×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • শাসন আসলে বড়লোকের, সরকার নিমিত্ত মাত্র

    রিম্পা বিশ্বাস | 20-02-2022

    নিজস্ব ছবি

    দু'বছর আগেও আপনি যে রাস্তা হেঁটে পার করতেন আজ সেখানে আপনাকে অটোতে চাপতে হয়। দেখে মনে হয় এটাই তো উন্নয়ন! এভাবেই তো এগিয়ে যাব আমরা! সত্যিই কি যাচ্ছি? আসলে  বায়োপলিটিক্সের (Biopolitics) এটাই কাজ! আপনার কাছ থেকে আপনার সবোর্চ্চ শ্রম আদায় করার জন্য এমন এক অর্থনৈতিক এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার সৃষ্টি করে যা আপনার কাছে মনে হবে আরামদায়ক কিন্তু রাষ্ট্রকে দেবে মুনাফা। গত সাত বছরে ভারত এরকম অনেক মুনাফা দেখে আসছে। বুলেট ট্রেন, সেন্ট্রাল ভিস্তা, উঁচু মূর্তি এসব তো আর্থিক মুনাফারই প্রতিফলন। দেশে আসলে চলছে ধনকুবেরদের শাসন প্লুটোক্র্যাসি (Plutocracy)

     

    তবে এই আর্থিক মুনাফা কার বলুন তো? গ্লোবাল হাঙ্গার ইন্ডেক্সে ভারত যেখানে 101-এ নেমেছে সেখানে কী ভাবে বলা যায় যে দেশের আর্থিক উন্নয়ন হয়েছে? দশের উপকার না হলে কি শুধু সরকারের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন শিল্ললপতিকে নিয়ে দেশ? সমীক্ষা বলছে দেশের 58 শতাংশ সম্পদ রয়েছে 10 শতাংশ মানুষের কাছে। বর্তমান সরকার এই দশ শতাংশের জন্যই সমস্ত নীতি নির্ধারণ করে থাকেন এমনটাই আশঙ্কা করা হচ্ছে। অর্থাৎ দেশে বড়লোকের শাসন চলছে। বড়লোকের শাসন গণতন্ত্রের জন্য সঙ্কটজনক। 

     

    একথা সত্য যে বিত্তশালীদের উদ্যোগের কারণেই দেশের বহু সংখ্যক মানুষের কর্মের সংস্থান হয়। তবে দেশের শাসন ব্যবস্থাই যদি এই বিত্তশালীদের কাছে চলে যায় তবেই তো মুশকিল। গত সাত বছরের মোদী সরকারের প্রকল্প ও পরিকল্পনা কিন্তু এই কথাই বলছে। নোট বন্দি(Demonetisation) হোক অথবা জিএসটি(GST), দূর্ভোগের শিকার হয়েছে সাধারণ মানুষ। অপুষ্টির শিকার হয়েছে সাধারণ মানুষ অন্যদিকে  আম্বানি আদানিরা ফুলে ফেঁপে উঠেছে। বিজয় মালিয়া, ঋষি আগরওয়ালদের মতো ব্যবসায়ীরা যখন ঋণ ফাঁকি দিয়ে বিদেশে পালায় তখন মোদী সরকার তাঁদের রক্ষাকবচ হয়ে দাঁড়ায়। 

     

    দেশের নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের প্রচারে এই ব্যবসায়ীদের অর্থাৎ কর্পোরেট গোষ্ঠীর দান যত বাড়ে সরকারও এই গোষ্ঠীর প্রতি ততটাই উদারতা দেখায়। নির্বাচনী বন্ডের দুর্নীতির সঙ্গে বিজেপির দলের রাজনৈতিক সাফল্যের কথা এখন তো অঘোষিত সত্য। একইভাবে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দশ শতাংশ বিত্তশালী মানুষের শোষণযন্ত্রে পরিণত করাটাও অঘোষিত সত্য। বাজেট (Budget 2022) অধিবেশনে কর্পোরেট ট্যাক্সের (Corporate Tax) পরিমাণ কমিয়ে এর প্রমাণ দিয়েছেন স্বয়ং অর্থমন্ত্রী। এখানেই শেষ নয় দেশকে পুরোপুরি ডিজিটাল ইকোনমির(Digital Economy) দিকে ঠেলে দিতে চাইছে মোদী সরকার। খাবার জলে স্বচ্ছতা না থাকলেও মোবাইলে ডেটা প্যাকেজ আবশ্যিক করে তোলাই এই সরকারের আসল উদ্দেশ্য। এতেও আখেরে লাভ সেই টেলিকম কোম্পানিগুলির। ডিজিটাল শিক্ষা, ডিজিটাল চিকিৎসায় সাধারণ মানুষ যখন অভ্যস্ত হয়ে পড়বে তখনই তড়িৎ গতিতে বেড়ে যাবে দৈনিক ডেটা প্যাকেজের দাম। সাদারণ মানুষের নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা তাই বলে। দুর্বলকে আরও দুর্বল এবং সবলকে শক্তিশালী করার এ এক নিদারুণ ফাঁদ। 

     

    আরও পড়ুন:হাতে নয়, ভাতে মারার কৌশল

     

    সংবিধানের নির্দেশমূলক নীতিতে (Directive Principal of State Policy) যে জনকল্যাণকর রাষ্ট্রের (Welfare State) কথা বলা হয়েছে বর্তমান সরকার ক্রমশ তার থেকে দূরে সরে আসছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এই সরকারের উপহার কেবলমাত্র কিছু অনুদান ও কৃষিক্ষেত্রে ভর্তুকি। অথচ ভোটের সময় এই গ্রামের প্রান্তিক মানুষেরই হয় মোদী-শাহের বিশ্বাসযোগ্য ভোটার। নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন কোনও উল্লেখযোগ্য প্রকল্পের সূচনা হয়নি। গ্রামীণ কর্ম নিশ্চয়তা ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে ঋণ দান, গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য করা সরকারের এই দুটিই শেষ কাজ যা ইউপিএ সরকারের আমলে তৈরী। তারপরও প্রান্তিক এলাকায় নির্বাচনে বিজেপির সাফল্যের কারণ দেশভক্তি ও মোদীর জনপ্রিয়তা যা তৈরি হয় সেই সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতেঅর্থাৎ এখানেও প্রমাণিত হয় শাসক দলের কর্পোরেট নির্ভরতা। 

     

    বর্তমান সরকারের সঙ্গে দেশের বিত্তশালীদের এক অলিখিত বোঝাপড়া চলে আসছে। এই বোঝাপড়া আগে থাকলেও তার প্রভাব অর্থনীতিতে এতটা প্রকট হয়নি। মোদী সরকারের বেসরকারিকরণের নামে দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়ার এই স্বঘোষিত ইচ্ছার প্রকাশ আমরা বারবার দেখতে পাই এবং এই ইচ্ছার পরোক্ষ ফল হিসেবেই চোখে পড়ে 2015 থেকে ভারতের বিত্তশালীদের কাছে সম্পদের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। 2021-র  Forbes Magazine এ  প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের ধনকুবেরদের মধ্যে 140 জন ধনকুবের ভারতীয়, এক্ষেত্রে আমেরিকা ও চিনের একেবারে পরেই ভারতের স্থান। অর্থাৎ সম্পদ আছে কিন্তু তার সুসম বন্টন নেই এবং মোদী সরকার এই আর্থিক বৈষম্যকে কম করতে নয় বরং আরও বাড়িয়ে তুলতেই সহায়তা করে

     


    রিম্পা বিশ্বাস - এর অন্যান্য লেখা


    মানব সভ্যতায় সঙ্কট ও প্রয়োজনই সর্বদা আবিষ্কারের জন্ম দিয়েছে, কোভিড আবারও তা প্রমাণ করল। 

    একুশ যেভাবে ভাবতে শেখায়...

    হলোকস্ট স্মরণ করায় গণতন্ত্রী শাসকের সবচেয়ে ভয়াবহ স্বরূপের।

    দেশের মহানগরগুলিতে নারী সুরক্ষার জন্য গঠিত নির্ভয়া তহবিলের টাকায় শহরে শুধুমাত্র আলো দেখা যায়।

    সভ্যতা কীভাবে মানুষের পাগলামিকে ব্যবহার করেছে ?

    স্বামী বিবেকানন্দ মুসলিম অনুরাগী ছিলেন

    শাসন আসলে বড়লোকের, সরকার নিমিত্ত মাত্র-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested