×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • ভাষা? আ মোলো যা!

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 29-07-2020

    "ভাই লন্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়বে। কী শিখবে ভাই অর্থনীতি নাকি... হেঁ হেঁ হেঁ।'

     

     

    পাড়ার দাদা "শর্মা' দা হাসির কথা বলেছে, হাসতে তো হবেই। কই সবাই হাসো দেখি। ঋতুপর্ণ বিদেশের কোন "লন্ড' বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। হাসির কথাই বটে। অবশ্যি ঠিকই আছে, ঋতুপর্ণের নামেই যখন খারাপ কথা আছে, সেখানে সে যে অমন কলেজই বাছবে এ তো জানা কথাই। "লন্ড' নাকি। হেঁ হেঁ।

     

     

    পাড়ার দাদা উক্ত শব্দ দুটি নিয়ে হাসতেই পারে, আরে বাবা, না হাসার কী আছে শুনি? আমাদের শর্মা দা নিজের মাতৃভাষার পাশাপাশি ইংলিশ জানে, আবার বাংলাও। বাব্বাহ! বললে হবে? তোমরা জানো এত ভাষা? তাই ও ঋতুপর্ণ নামের মানেও জানে, ওই তো ঋতু মানে গিয়ে "ইসসিজন' আর পর্ণ মানে... আজ্ঞে থাক বরং। শর্মা দা আমাদের বড় ভাল ছেলে, খারাপ কথা কয় না। তাই বলে "পোতিবাদ' করতেও ছাড়েনা। এই তো, এই তো কদিন আগেই "ফেসবুক বিপ্লব' করে এল। ঋতুপর্ণের খবর পাওয়া মাত্রই ফেসবুকে সার্চ করল, তারপরই তো ওই ইউনিভার্সিটির পেজে গিয়ে করে এল, "কমেন্ট'। নিন্দুকেরা অবশ্য ওটাকে কমেন্ট বলবে, ওটা আসলে "পোতিবাদ', ওহ! কী ভাষা সেই পোতিবাদের, যেন জ্বলন্ত বাণী। দেখেই "চোখে জল, ঠোঁটে হাসি, প্রাণ ভরে মজা করে ভারতবাসী' অবস্থা। কিন্তু ওমা! একি! পাড়ার দাদা, শর্মা দা তো এখানে একা নয়, তার মতো তো আরও শয়ে শয়ে "সিং' দা, "বলবন্ত' দা'রা আছে, যারা "তিব্বো পোতিবাদ' করেছে এমন খারাপ ভাষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলায়। কী দুঃসাহস! বাবা গো। আমাদের দেশের একটা খারাপ ভাষা নিয়ে কলেজ খুলবে তাও বিদেশে, আবার সেখানে আমাদেরই দেশের ছাত্রদেরই পড়তে নেবে? কী আস্পদ্দা!

     

     

    যাক বাবা, ঋতুপর্ণ আর ওর ইউনিভার্সিটি দুটিকেই শিক্ষা দেওয়া গেছে, এবার শান্তি। ভাল করে কড়কে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শর্মা দার জীবনে কি আর শান্তি আছে? খবর এল শর্মা দার "শিক্ষার' ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নাকি হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসেছে! ওঁরা বলছে, ওঁদের ভাষায় লন্ড মানে নাকি "সবুজ জায়গা'! আবার এই বিশ্ববিদ্যালয় নাকি গোটা পৃথিবীতে দারুন নাম করা। ছোঃ! বললেই হবে? এই শব্দ ওদের ভাষাতেই আছে, অন্য ভাষায় অন্য মানে কী করে হবে? যত্তসব বুজরুকি। কাঁদছে কাঁদুক, আমরা তো মজা করলাম, আবার কী? পড়াশোনার জায়গায় এসব চলবে না। সোজা কথা, দেশ হোক আর বিদেশ, এমন করলে পোতিবাদ হবেই। তাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা আমাদের দেশের যে ছাত্ররা ওখানে পড়তে যাচ্ছে তাদের যা খুশি হোক, যত অপমানই সইতে হোক, আমাদের কী? আমাদের ভাষায় যে শব্দ খারাপ তা খারাপ, সেই শব্দের যতই অন্য মানে থাক অন্য ভাষায় আমরা মানব না। উল্টে অপমান করব, শিক্ষা দেব, কারণ? আমাদের দারুণ শিক্ষা, দারুণ রুচিবোধ।

     

     

    সবে এত বড় কাজ সামলে পাড়ার মোড়ে রোয়াকটায় বসে দাঁত পরিষ্কার করছে শর্মা দা, তখনই আবার খবর এল। আসামের কোন জনজাতির একটি মেয়ে নাকি বিশাল হইচই ফেলেছে সোশাল মিডিয়ায়, চাকরির ফর্ম ফিলাপ করতে পারেনি বলে। কারণটা অবশ্য ওর পদবি, "চুতিয়া'। এমন পদবি কেউ রাখে? সিস্টেম বলে দিয়েছে "খারাপ শব্দ'। ব্যস আর অ্যাপ্লাই করতে পারেনি, অ্যাপ্লিকেশন রিজেক্ট হয়ে গেছে। বেশ হয়েছে, মনে মনে ভাবল শর্মা দা। হবে না, আমাদের "রাষ্ট্র ভাষায়' চুতিয়া যে খারাপ শব্দ, সে যতই হোক না কোনও রাজ্যের জনগোষ্ঠীর নাম, তাতে কী? তাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়লে, তারা সমস্যায় পড়লে পদবি পাল্টে নিক, কিন্তু এমন পদবি রাখা চলবে না! "সিস্টেম' ঠিকই করেছে। এমনটা হয়েছে শুনে বেশ শান্তি পেল মনে। হিন্দি ভাষার জোর আছে বলতেই হবে। কী বলেন? কিন্তু, আমাদের দেশের যে "ইউনিটি ইন ডাইভারসিটি' আছে সেটা? দেশের কর্তা ব্যক্তিরাও কি তবে শর্মা দার মতো জানে না, আমাদের দেশের এক প্রান্তে এমন কোনও এক পদবী আছে, এক জনজাতি আছে যাঁদের আঞ্চলিক ভাষায় "চুতিয়া' শব্দটি গালাগালি না, বরং তার অন্য মানে রয়েছে? যাক গে যা, অত ভেবে কাজ নেই, রাষ্ট্র ভাষায় যে শব্দ খারাপ তা খারাপ, ব্যস।

     

     

    (ব্যবহৃত নাম দুটি কাল্পনিক)

     


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    স্মরণকালের মধ্যে পূর্ব অ্যান্টার্কটিকায় গরম বাড়ছে নজিরবিহীনভাবে!

    হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল, শোনার কেউ নেই?

    মা কি সবার ক্ষেত্রে এক হয়? নাকি তফাৎ থাকে কোথাও?

    দুর্দান্ত অভিনয়, চিত্রনাট্যের পরেও অস্কারের জন্য মনোনীত হল না সর্দার উধম।

    হাত ধোওয়া বা স্যানিটাইজ করা উচিত, এই অভ্যেস থাকা অবশ্যই ভাল। কিন্তু অমূলক ভয় থাকা নয়।

    পাতাখোর হলে যেন চুরির অপরাধ আর ধর্তব্য নয়!

    ভাষা? আ মোলো যা!-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested