×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • কালোর মাঝে আলো পেলেন নবতিপর শিশু ডেসমন্ড টুটু

    বিতান ঘোষ | 29-12-2021

    কালোর মাঝে আলো পেলেন ডেসমন্ড টুটু।

    নবতিপর এক কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ, যিনি শিশুর মতো হাসেন, আনন্দে উদ্বেলিত হন, প্রয়োজনে স্বজাতীয়দের সঙ্গে নেচে ওঠেন। এই নবতিপর মানব-শিশু চলে গেলেন। ঘন কালো গাত্রবর্ণ নিয়ে জন্মেছিলেন, গড়পড়তা মানুষের মতো সেই বর্ণকে ফিকে করতে চাননি, লজ্জিতও হননি, উল্টে এই গাত্রবর্ণকেই নিজের অভিজ্ঞান করেছেন। জগতের অবহেলিত, চির নিপীড়িত কালো মানুষদের প্রেরণাস্থল হয়ে থেকে গিয়েছেন বরাবর। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু (Desmond Tutu)-র কথা হচ্ছে। সম্প্রতি যিনি 90 বছর বয়সে আমাদের ছেড়ে গেলেন।

     

     

    প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়ে তিনি এক জন আর্চবিশপ। প্রথমে জোহানেসবার্গ, পরে কেপটাউনের আর্চবিশপ। সেই দেশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আর্চবিশপও বটে। শৈশবে স্বপ্ন দেখতেন শিক্ষক হবেন। শিক্ষকতাও করেছেন বছর তিনেক। কিন্তু একে পরিবারের অর্থনৈতিক দৈন্য, তদুপরি বর্ণবৈষম্যে দীর্ণ দেশের সমাজ— খ্রিস্ট-পথেই মানবকল্যাণের গন্তব্যে এগোতে শুরু করলেন টুটু।

     

     

    বিশ্বে কালো মানুষদের হয়ে যতগুলি সংগ্রাম হয়েছে, তার সিংহভাগ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। টুটু এখানেও ব্যতিক্রমী। শ্বেতাঙ্গদের শাসনকাল শেষ হওয়ার পর 1994 সালে যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় কালো মানুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হল এবং টুটু-র অভিন্নহৃদয় বন্ধু নেলসন ম্যান্ডেলা সে দেশের প্রায় একক রাষ্ট্র-পতি হলেন, তখনও টুটু রাজনীতির অঙ্গন থেকে শতহস্ত দূরে। গোটা বিশ্ব যখন এই দক্ষিণ আফ্রিকার কালো মানুষদের অভাবনীয় সাফল্যে মুগ্ধ, প্রচারের সব আলো যখন শুষে নিচ্ছেন ম্যান্ডেলা, তখন খানিক স্বগতোক্তির ঢঙেই টুটু তাঁর আপত্তির কথা জানালেন। এত বড় আন্দোলনের নেতা হিসাবে যে ভাবে এক জন রাজনৈতিক নেতাকে তুলে ধরা হল, তার বিরোধিতা করেছিলেন টুটু।

     

     

    পুনর্মিলন। যাবতীয় বিরোধ, বিসংবাদের পর যা পরম কাঙ্ক্ষিত হওয়া উচিত, তা হল এই পুনর্মিলন। দক্ষিণ আফ্রিকার নবগঠিত সরকার Truth and Reconciliation Commission গঠন করে অত্যাচারী শ্বেতাঙ্গ শাসক এবং তার সহকারীদের বিচার করার জন্য। নেলসন ম্যান্ডেলা এই কমিশনের প্রধান করেন ডেসমন্ড টুটু'কে। স্মরণে রাখতে হবে ডেসমন্ড তখন বিজয়ী— তাঁর স্বপ্ন সত্যি করে দক্ষিণ আফ্রিকার কালো মানুষরা তখন রাজনৈতিক অধিকার ও ক্ষমতা অর্জন করেছেন। তাই বিজয়ীর মনে প্রতিশোধস্পৃহা জেগে ওঠাই স্বাভাবিক। কিন্তু ডেসমন্ড টুটু যে অনন্য। তাই বিচারকের ভূমিকাতেও তিনি নির্দয় নন, ভাববিহ্বল, আবেগী। পুরনো অত্যাচারের কথা স্মরণ করেও সামনে যখন দেখলেন সেই অত্যাচারীরা নতমুখে তাঁর সামনেই দাঁড়িয়ে, তিনি কেঁদে ফেললেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানে নুরেমবার্গ ট্রায়ালে যখন ফ্যাসিস্ট যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, তখন বিচারকরা অভিযুক্তদের নীতি নৈতিকতার বিচার করে শাস্তিদান করেছিলেন কিন্তু ডেসমন্ড টুটুরা বেশি জোর দিয়েছিলেন মানবতার পর, তাই বোধহয় নিপীড়িত হয়েও নিপীড়কারীদের পর অনায়াসে তাঁরা ক্ষমাসুন্দর হতে পেরেছিলেন।

     

     আরও পড়ুন: 1971 আজকের ভারতের শিক্ষক

     

    ডেসমন্ড রাজনৈতিক নেতা নন, তিনি ধর্মপ্রচারক। তাই ক্ষুদ্র স্বার্থচিন্তার বদলে তাঁর মনে এক বৈরাগ্যের ভাব ছিল, ক্ষমতার প্রতি ছিল অনাসক্তি। তাই কালো মানুষদের মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মঞ্চ আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস স্বধর্মচ্যুত হলে, তিনি অস্থির হয়েছেন, বিচলিত হয়েছেন, সমালোচনাও করেছেন বিস্তর।

     

     

    বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের আর এক মুখ মহাত্মা গান্ধীর চরিত্রের সঙ্গে কোথাও গিয়ে মিলে যান ডেসমন্ড টুটু। মহাত্মা গান্ধীরও প্রথম রাজনৈতিক চারণভূমি টুটুর দেশ দক্ষিণ আফ্রিকাই। গান্ধী এবং টুটু তাঁদের কার্যকলাপে ভীষণ রকম রাজনৈতিক, কিন্তু রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্তে তাঁদের বৃহত্তর লক্ষ্য কখনও হারিয়ে যানি। রাজনৈতিক ক্ষমতার ত্রহ্যস্পর্শ এড়িয়ে কোথাও তাঁরা একটা বিশেষ সময়ের বিবেক, যাঁদের দেশ-কালের সীমানায় বিভক্ত করা যায় না। মহাত্মা গান্ধী, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, ডেসমন্ড টুটু— কালো মানুষদের অধিকার রক্ষায় এই নামগুলি সর্বদা উচ্চারিত হতেই থাকবে। রাজনৈতিক মধুমাস কেটে গেলে রাজনীতিকের প্রভাব প্রতিপত্তিতে ভাটার টান লেও আসতে পারে, কিন্তু বাইবেলের মরমী পথ ধরে ডেসমন্ড টুটু ধর্ম-বর্ণের উর্ধ্বে যে মানবতার সন্ধান করেছেন, তা-ই চিরভাস্বর হয়ে রয়ে যাবে। নবতিপর শিশু এর পরেও অনুপ্রাণিত করবেন মার্কিন মুলুকের কোনও বারাক ওবামা কিংবা সাঁওতাল পরগণার কোনও ডেসমন্ড সোরেনকে।

     


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    শুধুই কি উন্মাদনা, জনারণ্য আর আবেগ? মানুষের রুজিরুটিও তো এসব মেঠো সভা সমাবেশের সঙ্গে যুক্ত ছিল

    বুকের মাঝে আস্ত একটা দেশকে যারা লালন করতে ব্যর্থ, তারাই ভাগাভাগির কথা বলে।

    শ্যামাপ্রসাদ ‘সাম্প্রদায়িকতা' নামক রোগে আক্রান্ত হলে, সেই রোগের উৎস খুঁজে সেটা নির্মূল করতে হবে।

    হঠকারিতায় বিচ্ছিনতাবাদের প্যান্ডোরার বাক্স খুলে ফেললে তাকে বন্ধ করা মুশকিল।

    বিশ্বে দেশ নামক ধারণাকে যত কঠিন করা হচ্ছে, দেশহীন শরণার্থীদের সংখ্যা ততই বাড়ছে।

    শ্রীরামপুরের গির্জা বলতে ভোলা ময়রা এই সেন্ট ওলাফস গির্জার কথাই বলেছেন

    কালোর মাঝে আলো পেলেন নবতিপর শিশু ডেসমন্ড টুটু-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested