দিল্লির জহাঙ্গিরপুরীতে (Jahangirpuri) উত্তর দিল্লি পুর নিগম (NDMC) অবৈধ বসতি উচ্ছেদ অভিযানে শ'খানেক পরিবারকে কয়েক ঘন্টার মধ্যে বাস্তুচ্যুত করল। শীর্ষ আদালতের স্থগিতাদেশও পুর-কর্তৃপক্ষকে নিবৃত্ত করতে পারল না। কোর্টের নির্দেশ সংবলিত কাগজপত্র নিয়ে এসে যখন বৃন্দা কারাট বুলডোজারের সামনে দাঁড়ালেন, তখন ধ্বংসলীলা বন্ধ হল। পুরসভা, পুর-কর্তা, মায় তাঁদের হয়ে কোর্টে লড়াই করা সলিসিটর জেনারেল জানালেন, কোর্টের নির্দেশের কপি তাঁদের হাতে পৌঁছয়নি! ভাবখানা এমন যেন, বিচার বিভাগের নির্দেশ লিখিত নির্দেশ বিনা এই দেশে গাছের পাতাটিও নড়ে না।
বৈধ কী, আর বৈধ ও অবৈধের সীমারেখাটাই বা কে আঁকবে? না, এ কোনও যক্ষ-যুধিষ্ঠির তর্কযুদ্ধ নয়। আজকের ভারতবর্ষে দাঁড়িয়ে এ এক সঙ্গত প্রশ্ন। ল্যুটিয়েন্স দিল্লির অভিজাত এলাকার বাড়িগুলির অধিকাংশই যে অবৈধ জমিতে নির্মিত, তা একবাক্যে স্বীকার করে প্রায় সব রাজনৈতিক দলই। তবে কেন জবরদখলের দায়ভার দিয়ে বুলডোজ করা হয় গরিব মহল্লার লাল-নীল সংসারগুলো? এই মহল্লার মানুষদের অপরাধ, তারা ধর্মপরিচয়ে মুসলিম। তদুপরি তারা বাংলায় কথা বলেন। তবে তো নিশ্চয়ই তারা বাংলাদেশি, রোহিঙ্গা হলেও হতে পারে! অতএব এরা ‘অবৈধ’ অনুপ্রবেশকারী। উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার ধরন নিয়ে মতভেদ থাকলেও, ‘অনুপ্রবেশ’ ও ‘বাংলাদেশি’-র প্রশ্নে দিল্লির আপ সরকার ও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের গলায় প্রায় একই সুর! এমনকি এক প্রবীণ বাম নেতাও বেমালুম বলে বসলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ভাবতে হবে, কারা দিল্লিতে গিয়ে এসব করছে। সে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভাবার মতো সত্যিই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আছে। কিন্তু বাংলাভাষী মুসলিম হিন্দুরাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখা কেন্দ্রীয় সরকারের চাঁদমারি বলেই আমাদের সকলকে ভাবতে বসতে হবে? এই ভাবনাও কি অবৈধ নয়?
"যত মত, তত পথ'— মত ও পথের ভিন্নতাই নৈতিকতার মানদণ্ডে বৈধ। আর এর বাইরে যে কোনও আরোপিত ও একরৈখিক পথই অবৈধ। রাষ্ট্রীয় প্রযোজনায় অনুষ্ঠিত হনুমান জয়ন্তীর পর দেখা গেল শ্রী শ্রী হনুমান দেশের বিভিন্ন মসজিদের পথে এগিয়ে চলেছেন। বাকিরা অনুগমন করছেন। তারপর অযোধ্যার রামলালার মতোই তাঁর অবাধ্যতা শুরু হচ্ছে, তিনি মসজিদেই থাকবেন। সংখ্যাগুরু তাঁর আরাধ্যকে বোঝাচ্ছেন না যে, এই অভিলাষটা অবৈধ। সংখ্যাগুরুর অভিলাষ হচ্ছে অবশ্য যাবতীয় অবৈধতাকে সংখ্যার জোরে, শব্দের জোরে বৈধতা দান করা। আজান বিতর্ক, জাহাঙ্গিরপুরীর ঘটনা তো এই সব কিছুরই প্রতিফলন। অবৈধ বসতির উচ্ছেদের আগেও অন্তত বিধি মোতাবেক একটা নোটিশ জারি করা হয়, আর আজকের ভারতে উচ্ছেদের পূর্ব লক্ষণ হল, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার মধ্য দিয়ে ধর্মীয় মিছিল যাওয়া। জাহাঙ্গিরপুরীর বাঙালি মুসলমান পরিবারগুলি দীর্ঘ চার-পাঁচ দশক এই এলাকায় বাস করে ‘জবরদখলকারী’র তকমা পেলেন। আর জনগণের রায়ে প্রত্যাখাত জনপ্রতিনিধিরা বাংলো বাড়ি দখল করে পড়ে থাকার পরেও বহাল তবিয়তে রয়ে গেলেন!
জনগণের ‘বৈধ’ ভোটে নির্বাচিত শাসক শুধু জহাঙ্গিরপুরীতে নয়, অবৈধ বসতি ভাঙছে মধ্যপ্রদেশ কিংবা উত্তরপ্রদেশেও। সংখ্যাগুরুর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে না, আবার সংখ্যালঘুর অবৈধতাও প্রশ্নহীন থেকে যাচ্ছে। যিনি ভাঙতে পারেন, বীরপুজোর দেশে তারই জয়জয়কার। তিল তিল করে গড়ে তোলা এই দেশে সশব্দে ভাঙছে বহুত্ববাদ, ভিন্নমত। ভাঙনের জয়গান গেয়ে ভক্তরা প্রিয় নেতার নাম দিচ্ছেন ‘বুলডোজার মামা’ (মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান এই নামেই পরিচিত), কিংবা ‘বুলডোজার মুখ্যমন্ত্রী’ (যোগী আদিত্যনাথ)। শাসকদলের জনৈক নেতা বুলডোজারকে ‘জেহাদি’ অপসারণের যন্ত্র বলে দাবি করেছেন। সংখ্যাগুরু চালিত বুলডোজার এগিয়ে চলেছে সংখ্যালঘু মহল্লায়, এগিয়ে চলেছে চলেছে বিরুদ্ধ মতের দিকে। বুলডোজারের অন্তিম গন্তব্য কি দেশের সংবিধান? চরকা, লাঙলের মতো প্রতীক যে দেশের জাতীয়তাবাদকে পথ চিনিয়েছে, সেই দেশের জাতীয়তাবাদ আজ কোন অবৈধ পথে এগিয়ে চলেছে?
রাজনীতির হরিদাসদের অনৃতভাষণ আর চমকদারিতে ঢাকা পড়ে যায় হরিচাঁদ ঠাকুর এবং তাঁর সমাজ সংস্কার আন্দোলন।
‘সব খেলার সেরা’ আছে কিনা জানা নেই, তবে ফুটবলটাই আর বাঙালির নেই!
বাংলার ভোটের ফল বিজেপি বিরোধী শিবিরে আশা জাগালেও বিরোধী ঐক্য এখনও দূর অস্ত।
করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়তে নেমে আসলে দু'টো মহামারীর বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হচ্ছে।
আপাতত রণে ভঙ্গ দিলেও সুনার বঙ্গালের কারিগরদের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
বাংলায় বেহাল বিজেপির মোহ কাটতেই তৃণমূলে ফিরছেন নব্যরা, বিমুখ আদিরাও, মহাসংকটে রাজ্য বিজেপি