বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীর চাকরি গেছে। মন্ত্রী-কন্যার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এই যে, 2016 সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উপযুক্ত নম্বর না পেয়েও তিনি অনায়াসে প্রথম কুড়িজনের মেধাতালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছিলেন এবং বাড়ি থেকে ঢিলছোঁড়া দূরত্বের একটি স্কুলে চাকরিও পেয়ে গিয়েছিলেন।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে অঙ্কিতার চাকরিটি গেছে, তার পাঁচ বছরের (2017 সালে নিয়োগের সময় থেকে 2022 সালের মে মাস পর্যন্ত) বেতনও ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসএসসি নিয়োগ রহস্যের আগামুড়ো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর দ্বারা উদঘাটিত হওয়ার আগেই এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা পড়া সহ বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই মন্ত্রীকন্যাকে এমন শাস্তি দেওয়ার ন্যায্যতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকে মনে করছেন এসএসসি নিয়োগ-তদন্ত নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের শিথিল মনোভাবের কারণেই বিচারবিভাগকে অতিসক্রিয় হয়ে ‘অভিযুক্ত’দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।এর বাইরেও যে বৃহত্তর প্রশ্নটি উঠে গেল, তা হল মূল্যবোধ ও নৈতিকতার। কালেভদ্রে আদালতের পর্যবেক্ষণে এই দুটি বিষয়ের উল্লেখ থাকলেও, আদালতের কাজ তার আইনি সীমার মধ্যে থাকা যে কোনও বিবাদ বিসংবাদের আইনগত নিষ্পত্তি করা। কিন্তু ব্যক্তির নৈতিকতার দায়িত্ব নেওয়া আদালতের কাজ নয়, এক্তিয়ারও নয়।
এই নৈতিকতার প্রসঙ্গেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘অঙ্কিতা কোন অসদুপায় অবলম্বন করেছেন এবং তাঁর কী শাস্তি হবে, তা বিচার এবং সময়সাপেক্ষ বিষয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় নম্বর না পেয়ে, ইন্টারভিউতে না বসেও চাকরি করে যাওয়ার মধ্যে যে আত্মগ্লানি আছে, তা একজন শিক্ষক হিসাবে অঙ্কিতার মধ্যেও থাকা উচিত ছিল।’ তবে অধ্যাপক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতোই অভিজ্ঞমহলের একটা অংশ মনে করছেন, অঙ্কিতা অধিকারীর এই ঘটনাটি হিমশৈলের চূড়ামাত্র। রাজ্যে এমন অনেক অঙ্কিতাই এভাবে চাকরিতে বহাল রয়েছেন।
আরও পড়ুন:বাপের দায়ে মেয়ের ঘাড়ে খাঁড়া
অঙ্কিতা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক। ক্লাসঘরে তিনি নিশ্চয়ই পড়ুয়াদের গণতন্ত্র, বহুত্ববাদ, রাজনীতিতে নৈতিকতা ইত্যাদি তাত্ত্বিক বিষয়ের পাঠ দিতেন। একজন শিক্ষক তো শুধু পড়ুয়াদের মনে পাঠ্য বিষয়ের প্রতিই আগ্রহ তৈরি করেন না, একইসঙ্গে তাঁর নীতিবোধ, জীবনচর্চাও পড়ুয়াদের অনুপ্রাণিত করে। অঙ্কিতা এবং তাঁর মন্ত্রী-পিতা নিশ্চয়ই এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন। আইনি এবং রাজনৈতিক লড়াই চালাবেন হৃত চাকরি ফিরে পাওয়ার জন্য। যদি হৃত চাকরি অঙ্কিতা ফিরেও পান, তিনি কি নৈতিকতার সেই পোক্ত জমিটা আর কখনও ফিরে পাবেন, যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি অবাধ্য ক্লাসঘরকে শান্ত করতে পারবেন, কিংবা জীবনপথে পড়ুয়াদের অসদুপায় অবলম্বন না করার পরামর্শ দিতে পারবেন?
সোশাল মি়ডিয়া আর রাজনীতিতে রামের একচ্ছত্র আধিপত্য় হরণ করে এবার আবির্ভূত হলেন কৃষ্ণ!
শুধু আনমনেই বলে উঠেছি, ‘স্বপনদুয়ার খুলে এসো, অরুণ-আলোকে এসো স্তব্ধ এ চোখে...।'
পুরুষ সদস্যের মুখাপেক্ষী না থেকে, আর্থসামাজিক স্বাবলম্বনকে বুঝি 'ভিক্ষাবৃত্তি' বলে?
লোকাল ট্রেনের অপেক্ষায় হয়রান মানুষের প্রশ্ন, করোনা কি ট্রেনে চড়তে ভাসবাসে আর বাসে ওঠে না?
এই দ্বীপভূমি ডুবলে ক্ষমতা ও আভিজাত্যের সাতমহলাও সুরক্ষিত থাকবে না।
আচ্ছা মৃত্যুর পর কী? মৃত্যুতেই কি সবকিছুর পরিসমাপ্তি নাকি, তার মধ্যে থেকেই সৃষ্টির বীজ উপ্ত হয়?