"এবার আমার উমা এলে, আর উমারে পাঠাব না।'
দূরের কোনও রেডিও থেকে কানে এল বহুশ্রুত এই রামপ্রসাদী গানটা। হিমালয়দুহিতা উমাকে কাছছাড়া না করার এই আকুলতা কি করোনা-কালেও সমান প্রবল?
দীর্ঘ সাত-সাতটা মাস অতিক্রান্ত। পেশা, নেশা সবই ঘুচেছে অনেকের। রয়েসয়ে থাকা পেটটাও এবার বিদ্রোহ করছে। পরবাস ছেড়ে, থমকে যাওয়া সময়ের নিস্তরঙ্গতা কাটিয়ে অনেকেই সচল করে নিতে চাইছেন নিজেদের। কিন্তু সময় সচল হচ্ছে কই! চারদিকে শুধু দৈন্যেরই ছবি। সামনের বারোয়ারিতে মণ্ডপ বাঁধা চলছে ঢিমেতালে। আড়ে-বহড়ে অবশ্য এবার সবকিছুই অনেক ছোট করে। স্কুলফেরত কচিকাঁচা হৈ-হুল্লোর করতে করতে সেখানে জড়ো হচ্ছে না। লক্ষ্মীর মুখটা কেন হলুদ আর সরস্বতীর মুখটা কেন সাদা, সেটা নিয়ে তর্ক জুড়ছে না। কুমোরটুলিতেও যেন অখণ্ড অবসর। রকমারি বড় প্রতিমার অর্ডার নেই, সবটুকুই এবার নিয়মরক্ষার খাতিরে। শিউলি, ছাতিমের গন্ধটা অবশ্য মাঝেমধ্যে মনে করিয়ে দিচ্ছে এটা পুজোর মাস। এ'টুকুই যা।
বাড়ির সামনে আদুল গায়ে ঘুড়ি ধরতে আসা বিনুকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ওই বিনু ক'টা জামা হল?’ প্রতি বছর এই প্রশ্নের একটা প্রত্যাশিত উত্তর ছিল। বিনু গাঁট গুনে গুনে বলে যেত, একটা, দু'টো, তিনটে, চারটে...তারপর হাতের আঙুলগুলোকে ফাঁক করে চারটে বলে চেঁচিয়ে উঠত। ভারি মজা লাগত ওর এই উত্তরটা শুনতে। এবারে বিনুকে এই প্রশ্নটা করলাম বটে, কিন্তু প্রত্যাশিত উত্তরটা এল না। একছুটে দৌড় লাগাল সে। পরে শুনলাম ওর বাবার মাথাটা নাকি ঠিক নেই। ট্রেনে হকারি করতেন, কখনও ফল, কখনও দিলখুশ, কখনও বাদাম। এতদিনের রোজগারহীনতায় তিনি এখন অসংলগ্ন বকেন, কখনও কেঁদে ওঠেন। হয়তো সান্ত্বনা পেতে চান। কিন্তু এই সময়ে কেই বা কাকে সান্ত্বনা দেবে? সবাই যে একটু সান্ত্বনা, একটা ভরসা পেতে চায়।
বছরের অনেকগুলো দিন পেরিয়ে, জীবনের অনেক ওঠাপড়া ডিঙিয়ে উৎসবের ক্ষণ আসত। খড়ের বাঁধনে মাটি লেপার সময় থেকে যে ভাললাগাটা কাজ করত, তা সম্পূর্ণ হত উমা সালংকারা হওয়ার পর। জাত, বর্ণ, রঙ, আনন্দ, কষ্ট - কত কিছু মিলে যেত উৎসবের পাঁচটা দিনে। এবার কি সবকিছুতেই ফাঁকি পড়ে গেল? বৃদ্ধাশ্রমের প্রবীণ-প্রবীণা কিংবা দীর্ঘ মনোবৈকল্যে ভোগা মানুষ, যারা চার দেওয়ালের জীবনের বাইরে বেরিয়ে এই পাঁচটা দিনে অপার কৌতূহল নিয়ে উৎসবে মিশে যেতেন, তাঁরাও কি দূরে দূরেই থাকবেন এবার? ভাদ্রের রোদে ঢাকের চামড়া শুকিয়ে, কাঁসিবাদক ছেলেকে শহরের পুজোয় নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেওয়া ঢাকি কি এবার নিজের গ্রামেই রয়ে যাবেন?
দশমহাবিদ্যার দেবী দুর্গাকে আমরা আমাদের ঘরের মেয়ে হিসাবে মেনেছি। উজাড় করে কত আশা-হতাশা ব্যক্ত করেছি তার কাছে। দশমীর সন্ধেতে দেখতাম মা-জেঠিমারা উমার কানে কত অব্যক্ত কথা শুনিয়ে যাচ্ছেন। উমার কাছে তারা এবার নিশ্চয়ই এই মারের সাগর পাড় করে দেওয়ার প্রার্থনা জানাবেন। পাঁজির হিসেব মেনে উমা আসবেন তার বাপের ঘরে। বিদায়বেলায় প্রতীকী নীলকন্ঠ উড়ে যাবে উমার কৈলাস বিদায়ের বার্তা নিয়ে। তবু এই মহামারী, এই অনিশ্চিত সময়ের শিকার যে কোটি কোটি মানুষ তারা আকাশের দিকে চেয়ে উড়ে যাওয়া নীলকন্ঠগুলোকেই খুঁজে বেড়াবে। ঠিক যেমন অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে’ উপন্যাসে ‘পাগল’ বড়বাবু ‘গ্যাৎচোরেৎসালা’ আওয়াজে আকাশের নীলকন্ঠগুলোকে খুঁজে বেড়াতেন। এভাবেই শয়েশয়ে নীলকন্ঠ এই নিশ্চল সময়ের অনেক ওপর দিয়ে উড়ে যাক। তারা কৈলাসে খবর পাঠাক, এবারে উমা আর বাপের বাড়ি থেকে ফিরছে না। এতগুলো অবোধ প্রাণকে সহায় সম্বলহীন করে ঘরের মেয়ে কি শ্বশুরঘরে ফিরতে পারে?
সেনেগালকে সারা বিশ্ব চিনত বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র, ক্ষুধাপীড়িত দেশ বলে
সংবিধান দিবসের স্মরণ: নাগরিকের কাছে ধর্মগ্রন্থের মতোই পবিত্র এই নথি।
কাজের সন্ধানে শহরে চলে আসা অপুরা গত সাত-আট মাসে গ্রামে ফিরতে পারেনি। লোকাল ট্রেনে আমার সঙ্গী হল তারা
স্বাধীনতার 75 তম বছরে যে গণ-আন্দোলন প্রতিস্পর্ধী শাসককে নতজানু করল, সেই আন্দোলনেরও প্রেরণা মহাত্মা।
বাপের বাড়ির হালফিলের খবরে বিচলিত মা দুর্গা।
গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন সীমান্ত দ্বৈরথ কেন এমন রক্তক্ষয়ী মল্লযুদ্ধের চেহারা নিল, তার ময়নাতদন্তে..