×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • গাহি সাম্যের gun, যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে হোমো সাপিয়েন্স- হনুমান

    বিতান ঘোষ | 06-03-2020

    প্রতীকী ছবি

    পাশের পাড়ার ঘন্টাদা এই সেদিন এক বহুতল আবাসনের স্পোর্টস ক্লাবে ঢুকে স্কোয়াশ খেলতে নেমেছিলেন। প্রতিবেশী কাম চিরশত্রু শান্তিদার মুখটা মনে করে, দাঁতে দাঁত চেপে যেই না সজোরে বলটা স্ম্যাশ করেছেন, দেওয়ালে ঠুকে সেটাই সজোরে লাগল ঘন্টাদার চাঁদ বদনে। মানবজীবনের এই হল গিয়ে এক অপূর্ণতা। কখন কি ব্যুমেরাং হয়ে ফেরে কেই বা জানে। এই যাকে 'ভাগ্' বলে তাড়িয়ে দেওয়া হয়, পরক্ষণেই তাকেই আবার অনুরাগ করে ডেকে নিতে হয়। সিনেমার ভোলাভালা চরিত্রটা ইন্ট্যারভালের পর কখন যে নৃশংস এক মানুষ হয়ে যাবে, দেবা না জানন্তি।

    আওয়াজ উঠেছে দেশের গদ্দারদের গুলি মারো। "দেশ' মানে কল্পিত হিন্দুরাষ্ট্র আর কি। যুগে যুগে গদ্দার তো আর দেশটায় কম আসেনি। নাহলে হিন্দুরাষ্ট্র কবেই হয়ে যেত। ওই "গদ্দার' জিন্নাটার কত আগেই তো সাভারকর বলে দিয়েছিলেন, ভারতকে দু'ভাগে ভাগ করতেই হবে। গলার কাঁটা হয়ে ছিল পাজি বুড়ো গদ্দারটা। ফুটেজ খেতে বলে বসলো, দেশভাগ করতে হলে নাকি তাঁর বুকের ওপর দিয়ে করতে হবে! আরে বাবা সব গুজরাতির কি আর ৫৬ ইঞ্চি ছাতি থাকে নাকি, যে বুক অত ভার নিতে পারবে? তা সেই বুড়োটাকে সমঝে চলার জন্য তিন তিনবার সাবধান করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও পাকিস্থানকে বকেয়া ৫৫ কোটি টাকা দেওয়ার জন্য যেভাবে তিনি উতলা হয়ে পড়লেন, তারপর তাঁর বিশুদ্ধ গদ্দারি নিয়ে আর কারও মনে কোন ধন্দ রইলো না। "গোলি' করে বাড়াবাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হল তাঁর। "হে রাম' বলে পৃথিবী থেকে লগ আউট করলেন চার্চিলের "হাফ নেকেড ফকির'। দেশভক্তির কাক্ষিত স্তরে তিনি পৌঁছতে পারেননি, তাই 'জয় শ্রী রাম' না বলে 'হে রাম' বলেছিলেন। "জয় শ্রী রাম'-এর মধ্যে যে অ্যাড্রিনালিন রাশ আছে, সেটা "হে রাম'-এ কোথায়? দেশের পিতা এত মিনমিনে হলে হয় নাকি?

    গদ্দারদের সঙ্গে কিভাবে ট্রিট করা হয়, তার একটা নমুনা দেখানো হয়েছিল ৩০শে জানুয়ারি, ১৯৪৮-এ। কিন্তু আম বাঙালির মতই আম ভারতীয়রাও বড় ভুলোমনা। তারা ভুলে গেছে, দেশে এই ক'বছরে কত্ত গদ্দার বেড়ে গেছে। তাই হিন্দু ভাইবোনেদের "শুধিতে হইবে ঋণ'। কিন্তু এইখানেও একটা বড় ডিসক্লেমার আঁটা আছে। "প্রকৃত' হিন্দুরা যেন ভুলেও আয়নায় নিজেদের মুখগুলো না দেখেন। পাছে কারোর গত জন্মের কথা সব মনে পড়ে গেল, আর বসে বসে তিনি দিস্তা দিস্তা মুচলেকা লিখতে থাকলেন, কি চিত্তির হবে ভেবে দেখেছেন? ঠগ (পড়ুন গদ্দার) বাছতে গাঁ (পড়ুন নাগপুর) উজাড় হয়ে যাবে। এবার দর্পণে নিজেদের মুখ দেখে হিন্দুরাও যদি আত্মঘাতী হন, দেশোদ্ধার করবে কারা? গোলওয়ারকর তার চিন্তার বোঝা (বাঞ্চ অব থটস) বাড়িয়ে বলে গেছেন, এই দেশ হিন্দুর। বাকিদের নেগোশিয়েট করে নিতে হবে। দধীচির লেগাসি বহন করা হিন্দুদের ত্রহ্যস্পর্শে, গুলি খাওয়া গদ্দারগুলো প্রমাণ করেই ছাড়বে, তারা আদতে গদ্দার ছিল।

    মিত্রোঁ, তাই গদ্দার ঝাড়াই-বাছাই করে নিয়েই তাদের 'গোলি' মারতে হবে। সময় দিয়ে ফেললেই ফুটেজ খেয়ে যাবে গদ্দারগুলো। ইতিহাস কপচে বলে দেবে, গোলি মারনেওয়ালাদের হোমো হাবিলিস থেকে হোমো সেপিয়েন্স সাজার মধ্যবর্তী ইতিহাসখানা। লোকে যদি এদের কথায় নেচে, হোয়াটসঅ্যাপে গডসের "কেন আমি গান্ধীকে মেরেছি' না পড়ে, "হিন্দ স্বরাজ' পড়ে ফেলে পুরো প্ল্যান প্রোগ্রাম সবরমতির জলে ডুবে যাবে।

    তবে, প্যান ইন্ডিয়ান এই "গোলি মারো' অ্যাজেন্ডাতে তো সারা ভারতে সব্বাই খুশি। আইনি কচকচানি আর হ্যাপা কমে যাওয়ায় পুলিশ খুশি, আদালত খুশি। এক বিচারক অবশ্য জাতির সেবায় নিবেদিত এই মহান কর্মসূচিতে নিয়ে কটূ কথা বলছিল। তাকে আপাতত 'গোলি' ছাড়াই সমঝে দেওয়া গেছে। "বিচারের বাণী কেন নীরবে নিভৃতে কাঁদে' লব্জটা বেশি ব্যবহার করা যাবে না বলে, কিছু কবি আর সাংবাদিক অবশ্য ছিঁচকাঁদুনের মত কাঁদছে। দীর্ঘসূত্রী বিচারপ্রক্রিয়া থেকে যে ১৩০ কোটি ভারতবাসীকে মুক্ত করা হচ্ছে, তার জন্য মিসড কল দিয়ে সমর্থন জানাতেও এদের অনীহা। হায়দ্রাবাদে এনকাউন্টারে ফুলবৃষ্টি হয়েছিল, এবার তো বড় প্ল্যাটফর্মে খেলা হচ্ছে। অনুরাগের ছোঁয়ায় সবাই সমস্বরে বলবে, "দেশ কো গদ্দারো কো, গোলি মারো সালোঁ কো।' ব্যাকড্রপে জাতীয় সঙ্গীত বাজবে। সেখানে কেউ উঠে না দাঁড়ালেই, গদ্দার লিস্টের খসড়ায় তার নামটা টুক করে টুকে নেওয়া হবে।

    মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সহিষ্ণুতা নিয়ে যারা চিৎকার করছেন, তারা তো আসলে শাস্ত্র, পাঁজিপুঁথি কিস্যু পড়েননি। মদনদেব যখন বাড়াবাড়ি করে যোগী শিবকে বিরক্ত করছিল, তখন শিব কি তাকে শ্যুট আউট করেননি? একটা বাণ দিয়ে কি আর অমন ৬০ ডিগ্রি বার্ন করা যায়? নেহাত ফ্যামিলি ড্রামায় ভালগার জিনিসপত্র দেখানো হবে না বলে, মহাদেবের বন্দুকটা দেখানো হয়নি।  যুগে যুগে "যোগী'দের ধ্যান ভাঙানোর শাস্তি তো এমনই হয়ে থাকে!


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    বোরখা পরা নাজমার বর 2002-এর গুজরাতে খুন হয়, এখন মুশকানরা আল্লা হো আকবর বললেই দোষ হয়ে যাবে?

    তথাকথিত উন্নয়নের পক্ষে সুবিধাজনক হাতিদের সন্দেহজনক মৃত্যুতে তদন্ত কমিটি।

    নারী সুরক্ষায় বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত মোটেই মডেল নয়।

    ন্যুব্জ বাপুজি, আর চাকচিক্যহীন বাপুজি কেকই তো ভারতবর্ষকে মিলিয়েছে বার বার।

    গুগলাং শরণং গচ্ছামি করা পাঠককে বুঝতে হবে একমাত্র বই-ই নির্ভুল ও বিস্তৃত তথ্যের আধার।

    বীরপুজোয় মত্ত শাসক এবং ভক্তরা ইতিহাস-বিস্মৃত হলে তাদেরই চরম মূল্য চোকাতে হবে।

    গাহি সাম্যের gun, যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে হোমো সাপিয়েন্স- হনুমান-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested