×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • ক্ষমতাহীন দায়িত্ব বনাম দায়িত্বহীন ক্ষমতা

    বিতান ঘোষ | 08-05-2020

    প্রতীকী ছবি

    45 দিন হয়ে গেল, প্রধানমন্ত্রী কথা রাখেননি দেড় মাস তিনি দেশবাসীর সামনে দুর্ধর্ষ মহামারীর বিরুদ্ধে যৌথ লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছিলেন কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই যৌথ লড়াইয়ের কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না উল্টে, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইতে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা যখন পারস্পরিক সমন্বয় বজায় রেখে কাজ করে চলেছেন, সেই সময় যূথবদ্ধতা'-র সূত্রধর এবং তাঁর সরকারই ঘটনাপ্রবাহ থেকে উধাও করোনা মোকাবিলার দায়ভার রাজ্যগুলির কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার

     

    করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাজ্য সরকারগুলিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে রাজ্যগুলির আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে জিএসটি থেকে প্রাপ্ত অর্থ অথচ, দেশে রাজকোষ ঘাটতির কারণ দেখিয়ে গত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসের জিএসটি বাবদ প্রায় 30 থেকে 40 হাজার কোটি টাকা রাজ্যগুলির হাতে কেন্দ্রীয় সরকার তুলে দেয়নি 2017 সালে সারা দেশে জিএসটি লাগু হওয়ার পর, রাজ্যগুলি আগের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী থেকে অপ্রত্যক্ষ কর আদায় করতে পারছে না এই ব্যাপারে তারা কেন্দ্রীয় সরকারের মুখাপেক্ষী কিন্তু এই দুঃসময়ে যখন রাজ্যগুলির হাতে আরও বেশি করে অর্থ জোগান দেওয়ার প্রয়োজন, সেই সময় রাজ্যের প্রাপ্য লভ্যাংশ দুই মাসের উপর আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার প্রথম পর্বের লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন রাজ্যের 'State Disaster Response Mitigation Fund'-17287 কোটি টাকা মঞ্জুর করেছিলেন কিন্তু বহু রাজ্যের অভিযোগ, এই টাকার অগ্রিম অংশটুকু বাদ দিয়ে সিংহভাগ টাকা তাদের কাছে আসেনি তাদের আরও অভিযোগ, মহামারীর মোকাবিলায় দেশের সব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য এই পরিমাণ টাকা নেহাতই অপ্রতুল

     

    পশ্চিমবঙ্গের মতন অনেক রাজ্যের আয়ের আর দুটি উল্লেখযোগ্য উৎস হল মদ বিক্রির থেকে পাওয়া আবগারি শুল্ক আর পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের উপর করের থেকে রাজ্যের অংশ। লকডাউনের কারণে প্রায় দেড় মাস মদ বিক্রি সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। গণ পরিবহন বন্ধ থাকায় পেট্রো-পণ্যের বিক্রিও তলানিতে। ফলে রাজ্যগুলির আর্থিক অবস্থা করুণ।

     

    করোনা মোকাবিলায় জনতা কার্ফুর মাত্র 3 দিন আগেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক নাই নাই ভয়' বলে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছিল অথচ 23 মার্চ, মাত্র 4 ঘণ্টার নোটিসে যেভাবে দেশের সর্বত্র গণ পরিবহন ব্যবস্থাকে স্তব্ধ করে দেওয়া হল, তাতে তাদের পরিকল্পনার অভাব ও হঠকারিতাই প্রকট হল প্রায় দেড় মাস অর্ধভুক্ত আশ্রয়হীন হয়ে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর ব্যাপারটাও পুরোপুরি রাজ্যের হাতেই ছেড়ে দিয়েছে কেন্দ্র। রাজ্যের অনুরোধে কয়েকটি ট্রেন চালানো ছাড়া দিল্লির কোনও ভূমিকা থাকছে না গোটা প্রক্রিয়াটিতে।

     

    লকডাউন ক্রমে দীর্ঘতর হচ্ছে দেশের স্তব্ধ হয়ে যাওয়া অর্থনীতির চাকাকে ধীর লয়ে হলেও ঘোরানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় সরকার আর সেইজন্যই গোটা দেশকে চারটি ভাগে বিভক্ত করে, কন্টেনমেন্ট জোন বাদে বাকি তিনটি ক্ষেত্রে কিছু কিছু ব্যাপারে ছাড় দেওয়া হয়েছে রাজ্যের কোন এলাকা কোন জোনে থাকবে, তা নির্ধারণ করার দায়িত্ব রাজ্যগুলির হাতে দেওয়া হলেও, বহুসময় রাজ্য আর কেন্দ্রের মত পরস্পরবিরোধী হয়ে উঠছে কেন্দ্র প্রদত্ত নয়া বিধিবিধান রূপায়ণ করতে গিয়ে আতান্তরে পড়তে হচ্ছে রাজ্যগুলিকে পশ্চিমবঙ্গেই যেমন সমগ্র উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলাকে রেড জোনে রাখা হলেও বাণিজ্য সীমান্তগুলিকে খুলে রাখা হচ্ছে অথচ, এই ব্যাপারে রাজ্যগুলিকে সাহায্য বা পরামর্শ দেওয়া দূরে থাক, বিরোধী শাসিত রাজ্যে রীতিমতো রেফারির ভূমিকা পালন করছে কেন্দ্র

     

    পাঞ্জাবে ফসল কাটা থেকে শুরু করে সুরাতে হিরে জহরত শিল্প, কেরালায় নির্মাণ ও পর্যটন – দেশের বিভিন্ন রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কাণ্ড অন্য রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর নির্ভরশীল। দেশের খাদ্য সুরক্ষা আইনকে হাতিয়ার করে লকডাউন পর্বে যদি এই শ্রমিকগুলোর মুখে দু'বেলা দু'মুঠো খাবার ও মাথা গোঁজার একটা আস্তানার বন্দোবস্ত কেন্দ্র করত, তাহলে হয়তো তাঁদের বাড়ি ফেরার তাড়না এত প্রকট হত না এই দায়িত্বটুকুও রাজ্যগুলির হাতে ঠেলে দেওয়ায় যে অব্যবস্থা তৈরি হল, দেশের শিল্পক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য এক্ষেত্রে, দেশের প্রাক্তন অর্থসচিব অরবিন্দ মারিয়ারন এবং সিআইআই-এর অধিকর্তা চন্দ্রজিৎ ব্যানার্জির বক্তব্য, যতদিন না এই পরিযায়ী শ্রমিকদের একটা বড় অংশ তাদের কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসছে, ততদিন উৎপাদনে গতি আসবে না শিল্পমহলের একটা অংশের আশঙ্কা, এতদিন সংসদে আটকে থাকা লেবার বিল নিয়ে নাড়াচাড়া করতে পারে কেন্দ্র, যাতে পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজ পাওয়ার স্বল্প নিশ্চয়তাটুকুও কেড়ে নেওয়া হতে পারে তাই চন্দ্রজিৎ বাবুদের মত হল, কেন্দ্রের উচিত ছিল পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় পরিষেবাটুকু দেওয়া এবং এখনই ঘরে ফিরতে বাধ্য না করা

     

    পলাশির যুদ্ধে জয়লাভের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের মনোনীত নবাবের কাছ থেকে বার্ষিক রাজস্বটুকু বুঝে নিত বাকি কোনও প্রশাসনিক দায়ভার তারা নিত না অনেক ঐতিহাসিক এই ঘটনাকে দায়িত্বহীন ক্ষমতা' আর ক্ষমতাহীন দায়িত্ব'- এই লব্জ দুটি দিয়ে ব্যাখ্যা করেছিলেন আজ দেশের প্রধানমন্ত্রীর মনের কথায়' দেশের পরিযায়ী শ্রমিক কিংবা কাজ হারানো মানুষদের জন্য যথেষ্ট সহানুভূতির প্রকাশ আমরা দেখছি কিন্তু দেশের কেন্দ্র অভিমুখী যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্রীয় সরকারের যে দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল, সেই দায়িত্বই কেন রাজ্যগুলিকে পালন করতে হচ্ছে? সেই দায়িত্ব পালনে যে পরিমাণ অর্থ ও পরিকাঠামো প্রয়োজন, অনেকক্ষেত্রে মিলছে না সেটাও তাই মদ বিক্রি থেকে প্রাপ্ত রাজস্বেই ভরসা করছে রাজ্যগুলি প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর প্রশাসন তাদের কেন্দ্রীয় ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে এই মহামারীর মোকাবিলা করার পাশাপাশি, তাদের আইনগত এবং নৈতিক দায়িত্বও পালন করলে পরিস্থিতি এই রকম হত না।

     


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    সরকার বিরোধী মত উঠে আসাতেই কি মন্ত্রীর কাছে ‘সাম্রাজ্যবাদী’ ইন্টারনেট?

    অহোম জাতীয়তাবাদে ভর করে আজ হিমন্তরা উচ্চপদে, আর কত মানুষ অসমের অ-সম রাজনীতির বলি হবে?

    আইনি ফয়সালা আদালতের অপেক্ষায়, কিন্তু নৈতিকতার পাঠ অসম্পূর্ণ রেখে কোন শিক্ষা দেবেন অঙ্কিতা

    প্যালেস্টাইনে আবারও নরমেধ যজ্ঞে কতটা নজর দিতে পারবে মহামারীতে বিপর্যস্ত দুনিয়া?

    বাংলার ভোটের ফল বিজেপি বিরোধী শিবিরে আশা জাগালেও বিরোধী ঐক্য এখনও দূর অস্ত।

    বাঙালির ঘরের উমা যে আটপৌরে শাড়ি পরে, জীবনযুদ্ধে লড়ে যেতে পারে, সমাজের শত শত দুর্গা যে এভাবেই বাঁচে।

    ক্ষমতাহীন দায়িত্ব বনাম দায়িত্বহীন ক্ষমতা-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested