প্রভু জগন্নাথ রথে চেপে বাৎসরিক নগর ভ্রমণে বেরিয়েছেন। অন্যান্যবার রথের আশেপাশে যে ভক্তরা উদ্বেলিত হয়ে তাঁকে ছোঁয়ার চেষ্টা করে, তাঁদের প্রভু খুঁজে পেলেন না। মহামারী পীড়িত এই পার্থিব দুনিয়ায় অবিনশ্বর প্রভু স্মরণ করলেন, কপিলাবস্তু থেকে রথারূঢ় হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসার সময়েও তাঁর এমন বোধ হয়েছিল। ত্রাতা মোজেস হয়ে ইহুদিদের নিয়ে তিনি যখন সাগর ডিঙোলেন, তখনও এই হিংসা, বিপন্নতা, বিচ্ছিন্নতাবোধ।
প্রভু ভাবেন ভক্তদের থেকে কত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন তিনি। কত উঁচুতে তাঁর অধিষ্ঠান। রাজোচিত ভঙ্গিমায় বসে রয়েছেন তিনি। কিন্তু তাঁরও তো ফকির হতে সাধ জাগে। ইচ্ছা হয় এই সুবিশাল রথকে ভক্তদের সঙ্গে সমান তালে টানতে। এই আড়ম্বরসর্বস্বতায় কোনও ভক্ত বলেন না, ‘তাই তোমার আনন্দ আমার পর, তুমি তাই এসেছে নীচে।' তেত্রিশ কোটি এই দেবতার দেশে শুধু বীররসের আখ্যান, সজল চোখে কেউ প্রভুর সুহৃদ হতে চায় না। নির্বান্ধব প্রভুর খালি মনে হয় ভক্তের সঙ্গে তাঁর প্রভুত্ব আর আনুগত্যের এক দূরবর্তী সম্পর্ক।
রাতের গহনে অভিসারে বেরিয়ে মহাপ্রভু পথের পাশে কোনও কুসুমচিহ্ন দেখেন না। কণ্টকাকীর্ণ পথে শুধু রক্তের দাগ৷ শ্রীক্ষেত্রে সেই জনসমাগম এবারেও নেই। শুধু কিছু নিয়মরক্ষার জন্যই প্রভুকে বার করা হয়েছে। প্রভু তাঁর মানসচক্ষে খুঁজছেন শ্রীচৈতন্যকে। তিনি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন, শ্রীচৈতন্য ভাববিহ্বল হয়ে রাস্তায় তাঁর রথের আগে আগে হেঁটে যাচ্ছেন। তাঁর পরিধেয় বস্ত্র লুটিয়ে পড়ছে, দু'চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বয়ে চলেছে। পথে তিনি যাকেই দেখছেন গভীর আলিঙ্গন করছেন, যেন বুকের হলাহল জুড়িয়ে যাচ্ছে মানবের স্পর্শে।
আরও পড়ুন: কেন 84 বছরের বুড়োটা এত বিপজ্জনক!
শেষে সেই শ্রীচৈতন্য প্রভুর মন্দিরে ঢুকতে পারলেন না। মন্দিরের সামনে বড় বড় করে লেখা হল, ‘শুধুমাত্র হিন্দুদের প্রবেশাধিকার আছে'। প্রভু ভাবেন, ভক্তের হৃদয়ে এ কোন ভক্তির প্রকাশ, তাদের হৃদয়ে কি মানবতার ফল্গুস্রোত ক্রমক্ষীয়মান? এই জগতের সর্বত্র তাঁর বাস, একখণ্ড মন্দিরে বিগ্রহ করে থাকার জন্য কত আইন আদালত রক্ত দাঙ্গা, অথচ মনটাকে একটু প্রশস্ত আর স্বচ্ছ রাখলেই প্রভু সেখানে গুছিয়ে বসতে পারেন, দু'দণ্ড জিরিয়ে নিতে পারেন। পাঁচ ওয়াক্ত নমাজ পরা কাজি নীল যমুনাকে কাতর স্বরে বলছেন, আমার কৃষ্ণ ঘন শ্যাম কোথায়, তাকে তুমি এনে দাও। প্রভু প্রকাশিত হলেন নীলে নীলিমায়। শ্রীচৈতন্য বললেন, কোথায় গেলে আপনার সঙ্গে একাত্ম হব প্রভু? অসীম নীল জলরাশির দিকে অঙ্গুলনির্দেশ করলেন প্রভু জগন্নাথ।
এই দেশে যে মুসলিম ছেলেটা হিন্দু মন্দিরে জল খেতে গিয়ে প্রহৃত হল, নিম্নবর্ণের যে প্রৌঢ়র প্রভুর মন্দিরে যাওয়ার প্রবেশাধিকার কেড়ে নেওয়া হল, রজঃস্বলা যে নারী প্রভুর পূজার অঙ্গনকে ‘অশুচি' করার দায়ে ধিক্কৃত হল, প্রভু তাঁদের অশ্রুধারায় বয়ে চলেছেন নিরন্তর। তোমরা বৃথাই তাঁর অবয়বকে রথে চাপিয়ে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছ। যতই "জয় জগন্নাথ' বলে ভক্তির আধিক্য দেখাও, প্রভুর মনের নাগাল তোমরা পাওনি। প্রভুও তোমাদের নয়নপথে গমন করেননি। তাই মানুষের অন্তঃস্থলে যে যমুনা চিরপ্রবাহমান, সেখানে প্রভুর খোঁজ কোরো। প্রভু একটু প্রেম আর ভালবাসার কাঙাল হয়ে সেখানে তোমাদের সকলের জন্য প্রতীক্ষায় আছেন।
এতকাল ভুল করত বিরোধী দল, পড়শি রাষ্ট্র, অবশেষে তিনিও ‘ভুল’ করলেন, তা স্বীকারও করলেন!
বালিগঞ্জ উপনির্বাচনে বাবুল সুপ্রিয়র জয়ে প্রমাণ হল শাসক দলে ভিড়লে সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত হওয়া যায়!
এতগুলো অবোধ প্রাণকে সহায় সম্বলহীন করে ঘরের মেয়ে কি শ্বশুরঘরে ফিরতে পারে?
সেনেগালকে সারা বিশ্ব চিনত বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র, ক্ষুধাপীড়িত দেশ বলে
বাংলার ভোটের ফল বিজেপি বিরোধী শিবিরে আশা জাগালেও বিরোধী ঐক্য এখনও দূর অস্ত।
মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পরেও আফগানিস্তানের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখতেই হবে ভারতকে