×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • ইন্টারনেটের অধীশ্বর হতে বিধি আনছে সরকার

    বিতান ঘোষ | 09-03-2021

    প্রতীকী ছবি।

    ‘If liberty means anything at all it means the right to tell people what they do not want to hear.’

    বিখ্যাত অ্যানিমাল ফার্ম’-এ এমন কথাই বলে গিয়েছিলেন জর্জ অরওয়েল। এখানেই ইতি নয়, অরওয়েল তাঁর অভ্রান্ত ভবিষ্যৎ দর্শনে রাষ্ট্রের নজরদারি কেমন হতে পারে, তার অনুপুঙ্খ বর্ণনা রেখে যান আরও এক কালজয়ী উপন্যাস "1984'-এ।



    রোগ সারানোর পাচন খেতে যতই তেঁতো হোক, তা কোনওক্রমে গলাধঃকরণ করাই যেমন বুদ্ধিমানের কাজ, তেমনই অপ্রিয় সত্য কথা যতই কর্কশ হোক, তা সোচ্চারে বলে যেতে পারাই তো স্বাধীনতার অন্যতম শর্ত!



    সাম্প্রতিক-অতীতে কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করে গ্রেটা থুনবার্গ টুইট করলে, দেশের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে মন্ত্রীসান্ত্রীকে ময়দানে নামতে হয়েছিল! দিশা রবির ঘটনাও কারও অজানা নয়। এসব থেকে শিক্ষা নিয়েই এবার ইন্টারনেটের পায়ে বেড়ি পরানোর উদ্যোগ নিল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ এক সর্বভারতীয় দৈনিককে জানিয়েছেন যে, সরকার মুষ্টিমেয় কিছু তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার ইন্টারনেট সাম্রাজ্যবাদমেনে নেবে না।



    গত 25 ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের তরফে একটি নির্দেশিকায় বলবৎ হয় নতুন তথ্যপ্রযুক্তি আইন। নতুন আইনে মূলত OTT (Over The Top) প্রযুক্তির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কোনও বৈদ্যুতিক তার কিংবা বেতার তরঙ্গ ছাড়াই এক স্থান থেকে অন্যত্র যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। দেশে এই OTT প্রযুক্তির তিনটি স্তরেই লাগাম পরাতে চেয়েছে সরকার।



    প্রথমত, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামের মতো সোশাল মিডিয়ায় কোন কোন বিষয়গুলি আপত্তিকর হিসাবে গৃহীত হবে, তার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে যৌনতা, মানহানিকর মন্তব্য, শিশুদের প্রতি যৌন আচরণ ইত্যাদি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিশেষ কোনও ধর্ম বা সম্প্রদায়কে হেয় করার বিরুদ্ধে কোনও আইনি নিদান এখানে বলা হয়নি। অথচ, এই দেশে সাইবার ক্রাইমের সিংহভাগ জুড়েই থাকে এমন ঘটনা

     


    দ্বিতীয়ত, অ্যামাজন, নেটফ্লিক্স-এর মতো অনলাইন মুভি প্ল্যাটফর্মগুলির কাহিনি ও বিষয়বস্তু জরিপ করে নিতে চেয়েছে সরকার। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনও সিনেমার বিরুদ্ধে কোনও ব্যক্তি অভিযোগ আনলে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করবে সরকার



    তৃতীয়ত, নতুন আইনে অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলিও সরকারের শ্যেনদৃষ্টির বাইরে নয়। কোনও খবরে যৌন ইঙ্গিত বা অবমাননাকর কিছু থাকলেই কোনও ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যম নিজে কিংবা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সেই অভিযোগের তদন্ত চালাতে পারে। তবে, এই কমিটিকে সরকারের অনুমোদন পেতে হবে। আর পরিস্থিতি গুরুতর হলে সরকার তদন্ত এবং বিচারপ্রক্রিয়া নিজের হাতে তুলে নেবে। বিভিন্ন মন্ত্রক থেকে 8 জন সদস্য নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হবে



    দেশের মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার একচেটিয়া বাজার ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। সেখানে অনলাইন পোর্টালগুলোর অর্থনৈতিক ভিত্তি সংবাদ চ্যানেলগুলির মতো শক্তপোক্ত না হলেও, তাদের অনেকেরই প্রতিষ্ঠান-বিরোধী বক্তব্যে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে সরকারকে। তাই কি তড়িঘড়ি তাদের মুখ বন্ধ করতেই এত আয়োজন? এতকাল প্রিন্ট মিডিয়ার ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা ছিল, তার দ্বিগুণ নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হচ্ছে ডিজিটাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে



    মন্ত্রী বলছেন, ‘যারা সরকারের সমালোচনা করছেন বা সরকারকে জ্ঞান দিচ্ছেন, তাঁরা তাদের পরিচয় প্রকাশ করুন।'

     


    গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ শাসকের ভুলের গঠনমূলক সমালোচনা করবে, সেটাই তো দস্তুর! কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তার নাম, পরিচয় প্রকাশ না করেও এই কাজ করে যেতে পারে। দেশের সংবিধান তো তাদের এর জন্য রক্ষাকবচ দিয়েছে। তাছাড়া একক ব্যক্তির হাতে এতটা ক্ষমতা তুলে দিলে, সেই ব্যক্তি যে বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করবেন না, এমন নিশ্চয়তা তো নেই



    এখন প্রশ্ন হচ্ছে, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটারের বিরুদ্ধে এত গোঁসা কেন মন্ত্রীসাহেবের? এই হোয়াটসঅ্যাপ তো এই এতকাল অবধি সরকারের সহায় ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সাহায্যে আমরা যে কোনও খবরকে সত্য প্রতিপন্ন করতে পারি।' টুইটার সহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতেও বেতনভুক পেশাদার কর্মী নিয়োগ করে সরকারের গুণগান গাওয়ানো হয়েছে এই কয়েকদিন আগে পর্যন্তও। তবে হঠাৎ ইন্টারনেট সাম্রাজ্যবাদ’-কে ডরাচ্ছে কেন সরকার?



    অভিজ্ঞমহল বলছে, চলমান কৃষক আন্দোলন নিয়ে দেশের একটা বড় অংশ এবং আন্তজার্তিক মহল যেভাবে সোশাল মিডিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলছে, তাতে কিছুটা ব্যাকফুটে সরকার। টুইটার ট্রেন্ডিং-এ একদম ওপরের দিকে থাকছে কৃষক আন্দোলন। তাই এই ভুবনায়িত মাধ্যমেও সাম্রাজ্যের ভূত দেখছে সরকার



    কিন্তু এই সাম্রাজ্যবাদ রোধে কি কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার? মন্ত্রী বলছেন, ‘দেশের সভ্যতা, সংস্কৃতির প্রতিফলন ইন্টারনেটের দুনিয়ায় উঠে আসছে না।' সরকার তাই সেই লক্ষ্যেই ইন্টারনেট-দুনিয়াকে পরিচালিত করতে চায়!



    মানে নয়া সাম্রাজ্যবাদের চাবিকাঠি থাকবে সরকারের কাছে। ব্যক্তির ব্যক্তিগত পরিসরের যবনিকা সরিয়ে উঁকি মারবে রাষ্ট্র! আপনি-আমি টুঁ শব্দটিও করতে পারব না। প্রেমিকাকে প্রেম নিবেদন কিংবা সরকারকে গালাগাল, আপনাকে স্মরণে রাখতে হবে, ‘Big boss is watching you.’... রাষ্ট্র কিন্তু সব দেখছে



    অতএব, সাধু সাবধান!


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    স্বাধীনতার 75 তম বছরে যে গণ-আন্দোলন প্রতিস্পর্ধী শাসককে নতজানু করল, সেই আন্দোলনেরও প্রেরণা মহাত্মা।

    ছিন্নমূলের দেশ নেই, সমাজ নেই, আছে জেদ আর কল্যাণকামী রাষ্ট্রের তাচ্ছিল্য ও করুণা।

    দুর্গাপুজোয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রচারে মত্ত উচ্চবর্ণের হিন্দু বাঙালির ঈদ নিয়ে আপত্তি ঠিক কোথায়?

    সঙ্গীতের মহাকাশে ধ্রুবক হয়েই থাকবেন সন্ধ্যা-তারা।

    শীতের ফুটিফাটা শরীরেও প্রেম আসে, আসে দ্রোহও, শাসক তাই বসন্তকে ভয় পায়।

    কৃষ্ণের মোহনবাঁশিতেই যখন হিরণ্যকশিপুরা পরাভূত, তখন বিষ্ণুর নৃসিংহ অবতারে আসার কীই বা প্রয়োজন?

    ইন্টারনেটের অধীশ্বর হতে বিধি আনছে সরকার-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested