2021-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর সদ্য নিযুক্ত বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রত্যয়ের সঙ্গে জানিয়েছিলেন, দল অটুট থাকবে, কোনও ভাঙন ধরবে না। কার্যত দেখা গেল আড়েবহরে রাজ্য বিজেপি ক্রমশ ছোট হয়েই চলল। বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিবিধ যোগদান মেলায় যাঁরা তৃণমূল সঙ্গ ত্যাগ করে, বিজেপির পতাকা তুলে নিয়েছিলেন, তাঁরা পুনরায় ফিরে গেলেন তাঁদের পুরনো রাজনৈতিক সাকিন, তৃণমূলে। বিজেপির অন্দরেই গুঞ্জন, এখনও এই দলবদলের যাত্রাপালার যবনিকা পতন হয়নি। শুধু রাজীব, মুকুল, বাবুল, অর্জুন নন, অনেক চরিত্র এখনও ব্যাকস্টেজে মহড়া দিয়ে চলেছেন।
রাজ্য বিজেপির অন্দরে যে "অল ইজ নট ওয়েল', তা কিছুকাল আগেই রাজ্য সফরে এসে বুঝিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিজেপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শাহি নিদান ছিল, "আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।' বিধানসভা নির্বাচনের আগে 200 আসন জয়লাভের স্বপ্ন দেখা রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোকে যে কেঁচে গণ্ডুষ করতে হবে, তারই ইঙ্গিত ছিল শাহের ওই মন্তব্যে। সদ্য বিজেপি-ত্যাগী অর্জুন সিং-ও দলত্যাগের পর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিজেপির নড়বড়ে সংগঠন দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দলকে পরাস্ত করা সম্ভব নয়। দীর্ঘকাল শাসক দল তৃণমূলের সঙ্গে থাকা অর্জুন সিং-এর মতো নেতারা রাজনীতির মাটির খবর ভালই রাখেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার ঘেরাটোপ থাকায় তিনি নিজে সুরক্ষিত ঠিকই। কিন্তু এলাকায় মাঝারি ও তারও নীচের স্তরের নানা ধরনের যে দলীয় কর্মীদের সমর্থনে অর্জুন সিং-রা রাজনীতি করেন, তাদের পুরোটাই ভয়ে বা ভক্তিতে এখন তৃমমূলের কব্জায়। এই অবস্থায় দিল্লি থেকে উড়ে এসে ভাষণ দেওয়া নেতাদের ভরসায় ব্যারাকপুরে রাজনীতি করা অর্জুন সিংয়ের পক্ষে সম্ভব নয়। এই সার সত্যটা হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছেন বলেই বিজেপি ত্যাগ অর্জুন সিংয়ের। রাজ্যের অন্যত্রও বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদানের হিড়িকের পিছনেও একই কারণ।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ""অর্জুন সিংরা রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা চরিতার্থ করতে বিজেপিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বুঝতে পেরেছেন ক্ষমতা ধরে রাখতে হলে বিজেপি এখন সঠিক জায়গা নয়। তাই তাঁরা পুনরায় তৃণমূলে ফিরে এসে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব রক্ষা করতে চাইছেন।'' ভোটের আগে অন্য দল থেকে আসা নব্য বিজেপিদের অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া নিয়ে বারবারই সরব হয়েছেন তথাগত রায় কিংবা সায়ন্তন বসুদের মতো পুরনো বিজেপি নেতারা। তৃণমূল-ত্যাগীদের "মাথায় তোলা নিয়ে' বারবার দিলীপ ঘোষ, কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং শিবপ্রকাশ মেননকে কটাক্ষ করেছেন তথাগত। বোঝাতে চেয়েছেন বিজেপির পুরনো কর্মীরা দলের প্রতি আগের মতোই অনুগত রয়েছেন। অধ্যাপক বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এই প্রসঙ্গে আলিপুরদুয়ারের গঙ্গাপ্রসাদ শর্মার উদাহরণ দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ""সংঘের পুরনো কর্মী গঙ্গাপ্রসাদ শর্মার সাংগঠনিক দক্ষতার জোরেই বিজেপি গত বিধানসভায় আলিপুরদুয়ার জেলার পাঁচটি আসনেই জয় পেয়েছে। কিন্তু তৃণমূল থেকে আসা নেতারা তাঁর তুলনায় বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন, এই অভিযোগে তিনি বিধানসভা ভোটের পরেই বিজেপি ত্যাগ করেন।'' অধ্যাপক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংযোজন, ""যাঁরা বিজেপি ছাড়ছেন, তাঁদের অধিকাংশই প্রাক্তন তৃণমূল নেতা, এটা যেমন সত্য, তেমনই এটাও সত্য যে 'নব্য'দের দাপাদাপিতে অনেক সংঘ অনুগত পুরনো নেতাও বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে গিয়ে ভিড়ছেন।''
আরও পড়ুন:অর্জুনের কাছে পরাস্ত হলেন রামচন্দ্র!
খাতায় কলমে 77টি বিধানসভা আসনে জেতা বিজেপির বর্তমান বিধায়ক সংখ্যা আপাতত 69। সাংসদ সংখ্যাও 18 থেকে কমে 16 হয়েছে। যদিও দলত্যাগ বিরোধী আইনের বাধ্যবাধকতার জন্য অনেক বিধায়কই নিজেদের তৃণমূল সদস্য হিসাবে পরিচয় দিতে চাইছেন না। বিজেপি নেতারাই অন্তরালে বলছেন, এই সংখ্যাগুলো খুব দ্রুতই আরও কমবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তেমনই এক নেতার কথায়, ""কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে নতুন রাজ্য কমিটি গঠন করতে হবে এবং বাংলার স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে রাজ্য নেতৃত্বকে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দিতে হবে। নইলে এই রাজ্যে বিজেপি বলে কিছু থাকবে না!''
দলত্যাগের এই ঘটনাপ্রবাহে যে দল সবচেয়ে বেশি লাভবান, সেই তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে এই বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তাঁদের বক্তব্য, এত নেতার বিজেপি ত্যাগের কারণ কী, তা বিজেপিই খুঁজে বার করুক। সিপিএমের ছাত্রনেতা অমৃতেন্দু দাস অবশ্য এটিকে পুরোপুরি তৃণমূল বিজেপির "বোঝাপড়া' বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর কথায়, ""বিজেপির লোক তৃণমূলে আর তৃণমূলের লোক বিজেপিতে যাচ্ছে মানে একটাই বাড়ির দুটি ঘরের মধ্যে যাতায়াত হচ্ছে। বামপন্থীরা এই দলবদলের নীতিহীন রাজনীতির মোকাবিলা করবে।''
একদা এই রাজ্যের "3-4 শতাংশের দল' থেকে প্রধান বিরোধী দল হয়ে ওঠা বিজেপি রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক ভাবে নামতে নামতে কোথায় গিয়ে ঠেকে, সেটাই এখন দেখার।
বেঙ্গল প্যাক্টে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে মুসলিম জনগোষ্ঠীকে শাসনক্ষমতা দেওয়ার কথা বললেন চিত্তরঞ্জন।
নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্রে গণতন্ত্রের চূড়ান্ত অবমাননা থেকে নিষ্কৃতির পথ কি আমেরিকার গৃহযুদ্ধ?
ছিন্নমূলের দেশ নেই, সমাজ নেই, আছে জেদ আর কল্যাণকামী রাষ্ট্রের তাচ্ছিল্য ও করুণা।
পাজি, কাঠিবাজ মিডল ক্লাসকে জব্দ করা মার্ক্সের কম্মো নয়, এই কাজটাও একমাত্র মোদীজিই পারেন!
সংখ্যাগুরুর জন্য,তাঁদেরই দ্বারা শাসিত ভারতবর্ষের একজন নাগরিক হিসাবে খুরশিদের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী
মুখ্যমন্ত্রী হয়েও নারীবিদ্বেষী কদর্য আক্রমণের শিকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।