বহুদিন পর লোকাল ট্রেনে চড়ে বসলাম। পরিচিত দুলুনি, ধাতব চাকার সঙ্গে লাইনের ঘর্ষণজনিত শব্দের সঙ্গে আলাপ হল অনেকদিন পর। গত কয়েকমাসে কিছু লোকাল ট্রেন চলাচল করলেও, সেগুলো তো ছিল ইস্পেশাল। বাবা রে বাবা, কী ভীষণ কড়াকড়ি! ছোটবেলায় বড় ক্লাবের সামনে ‘কেবল সভ্যদের জন্য’ লেখা থাকলে ভাবতাম, অসভ্যরা কি এখানে আসতে পারবে না? কেননা, ছেলেবেলায় দুষ্টুমি করলে ‘অসভ্য’ অভিধাটা মাঝে মধ্যেই জুটত। তাই ওই লেখায় আমি ভীষণ বিচলিত হতাম। বহুদিন পর এই বুড়ো বয়সে কথাটা আবার মনে পড়ল, যখন শুনলাম লোকাল ট্রেনেও সক্কলের প্রবেশাধিকার মিলছে না। এখন অবশ্য এসব ঝামেলা থেকে মুক্তি মিলেছে। মুখে একটা মাস্ক এঁটে ফেললেই টিকিট কেটে উঠে পড়া যাচ্ছে চলমান সংসারে।
বহুদিন পর সেই সংসারে উঠে সবকিছুই একটু নতুন লাগল। দৈনন্দিন জীবনের বীরস লোকাল ট্রেন সফর কয়েক মাসের বিরতি শেষে যে এত মধুর হবে, কখনও তা ভাবিনি। ফিশপ্লেটে ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ করে সে স্টেশনে আসার পর উঠে বসলাম তার ওপরে। প্রথমে কিঞ্চিৎ জড়তা, বসার আসনের মাঝে বড় বড় ঢ্যাঁড়া এড়িয়ে বসলাম একটা কোণে। ট্রেন ছাড়ল, মনে হল যেন 'এলেম নূতন দেশে'। মফঃস্বলে থেকে প্রয়োজনের তাগিদেই শহরে যেতে হয়েছে শেষ কয়েক মাসে। লোকাল ট্রেনকে এড়িয়েই বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে পৌঁছতে হয়েছে। কিন্তু, গ্রামের দিকে যাওয়া হয়নি। যে সীমানায় গিয়ে হঠাৎ ছোট-বড় বাড়িঘর ছেড়ে মাটির কুঁড়েঘর, খোলা মাঠ, মেঠো গন্ধের সন্ধান মেলে, সেই সীমানাটাকে বহুদিন দেখা হয়নি। তার দেখা মিলল এতদিন পরে। দেখলাম সোনালী আমন ধানে ভরে আছে দিগন্তবিস্তৃত মাঠ। নদী আর জলার ধারে কিছু কাশফুল তখনও ট্রেনের হাওয়ায় দুলে উঠছিল। ফুল শার্ট আর শাড়ি পরে গ্রামের মেয়েরা আলপথ ধরে মাঠের কাজে যাচ্ছে। এই দৃশ্যপটের বুক চিরে এগিয়ে চলেছে ট্রেন। আমি একাগ্রচিত্তে যেন এই পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধ গ্রহণ করছিলাম।
বড় অভিমান করে আছে গ্রাম। যেন অব্যক্ত স্বরে বলছে, এতদিনে মনে পড়ল? মনে পড়েনি কি আর? মাস্ক, স্যানিটাইজারে দমবন্ধ হওয়া নগরজীবন থেকে মুক্তি পেতে ওই বিস্তৃত প্রাঙ্গন, ধানক্ষেত, রেলসাঁকোর নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া অনামী নদীগুলোর কথা খুব মনে পড়ত। কিন্তু যাওয়া হয়নি, যাওয়ার উপায়ও ছিল না। লোকাল ট্রেন এতদিন পরে আবার ফিরিয়ে দিল সেই স্মৃতিকে। তবু, আক্ষেপ ঘুচল না। নাতিদীর্ঘ ট্রেন সফরে দেখা মিলল না কোনও হকার বন্ধুর। যাদের জিনিস বিক্রি করার আদবকায়দায় মুগ্ধ হতাম, যাদের গান-গল্প-ছড়ায় মনে হত, এরা যে কোনও মার্কেটিং এজেন্সিকে বলে বলে গোল দিতে পারে, তাদেরই তো দেখা নেই। মনখারাপ রইল, রইল কিছু ভাললাগার রেশও। আমাদের ভেঙে যাওয়া দুনিয়াটাকে যেন ফের সমান্তরাল দু'টো লাইন দিয়ে বেঁধে দিল লোকাল ট্রেন। ট্রেনের আগে ‘লোকাল’ শব্দটা যতই থাকুক না কেন, স্মৃতিতে, আটপৌরে নানা গল্পে এই ট্রেন বিশ্বজনীন।
যে পথে গিয়েছিলাম, ফিরতে হল সে পথ ধরেই। বড় বাড়ি, দামি আবাসনের মাথা ছাড়িয়ে হেমন্তের মৃদুমন্দ হাওয়ায়, আন্দোলিত কাশবনের মাঝ দিয়ে এই সফরটা মনে গেঁথে গেল। যেন কাশবনের ওপার থেকে নিশ্চিন্দিপুরের কোনও দুর্গা অনুযোগ করল, এতদিন পর সেদিক দিয়ে গেলাম বলে। ছুটন্ত ট্রেন থেকে তাকে দেখে কোনও অপু যেন বলছিল, ‘তুই রাগ করিস নে দিদি। আমি আবার ফিরে আসব তোর কাছে’। কাজের সন্ধানে শহরে চলে আসা অপুরা গত সাত-আট মাসে গ্রামে ফিরতে পারেনি। লোকাল ট্রেনে আমার সঙ্গী হল তারা। সাধারণ কিছুর মধ্যে এমন অসাধারণত্বের স্বাদ অনেকদিন পরে পেলাম। ভাগ্যিস, মহামারীটা এসেছিল। ভাগ্যিস, সব কিছুতে আগল দিয়ে সে বুঝিয়ে দিল আগলহীনতায় কতটা সুখ।
রাজনৈতিক দলকে দানের নামে আর্থিক অনাচার, অস্বচ্ছতার লজ্জাজনক কাহিনি।
সোশাল মি়ডিয়া আর রাজনীতিতে রামের একচ্ছত্র আধিপত্য় হরণ করে এবার আবির্ভূত হলেন কৃষ্ণ!
বেআইনি পথে উপার্জিত বিপুল অর্থের বখরা নিয়ে বিরোধের নিষ্পত্তি রামপুরহাটের মতো হিংসার পথেই হবে।
সংখ্যাগুরুর জন্য,তাঁদেরই দ্বারা শাসিত ভারতবর্ষের একজন নাগরিক হিসাবে খুরশিদের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী
এ দেশে যারা এখনও হিন্দু-মুসলিম মিলনের কথা বলে তারাই সিকিউলার। এটা সেক্যুলারের অপভ্রংশ রূপ।
তামাদি হয়ে যাওয়া দেড়শো বছরের দেশদ্রোহিতা আইনকে কি এই দেশে নিষিদ্ধ করা হবে?