×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • হাইমাস্ট আলোয় মনের অন্ধকার দূর হয় না! 

    রিম্পা বিশ্বাস | 23-02-2022

    প্রতীকী ছবি।

    আনিস খানের (Justice for Anis) মৃত্যু রহস্যের কিনারা করতে এক কদমও এগোতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন। তবে চোখে পড়ার মতো একটা কাজ করতে পেরেছে বটে! তাঁর বাড়ির কাছে একটি সুউচ্চ হাইমাস্ট আলো লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে! যেন ওই আলোর অভাবই আনিসের হত্যার কারণ। আসলে এই আলো লাগানোর কাজটি সহজে কম খরচে করা যায়, এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বেশ লোক ডেকে দেখানোও যায়। কলকাতা সহ সারা দেশ জুড়েই এই কাণ্ড চলছে। নারী নিরাপত্তার (Women Safety) অন্য দিকগুলি অবহেলিত রেখে আলো লাগানোর ঘটা চলছে।

     

    নির্ভয়া কান্ডের পর দিল্লি পুলিশের পরামর্শে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে 2018-এ নির্ভয়া প্রকল্পের (Nirbhaya Projects) সূচনা হয়। দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম আটটি শহর; দিল্লি, বেঙ্গালুরু, মুম্বাই, চেন্নাই, কলকাতা, হায়দরাবাদ, লখনউ, আমেদাবাদকে এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়। কারণ মেট্রো শহরে মহিলাদের স্বনির্ভরতা অন্যান্য শহরের তুলনায় বেশি এবং অনেক রাত পর্যন্ত তাঁদের বাইরে থাকতে হয়। নির্ভয়া প্রকল্পের মধ্যেই তৈরি হয় নির্ভয়া তলবিল, এই তহবিলের টাকাতেই দেশে নির্যাতিতাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। অর্থাৎ শুধুমাত্র আলো নয়, এই প্রকল্পের মাধ্যমে শহরের একাধিক জায়গায় সিসিটিভি বসানোর কথা বলা হয়, মহিলাদের জন্য ভ্রাম্যমাণ শৌচালয়ের ব্যবস্থার কথাও বলা হয়। 

     

    কলকাতা শহরের জন্য এই প্রকল্পে যে টাকা বরাদ্দ থাকে তা পুরসভার মাধ্যমে খরচ করা হয়। অর্থাৎ, প্রথমে কেন্দ্র রাজ্যকে টাকা পাঠায়, পুলিশের সুপারিশ অনুসারে পুরসভা প্রয়োজনীয় কাজটি করে। 2019-এ কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত এই রাজ্যের টাকার পরিমাণ ছিল 75 কোটি 70 লক্ষ। এর মধ্যে মাত্র এক কোটি 71 লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে শুধু আলোর জন্য। মিনিমাস্ট ও হাইমাস্টের আলোতে শহর আজ সত্যিই আলোকিত। তবে আলোক স্তম্ভের নীচে সিসিটিভি না থাকলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিষ্কার করে লেখা থাকে কোনও না কোনও বিধায়ক তহবিলের নাম 

     

    নির্ভয়া প্রকল্পের টাকায় কাজকর্মের বেহাল চিত্র শুধু কলকাতার নয়। বেঙ্গালুরুতেও একই হাল দেখা গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে 2019-এ প্রাপ্ত টাকার মাত্র 3 কোটি 92 লক্ষ টাকা খরচের হিসাব কেন্দ্রকে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতর। এই বছর দ্বিতীয় দফায় আবার শহরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পে রাজ্যে 100.34 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যার মধ্যে 92.58 কোটি টাকা খরচ হয়েছে। রাজ্যের তরফে বলা হয় ‘প্রকল্পের টাকা আমরা এখনও পাইনি’, আর কেন্দ্রের তরফে বলা হয় ‘প্রকল্পের টাকা সঠিক ভাবে খরচ করা হচ্ছে না’এই দু'য়ের মধ্যে থেকেই শহরে শহরে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন মেয়েরা দিল্লির নির্ভয়ার মতো চরম ঘটনা না ঘটলেও প্রতিদিনও ঘটে চলেছে পথেঘাটে মেয়েদের হেনস্থা, নিগ্রহ, যৌন পীড়ন। 

     

    আলো লাগানোর বাইরে নারী সুরক্ষার জন্য আর যা কিছু জরুরি, তার কতটা করা হচ্ছে? পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীদের আইন এবং নারীর অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা, নারী নিগ্রহের কঠিন শাস্তি সম্পর্কে গণপ্রচার করা, স্কুলে এবং পরিবারে শিশুদের সংবেদনশীলতার পাঠ দেওয়া – এই কাজগুলি কি আদৌ হচ্ছে? হাইমাস্ট আলো তো আর মনের অন্ধকার দূর করতে পারে না!

     


    রিম্পা বিশ্বাস - এর অন্যান্য লেখা


    স্বতন্ত্র ভাবনাই জন্ম দেয় নতুন সম্ভাবনার, ভারতে সমষ্টিবাদের রাজত্ব উদ্ভাবন ও নতুন পথের স্বীকৃতি দেয়

    স্বামী বিবেকানন্দ মুসলিম অনুরাগী ছিলেন

    সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বৈষম্যের শিকার হন গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী ছেলেমেয়েরা।

    খাদ্যের অতিরিক্ত সংরক্ষণ এবং তার ব্যবহারের কারণে মানুষের পাশাপাশি পৃথিবীও অসুস্থ।

    রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ বদলে দিতে পারে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সমীকরণ

    দেশের মহানগরগুলিতে নারী সুরক্ষার জন্য গঠিত নির্ভয়া তহবিলের টাকায় শহরে শুধুমাত্র আলো দেখা যায়।

    হাইমাস্ট আলোয় মনের অন্ধকার দূর হয় না! -4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested