×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • ডিগ্রিধারী অকর্মারা বিশ্বকর্মা হবে কি?

    বিতান ঘোষ | 07-05-2022

    নিজস্ব ছবি

    ঋষভ পাত্র, শুচিস্মিতা দত্ত, অর্ণব নিয়োগী, দীপ দাস তারা সবাই কর্মহীন। কর্মপ্রত্যাশী এরা প্রত্যেকে, শিক্ষান্তে কাজ পেয়েও সেই কাজ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। কার্যত স্বেছায় বেকারত্ব বরণ করে নিয়েছেন।
     


    ঋষভ ও দীপ বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজের পড়ুয়া ছিল। শুচিস্মিতা ও অর্ণব ছিল বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়া। অগ্রিম মোটা বেতনের বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট কলেজগুলি শিক্ষান্তে ভাল চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তাঁদের একজনের কথাতেই, ""বেশ কিছু বহুজাতিক সংস্থার সঙ্গে কলেজের মৌ স্বাক্ষরিত আছে বলে জানানো হয়। সেই ভরসাতেই নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের স্বল্প সঞ্চয় ভেঙে বাবা এই কলেজে ভর্তি করে দিয়েছিলেন।''
     


    ক্যাম্পাসিং-এর সময়ে শুচিস্মিতা, ঋষভেরা দেখে, পূর্ব প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তাদের জন্য কাজের বন্দোবস্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই কাজ তাদের এতদিনকার অর্জিত শিক্ষার সঙ্গে নিতান্তই বেমামান। তাছাড়া বেতনের পরিমানও তাদের প্রয়োজন ও যোগ্যতার তুলনায় যৎসামান্য এবং তাদের অন্য রাজ্যে থেকে সেই কাজ করতে হবে।স্বল্প বেতনে দিনের ন্যূনতম চাহিদাগুলোও পূরণ হবে না বলে তাঁদের দাবি। তাই, চাকরির প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকার করেও তাঁরা চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

     

    অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের অর্জিত কারিগরি শিক্ষার সঙ্গে এই কাজগুলির কোনও রকম সংযোগ থাকে না। বছরের পর বছর ধরে বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলি এমন মিথ্যা দাবি করে পড়ুয়াদের ভর্তি নিলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। প্রসঙ্গত, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলি মোটা টাকার বিনিময়ে অ্যাডমিশন দেওয়ার সময় দাবি করে থাকে যে, শিক্ষাবর্ষ শেষে সফল পড়ুয়াদের বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থায় চাকরির সংস্থান করে দেওয়া হবে। পড়ুয়ারা কার্যত বাধ্য থাকে সেই স্বল্প বেতনের চাকরিগুলোই করতে অথবা চাকরি গ্রহণ না করে বিকল্প পথ খুঁজতে, যেমন পুরনো লেখাপড়ার জগতে ফিরে গিয়ে নতুন কোনও চাকরির সন্ধান করতে।



    হালে গজিয়ে ওঠা অজস্র বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো যেমন শ্রেণীকক্ষ, ল্যাবরেটরি, ওয়ার্কশপ, গ্রন্থাগার ইত্যাদি নেই, যার দ্বারা একজন পড়ুয়াকে সম্মানজনক একটি কাজের জন্য উপযুক্ত করে তোলা যায়। এই ধরনের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের পথে না গিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যাঁদের মেধা ও যোগ্যতার কোনও মূল্যায়ন করা হয় না। শিক্ষাবর্ষ শেষে ডিগ্রি ও সার্টিফিকেট মিললেও, মেলে না সেই শিক্ষা, যার জোরে একজন চাকরিপ্রার্থী তার যোগ্যতা অনুসারে একটা চাকরি জোটাতে সক্ষম হবে। তাই ঋষভ শুচিস্মিতার মতো পড়ুয়ারা বিকল্প পথ খোঁজে। এদের একটা অংশ ফিরে গেছে, সেই মূলস্রোতের পড়াশোনায়, যা তারা স্কুলস্তরে করে এসেছিল। নিবিড় ভাবে অঙ্ক, বিজ্ঞান, ইতিহাস পড়ে তারা কেউ কেন্দ্রের উচ্চমাধ্যমিক যোগ্যতামানের পরীক্ষায় বসছে, কেউ আবার স্নাতক হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে৷

     


    কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলি থেকে মাসে মাত্র আট-নয় হাজার বেতনের চাকরিতে যারা নিযুক্ত হচ্ছেন, খাতায় কলমে তারা বেকার না হলেও, দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে তারা ব্যর্থ। আবার যারা স্বেচ্ছায় এই কাজগুলি নিতে চাইছেন না, তারা কর্মপ্রত্যাশী হলেও এই ধরনের কাজ করতে উৎসাহী নন। এ ক্ষেত্রে চলে আসে স্বাস্থ্যের প্রশ্নটিও।

     

     

    গ্রাম, মফঃস্বল কিংবা ছোট শহর থেকে বড় শহরে কাজের সন্ধানে যাওয়া মানুষদের প্রতিনিয়ত যে অতিরিক্ত শ্রম করতে হয়, তা-ও তাদের অন্যদের তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে রাখে। শহরে থেকে তারা যে ধরনের খাবার খায়, তা একেবারেই পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যসম্মত নয়। কলকাতার অজস্র পথচলতি খাবারের দোকানগুলোয় এইরকম অজস্ব কর্মজীবী ছেলেমেয়ের দেখা মেলে, যারা এইসব দোকানগুলি থেকে সস্তা কিন্তু সুস্বাদুকর খাবার কিনে খায়। এদের অধিকাংশই দীর্ঘ সময় কাজ করে, দীর্ঘ সময় ধরে যাতায়াত করে নিজেরা নিজেদের জন্য রান্না করার অবকাশ পায় না।

     

    আরও পড়ুন:শ্রমবাজারে পিছিয়ে ভারতের নারী

     

    ভারতে এখন মধুমেহ (Diabetes)  Obesity-র মতো রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে যেগুলি মূলত অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে হয়ে থাকে। দেশে কর্মজীবী মানুষদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের বয়স 15 থেকে 59-এর মধ্যে। এদিকে ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেলথ স্ট্যাটিস্টিক্সের সমীক্ষা বলছে, দেশের 40 থেকে 59 বছরের মধ্যে থাকা 11.5 শতাংশ মানুষ এবং 20 থেকে 39 বছরের মধ্যে থাকা 9.1 শতাংশ মানুষ স্থূলতা রোগে আক্রান্ত।



    তথ্যের অধিকার আইনে একটি প্রশ্নের উত্তরে দেশের শিশু ও নারী উন্নয়ন মন্ত্রক 2021 সালের নভেম্বরে জানায় যে, দেশে প্রায় 33 লক্ষ শিশু অপুষ্টির শিকার। যে দেশের এত বিপুল সংখ্যক শিশু অপুষ্টির শিকার, সেই দেশের মানবসম্পদ ও শিক্ষার অগ্রগতি নিয়ে যথেষ্ট চিন্তার কারণ থাকছে। এখানেই স্বাস্থ্যের প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সঙ্গে সেটি অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত হয়ে পড়ে। কর্মক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন শৌচাগারের অভাব যেমন বহু মেয়েদের কাছে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।



    কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের চাকরির বন্দোবস্ত করতে না পারা ভারতের অর্থনীতির একটি নেতিবাচক দিক। বাণিজ্য মহলের অভিযোগ, কারিগরি শাখার পড়ুয়াদের সাদা কাগজে লিখিত ডিগ্রি এবং বাস্তবে কাজের দক্ষতার মধ্যে আসমান জমিন ফারাক আছে। টেক মহিন্দার অন্যতম শীর্ষ কর্তা সিপি গুরনানি একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, 94 শতাংশ ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক পড়ুয়াকে নিয়োগ করার জন্য উপযুক্ত মনে করা যায়নি। এমনকি অগ্রগণ্য তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিও ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতকদের মধ্যে মাত্র 6 শতাংশকে নিয়োগ করে বলে তিনি জানিয়েছেন। সমস্যা নিরসনে টেক মহিন্দ্রা সহ অন্যান্য সংস্থাগুলি এখন বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সদ্য নিযুক্ত কর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে৷

     

    উপযুক্ত কর্মমুখী শিক্ষার অভাব এবং তার ফলশ্রুতিতে কর্মহীনতা এবং শেষে কেঁচে গণ্ডুষ, অর্থাৎ আবার পূর্বের লেখাপড়ার জগতে ফিরে এসে নতুন করে চাকরির সন্ধান করা এই পুরো আবর্তনটার মধ্যে ঢুকে আছে নানাবিধ অসাধুতাও। যেমন কেন্দ্রীয় সরকারের স্কিল ইন্ডিয়া (Skill India) উদ্যোগের নামে একশ্রেণীর মানুষ কারিগরি নানা ক্ষেত্রে চাকরি দেওয়ার প্রলোভনে আদতে খুবই কম বেতনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চাকরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এখানে যে মৌলিক প্রশ্নটি তা হল, কারিগরি শিল্পের জন্য যে দক্ষতার প্রয়োজন হয়, তা পড়ুয়ারা পান না।

     

    রাশিয়া ইউক্রেন সংঘাতের ফলে জানা গেছে যে, প্রায় 20,000পড়ুয়া ভারত থেকে সেখানে ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিল। এর কারণ হিসাবে উঠে আসছে দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলির বর্ধিত বেতন এবং প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর অভাব। তাই প্রতি বছরই প্রায় অত সংখ্যক পড়ুয়া ইউক্রেন এবং ইউরোপের অন্যত্র ডাক্তারি পড়তে যাচ্ছে। অভিন্ন মেডিকেল প্রবেশিকা NEET উত্তীর্ণ পড়ুয়াদের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলিতে MBBS পড়ার খরচ বার্ষিক 7 থেকে 12 লক্ষ টাকা। সেখানে ইউক্রেনে একজন ভারতীয় পড়ুয়ার পক্ষে 3 লক্ষ টাকার মধ্যে MBBS কোর্স শেষ করা সম্ভব।

     


      Arijit Bhattacharya
    "কারিগরি শিল্পের জন্য যে দক্ষতার প্রয়োজন হয়, তা পড়ুয়ারা পান না।' এটা বাস্তবতা নয়। Core sector এ চাকরির অভাব রয়েছে। Manufacturing sector এর হাল খারাপ। এত engineer কোন কাজে লাগবে না বিশেষ করে এই automation এর যুগে।

    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    বাংলায় বেহাল বিজেপির মোহ কাটতেই তৃণমূলে ফিরছেন নব্যরা, বিমুখ আদিরাও, মহাসংকটে রাজ্য বিজেপি

    বাঙালিকে রবীন্দ্র-কবিতা না শুনিয়ে, প্রধানমন্ত্রী ‘খেলা’র মন্ত্র শেখালে জাতির উপকার হতে পারে!

    শাসক গ্যাস চেম্বারে সময়কে মারতে পারেনি, আমরা তাকে সবসময় আগলে রেখেছি।

    এইসব মানুষগুলোর সুরাহা করে দিতে দেশের ‘অর্থমন্ত্রী' নামক এক চরিত্র তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেবেন বলছেন।

    শুধুই কি উন্মাদনা, জনারণ্য আর আবেগ? মানুষের রুজিরুটিও তো এসব মেঠো সভা সমাবেশের সঙ্গে যুক্ত ছিল

    গদ্দারদের সঙ্গে কিভাবে ট্রিট করা হয়, তার একটা নমুনা দেখানো হয়েছিল ৩০শে জানুয়ারি, ১৯৪৮-এ।

    ডিগ্রিধারী অকর্মারা বিশ্বকর্মা হবে কি?-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested