×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • সর্ষের মধ্যেই ভূত, নজর নেই কারও

    রিম্পা বিশ্বাস | 31-12-2021

    নিজস্ব ছবি।

    সর্ষের মধ্যেই ভূত লুকিয়ে আছে! শুধু সর্ষে নয়, আলু ধান তুলো গম ডাল – যে কোনও ধরনের বীজের মধ্যেই! ভূতটা হল বন্ধ্যাত্বের ভূত। ভারতে কৃষিতে ব্যবহৃত বীজের 30 থেকে 40 শতাংশ অসফল, সেগুলো থেকে অঙ্কুরোদ্গমই হয় না। বিশেষ করে জৈব এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষের (Natural Farming) ক্ষেত্রে এটি একেবারে গোড়ার এবং অত্যন্ত গুরুতর একটি সমস্যা। আশ্চর্যের বিষয়, কৃষিতে সংস্কারের নামে বৃহৎ পুঁজিকে হাত ধরে ডেকে আনার জন্য সরকার আইন পাশ করে, কৃষকদের আন্দোলনের চাপে এক বছর পর আইন প্রত্যাহারও করে (Repealed Farm Laws), কিন্তু বীজ নিয়ে কিছু করা হয় না। দুই বছর আগে সংসদে পেশ করা বীজ সংক্রান্ত বিলটি (Seeds bill 2019 ) এখন হিমঘরে, কর্তাব্যক্তিদের নজরের বাইরে।

     

     

    সম্প্রতি গুজরাতে প্রাকৃতিক চাষের উপর জাতীয় আলোচনাচক্রে (Natural Farming summit) প্রাকৃতিক চাষের উপযোগিতা ও তার জন্য নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করা হয়েছেতাতে কৃত্রিম সার (Fertilizer) ও কীটনাশক (Pesticidal) মুক্ত চাষের কথা বলা হলেও বীজের উপর যথেষ্ট চর্চা হয়নি বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। তাঁদের মতে, আমাদের দেশে কৃষকদের স্বার্থরক্ষার জন্য প্রথম যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হল পরিকাঠামো এবংকৃষিক্ষেত্রে পরিকাঠামো যে কতটা দুর্বল তা বীজের বাজার দেখলে বোঝা যায়। হাজার বছরেরও বেশিসময় ধরে চলে আসা প্রাকৃতিক চাষ ও কয়েক শতাব্দী ধরে হয়ে আসা শিল্পজাত চাষে ফসলের উৎপাদনে পরিমাণগত পার্থক্য থেকে যায়। শিল্পজাত চাষের ক্ষেত্রে বীজের যে সমস্যা দেখা যায় সেই সমস্যা প্রাকৃতিক চাষের ক্ষেত্রে আরও বেশি করে

     

     

    বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চাষের বীজের ক্ষেত্রে যে সমস্যা দেখা যায় তা হল সময়মতো বীজের অঙ্কুরোদগম হয় না। এই সমস্যা সাধারণত সব্জি চাষে বেশি দেখা যায়। ধান চাষে দেখা যায় আরও পরে যখন ধানের শীষ বেরোয় না। এই সময় বোঝা যায় যে বীজটি খারাপ ছিল এবং যথাযথ ভাবে তৈরি করা হয়নি, অর্থাৎ বীজগুলি শংসাপত্র প্রাপ্ত (Certified) নয়। এই যথাযথভাবে তৈরি না হওয়া, অর্থাৎ বিনা শংসাপত্রের বীজে চাষের বাজার ছেয়ে গিয়েছে। কর্পোরেট সংস্থাদের তৈরি বেশিরভাগ বীজের শংসাপত্র (Self Certified) থাকে না। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বীজের ফলন না হওয়াটা স্বাভাবিক। যেহেতু আমাদের দেশে কৃষি সম্পর্কিত আলাদা কোনও আদালত নেই তাই কৃষক ও কোম্পানির মধ্যে একটা বোঝাপড়া হয়ে যায় এবং কৃষককে কোম্পানি শুধুমাত্র বীজের দাম দিয়ে দেয়। মনসান্তো (Monsanto) , কার্গিল (Cargil), দুপঁ (Du Pont), সিনজেন্টা (Syngenta),বায়ার (Bayer) ইত্যাদি মুষ্টিমেয় কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানি বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশের কৃষিতে ব্যবহৃত বীজ, সার, কীটনাশকের বাজার দখল করে ফেলেছে। 

     

    আরও পড়ুন: তিন দশকে সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি, সঙ্কটে সাধারণ মানুষ, বৈভব প্রদর্শনে ব্যস্ত প্রশাসন

     

    প্রাকৃতিক চাষের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে বীজ। কৃত্রিম বীজের পরিবর্তে কৃষকরা যাতে নিজেরাই প্রাকৃতিক উপায়ে বীজ তৈরি করতে পারে এই বিষয়টির দিকে প্রথমে নজর দিতে হবে। আজিম প্রেমজী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কৃষি বিশেষজ্ঞ অশোক কুমার সরকার জানান, এক্ষেত্রে প্রথম থেকেই কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে যা সবুজ বিপ্লবের সময় কিছুটা করা হয়েছিল তবে বর্তমানে কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রশাসনিক সংস্কৃতিতে সেরকম মনোভাব আর দেখা যায় না। প্রাকৃতিক চাষের ফলে প্রথমেই বীজের বাজারে কৃষকদের প্রাধান্য বজায় রাখতে হবে। দেশ ও রাজ্যের কৃষি সম্পর্কিত বিষয়ে উদাসীনতার প্রমাণ পাওয়া যায়, যখন আমরা দেখতে পাই প্রতিটি রাজ্যের কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক পদগুলি বছরের পর বছর খালি পড়ে থাকে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে এক তৃতীয়াংশ কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক পদ খালি আছে। কৃষকদের প্রশিক্ষণ অনেক দূরের কথা, সাধারণত চাষের ক্ষেত্রে যে প্রধান সমস্যা অর্থাৎ বীজের অঙ্কুরোদগম না হওয়া এই সমস্যারও দেশজুড়ে কোনও সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে না। আলু, ভুট্টা ও বিভিন্ন তৈলবীজের চাষের জন্য পশ্চিমবঙ্গে পাশ্ববর্তী রাজ্যের থেকে বীজ ক্রয় করতে হয়। এই পরনির্ভরশীলতা যে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেই দেখা যায় তা নয়, গোটা দেশ জুড়ে কৃষিতে এই একই চিত্র রয়েছে। 

     

     

    বীজের ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে 2019 -এ সংসদে একটি বিল (Seeds bill 2019 ) পেশ করা হয়। যেই বিল নিয়ে গত দুবছরে কোনও আলোচনা হয়নি। এই বিলের মাধ্যমে বীজের ক্ষতিপূরণে আমাদের দেশেও আমেরিকা ও অন্যান্য উন্নত দেশের মতো ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। প্রাকৃতিক চাষের ক্ষেত্রে পরিকাঠামো ও বিনিয়োগ যেমন জরুরি এই আইনটিও ততটাই জরুরি। পরবর্তী দশ বছরে কৃষিতে প্রাকৃতিক চাষ একদিকে কৃত্রিম বীজ, কৃত্রিম সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে দিতে পারে ঠিকই তবে তার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত বিনিয়োগ ও পরিকাঠামো যা এখনও সেইভাবে দেখা যাচ্ছে না। NABARD (National Bank For Agricultural Development)-র মাধ্যমে প্রতিটি জেলায় কৃষি সমবায় তৈরি করার একটি পরিকল্পনা দুবছর আগে নেওয়া হয়েছিল তার বাস্তবায়নের পদক্ষেপ এখনও পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। কিছু ছোট ছোট রাজ্য যেমন জম্মু ও কাশ্মীর ও হিমাচল নিজেদের উদ্যোগে মিশ্র কৃষির ব্যবস্থা করেছে। এক্ষেত্রে তারা কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে আনছে এবং বাজারের তৈরি বীজের ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। প্রাকৃতিক চাষের দিকে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে এটি প্রথম পদক্ষেপ বলা যেতে পারে। 

     


    রিম্পা বিশ্বাস - এর অন্যান্য লেখা


    হিজাব বা অন্য পোশাক নয়,মৌলবাদী শাসকদের আসল টার্গেট নারীর শিক্ষার অধিকার ও স্বাধীনতা।    

    হলোকস্ট স্মরণ করায় গণতন্ত্রী শাসকের সবচেয়ে ভয়াবহ স্বরূপের।

    ধর্মীয় বিশ্বাস কখনওই জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে না

    দেশের মহানগরগুলিতে নারী সুরক্ষার জন্য গঠিত নির্ভয়া তহবিলের টাকায় শহরে শুধুমাত্র আলো দেখা যায়।

    সংস্কৃতির নামে মানুষের জীবন নিয়ে ভয়ঙ্কর খেলা জালিকাট্টু চলছে, বিরোধিতা করে না কোনও রাজনৈতিক দলই

    নিম্ন মানের কৃষি বীজ এবং তার অনিয়ন্ত্রিত বাজার দেশে প্রাকৃতিক চাষের পথে অন্যতম প্রধান অন্তরায়।

    সর্ষের মধ্যেই ভূত, নজর নেই কারও-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested