচ। মাসের শেষে খুঁটে বাঁধা চাবিটুকুই সম্বল। লক্ষ্মীর ভান্ডারের ক্ষেত্রে সরকার কিন্তু বলছে এই টাকাটা গৃহিনীদের হাত খরচ হিসাবে দেওয়া হচ্ছে। মানে প্রকাশ্যে ঘোষিত হচ্ছে টাকাটা তাদের। টাকা আসছে প্রাপকের নামাঙ্কিত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। হয়তো টাকার অঙ্কটা যৎসামান্যই, কিন্তু এক অন্য ধরনের ক্ষমতা, স্বাধিকারের বীজ রোপণ করছে এই প্রকল্প। চিরায়ত ক্ষমতার কপালে তাই চিন্তার ভাঁজ। যে ক্ষমতা এতকাল বাড়ির গিন্নিকে নম্র’, ‘পতিব্রতা করে রেখেছে, সেই ক্ষমতাই কি এবার নিজের হক বুঝে নেবে? মৌনতা ভেঙে দু'টো কথার প্রত্যুত্তরে পাঁচটা কথা শুনিয়ে দেবে?

     

    আরও পড়ুন: বাড়িতে বই বলতে ব্যাঙ্কের পাসবুক

     

    একটি গবেষণা বলছে, মায়ের হাতে টাকা থাকা মানে সন্তানদের পাতে আরও পুষ্টিকর খাবার, অঙ্গে আর একটু ভাল পোশাক। টাকা আর ক্ষমতার উৎসমুখ কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়লে, ঘরের সব কোণে আলো পড়ে না। বারবার হাত পাততে হয় ক্ষমতার কাছে। আর ক্ষমতা বল্গাহীন হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই টাকা যায় ফুর্তি, আনন্দে। আগমনী গানে পর্যন্ত রামপ্রসাদ স্বয়ং শিবের বিরুদ্ধে নালিশ ঠুকে লিখছেন, "শিব শ্মশানে মশানে ফেরে, ঘরের কথা ভাবে না।'

     

     

    সামান্য হলেও নিজের এবং ঘরের কথা ভাবার পরিসর পাচ্ছে মেয়েরা। প্রয়োজন কিংবা শখ মেটাতে স্বামী বা পরিবারের কর্তার কাছে হাত পাততে হচ্ছে না, আবার তাদের ক্ষমতার কাছে ন্যুব্জ হয়েও থাকতে হচ্ছে না। এতকাল এই ক্ষমতাই তো হাত পাততে শিখিয়েছে মেয়েদের। তখন যদি একে ভিক্ষা বলে আমরা মনে না করে থাকি, তবে এখন নাগরিকের পয়সা সরকারি বজ্রনির্ঘোষে মেয়েদের হাতে এলে তাকে ভিক্ষা বলা যাবে কোন প্রকারে?


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    বিশ্বে ট্রেন নিয়ে অনেক গল্পগাথা আছে। কত গল্প প্রাণ পেয়েছে ট্রেনের কামরায়।

    শত্রুকেও ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে গ্রহণ করে সাদা ও কালোর পুনর্মিলন ঘটালেন ডেসমন্ড টুটু।

    জন্মিলে মরিতে হইবে, ক্যাপিটালিজম সঙ্গ দেবে!

    বাঙালির সুকুমারি মন, ননসেন্স রাইমস লিখেও এখানে প্রফেট হওয়া যায়, গবেট নয়।

    দলের বাইরে বহু চালচোর ছিলই, ভোটের পর দেখা গেল দলের ভিতরেও বহু চালচোর আছে!

    যৌনপল্লীর কেউ কেউ এখন স্থানীয় হাটে সবজি নিয়ে বসেন। কেউ আবার বুধবার করে ফুল, বেলপাতা, আমপল্লব নিয়ে।

    ভিক্ষা নয়, স্বাধিকার-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested