×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • ‘শহীদ স্মরণে’ বাজিমাত বাম-তৃণমূলের, নিঃস্ব বিজেপি!

    বিতান ঘোষ | 29-07-2021

    নকশালবাড়ির সেই বিখ্যাত স্মারকবেদী।

    বঙ্গ নির্বাচনের ফলাফল বেরোনো ইস্তক নানা আলোচনা, রাজনৈতিক বিচার বিশ্লেষণ চলছে। প্রচারের এত ঢক্কানিনাদ সত্ত্বেও বিজেপির এই শোচনীয় পরাজয় কেন এবং দশ বছর ক্ষমতাসীন থাকার পরেও তৃণমূলের ভোটের গ্রাফ উর্ধ্বমুখী কেন, তা নিয়ে নানা মত রয়েছে। প্রাজ্ঞজনেরা এই নিয়ে তাঁদের মতামত জানাচ্ছেন। আমি এই প্রসঙ্গে আমার মফঃস্বল জীবনের একটি অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিচ্ছি

     

     

    কিছুদিন আগে রাস্তায় বেরিয়ে দেখলাম, সামনের মোড়মাথায় ইঁট দিয়ে বেদী সদৃশ কিছু একটা বানানো হচ্ছে। তার পরদিন দেখলাম সেটি আদতে একটি বেদীই, নাতিদীর্ঘ আকার, গায়ে ঘন সবুজ রঙ, আর সামনে সাদা ফলকে লেখা শহীদ স্মরণেএই বছর 21 জুলাই ছিল বুধবার, তৃণমূলের বৃহত্তম রাজনৈতিক সমাবেশের দিন। সেদিন দেখলাম ওই বেদীর ওপর কারা যেন ফুল মালা দিয়ে গেছে। তার ওপর পতপত করে উড়ছে ঘাসফুল পতাকা। অথচ তৃণমূল দলটির বয়স নয় নয় করে প্রায় 23 বছর হতে চললেও এবং দলটি প্রায় 10 বছর ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও কখনও এমন আয়োজন দেখিনি। বড়জোর বাস বোঝাই করে ধর্মতলা যাওয়া এবং বড় রাস্তার ধারে বড় এলইডি স্ক্রিনে সভানেত্রীর বক্তব্য শোনানো— এই ছিল এতদিনকার পরিচিত দৃশ্য

     

     

    পাড়ার পরের মোড় মাথাতেই আছে কালো রঙের বেদীর ওপর সাদা ফলক। তাতে কালো রঙে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা, ‘খাদ্য আন্দোলনের শহীদদের লাল সেলামছোটবেলায় মনে পড়ে, আগস্ট মাসের শেষ দিনটিতে এই বেদীতে মালা পড়ত, পাশে ম্যারাপ বেঁধে একটা ছোট পথসভাও হত। এখন সে সব আর কিছুই হয় না। উলটে ওই বেদীটা এখন ক্রমশ জৌলুস হারিয়ে পথের এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকে

     

     

    আসলে এই দৃশ্য দু'টো ভীষণ প্রতীকী। বামেরা 34 বছর এই রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল। ক্ষমতায় আসার পূর্বে তারা বহু গণআন্দোলনের শরিক হয়েছে, তাতে নেতৃত্ব দিয়েছে। নীচুতলা অবধি নিরবচ্ছিন্ন সংগঠন গড়ে তুলতে বামেদের কৃষক-শ্রমিক ফ্রন্ট যেমন সক্রিয় ছিল, তেমনই সাংস্কৃতিক ফ্রন্টও খুব জোরালো ছিল। কখনও গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘ’, কখনও বা IPTA-র মাধ্যমে বাম মতবাদ তারা তরুণ-যুবদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিল। খাদ্য আন্দোলন নিয়ে বহু বাম নেতার তেজস্বী বক্তব্যে রীতিমতো উদ্বেলিত হতে হয় এখনও। কিন্তু সেই রামও নেই, অযোধ্যাও আর নেই। ক্ষমতায় থাকতে থাকতেই সংগঠনে যে মরচে ধরেছিল, তাই এখন সশব্দে প্রায় ভাঙতে বসেছে। খাদ্য আন্দোলন বা এরকম বাম গণআন্দোলন গুলির ইতিহাস সম্পর্কে এখনকার বাম ছাত্র-যুবদের একটা বড় অংশই অবহিত নন। তাই সেই লড়াইগাথা পরম্পরাগত ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে না

     

    আরও পড়ুন: চাঁদের পাহাড়ের দেশ কি আবারও ভয়ঙ্কর অতীতের মুখোমুখি?

     

    তৃণমূল সাংগঠনিক ভাবে বামেদের মতো একেবারেই পোক্ত নয়। আর পাঁচটা মধ্য-দক্ষিণপন্থী দলের মতোই এটি একটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল, যেখানে নেতৃবৃন্দের মধ্যে প্রকাশ্য দলাদলি খুব অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। কিন্তু পিকের হাতযশে এখন সেই দলেও যেন একটা বাঁধন দেখা দিচ্ছে। পাড়ার মোড়ে মোড়ে শহীদ বেদী গড়ে উঠছে। বছরের দু-পাঁচটা বিশেষ দিনে নয়, এখন স্ট্যান্ডে নিয়মিত তৃণমূলের মুখপত্রকে দেখা যাচ্ছে। নিজেদের রাজনৈতিক মধুমাসে ঠিক এইভাবেই তো এগোনোর চেষ্টা করেছিল বামেরা। হয়তো আরও বেশি সংগঠিত ভাবে, স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে। দীর্ঘ রাজনৈতিক লড়াইয়ের স্মারক আর নিজেদের বক্তব্য মানুষের কাছে সরাসরি পৌঁছে দেওয়া— এই দুই পুঁজিকে অবলম্বন করেই তো প্রায় সাড়ে তিন দশক রাজপাটে ছিলেন বামেরা। সোশাল মিডিয়ার এই যুগে তৃণমূলও কি তবে বামেদের সেই পন্থা অনুসরণ করতে চলেছে?

     

     

    ঠিক এই জায়গাতেই কয়েক কদম পিছিয়ে রয়েছে বিজেপি। ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে তারা রাজ্য রাজনীতি সরগরম করে ফেললেও, তাদের বেশ কিছু নেতাকর্মী আক্রান্ত ও হত হওয়া সত্ত্বেও, নির্বাচনের আগে পরে তারা এমন কোনও গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি, যাকে পুঁজি করে বেশ কিছুটা রাজনৈতিক সুদ পাওয়া যায়। সংঘের উদ্যোগে তাই স্থানে অস্থানে বজরংবলী মন্দির বা রামমন্দির হলেও কোনও শহীদ স্মারক তাদের নেই।  দীর্ঘমেয়াদে কী ফল ফলবে জানা নেই, তবে বাংলার ভোটের ফলে প্রমাণিত যে মন্দির নয়, বীরত্বপূর্ণ রাজনৈতিক লড়াইয়ের কোনও ইতিহাস না থাকলে বাংলায় কল্কে পাওয়া মুশকিল। কংগ্রেস স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম প্রধান কুশীলব হিসাবে এবং দেশ পুনর্গঠনের কারিগর হিসাবে স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম তিন দশক যাবতীয় রাজনৈতিক সুবিধা পেয়েছে। তারপর গণআন্দোলন এবং গণসংগঠনের জোরে বামেরা পরবর্তী তিন দশক। এখন তৃণমূলও তাদের বাম বিরোধী লড়াই এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাম-বিরোধী আপসহীন সংগ্রামকে বিজেপির বিরুদ্ধে বাজি ধরতে চাইছে

     

     

    রবীন্দ্রনাথ এক জায়গায় লিখছেন, ‘রাজছত্র ভেঙে পড়ে, রণডঙ্কা শব্দ নাহি তোলে, জয়স্তম্ভ মূঢ়সম অর্থ তার ভোলে। ইতিহাসের স্বাভাবিক চলনেই হয়তো খাদ্য আন্দোলনের শহীদ বেদীগুলোর ক্রমশ ম্লান হয়ে যাওয়া, আর 21 জুলাইয়ের শহীদ স্মারক ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়া প্রায় সমানুপাতিক, অন্তত আমার চাক্ষুষ অভিজ্ঞতায়। ইতিহাসের গতিপথ ধরে বিজেপিও কি একদিন এই জায়গা নিতে পারবে? তার জন্য কিন্তু তাদের বহু পথ হাঁটতে হবে। বিজেপির কাছে দিল্লি মুঠোবন্দি হতে পারে, কিন্তু বাংলা বহুত দূর!


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    আব্বাসের সমর্থকরা কি আব্বাসকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ রূপে দেখতে চাইবেন?

    শিল্পীর শিল্প কালোত্তীর্ণ হয় মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় সরকারের দেওয়া রাষ্ট্রীয় খেতাবে নয়।

    বোম্বে বন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে স্প্যানিশ ফ্লু যা পরে বোম্বে ফ্লু নামে পরিচিত হয়।

    পোশাক দেখে অপরাধী চিনে ফেলা ক্ষমতাসীনই, তার মতানুসারে চালাতে চায় সকলকে।

    কাজ দেয় না সরকার, চাকরি হবে কীসে?

    পুরুষ সদস্যের মুখাপেক্ষী না থেকে, আর্থসামাজিক স্বাবলম্বনকে বুঝি 'ভিক্ষাবৃত্তি' বলে?

    ‘শহীদ স্মরণে’ বাজিমাত বাম-তৃণমূলের, নিঃস্ব বিজেপি!-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested