একুশ মানে স্পর্ধা, একুশ মানে আলোড়ন, একুশ মানে অহংকার, একুশ মানে আবেগ। না, আজকের দিনে নতুন করে বাংলা ভাষার ইতিহাস বলে আর সময় নষ্ট করতে চাই না। বাহান্নর সালাম, রফিক, বরকত থেকে শুরু করে নব্বইয়ের রফিকুল, আবদুসদের ইতিহাস বাঙালি জানে। ভাষা সাম্রাজ্যবাদ যে মানুষকে ভাতে মারতে পারে 12 এ জ্ঞান বাঙালির আছে। তাই বাঙালি আজও বাংলায় ভাবে। অসম্ভব ক্ষমতা এই ভাষার! পুরুলিয়া, অসম, বাংলাদেশ থেকে একেবারে ইউনেস্কোর মঞ্চে গিয়ে অধিকারের দাবি তোলে। সেজন্যে সারা বছরের ‘গুড মর্নিং’কে বাঙালি একুশে ফেব্রুয়ারি ‘শুভ সকাল’ বলে, একবার হলেও ‘আমি বাংলায় গান গাই’ বলে।
একুশ উৎসবের দিন, একই সঙ্গে একুশ ভাবনারও দিন। প্রতি বছর পশ্চিমবঙ্গ ভাষা ও চেতনা সমিতির ভাষা উৎসব এমনই অনেক ভাবনার সমন্বয় নিয়ে হাজির হয়। এই উৎসবে শহরের মাঝে দেখা যায় অনেক পরিচিত মুখ। যাঁদের সৃজনশীলতায় ভরে ওঠে অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের সামনের রাণুচ্ছায়া মঞ্চ। এবারের চব্বিশতম ভাষা উৎসবে দুই বাংলার শিল্পীদের উপস্থিতি অনুষ্ঠানে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রয়াস দেখা যায়, ভাষা ও চেতনা সমিতি এমনই একটি প্রয়াস। প্রতি বছর কুড়ি ও একুশে ফেব্রুয়ারি এই অনুষ্ঠানে নাচ, গান, কবিতা, নাটকের মধ্যে দিয়ে ভাষা-শহীদদের স্মরণ করা হয়, মাতৃভাষাকে সম্মান করা হয়।
ভাষা উৎসবে উপস্থিত প্রতুল মুখোপাধ্যায় তাঁর গান ও বক্তব্যের মাধ্যমে বর্তমান পেক্ষাপটে আমরা আমাদের মাতৃভাষা নিয়ে কী করছি এই দিকটির ওপর গুরুত্ব দেন। ঔপনিবেশিক মানসিকতা বহু ভাষার উপর এসেছে। না জানি কত শত ভাষাকে ভক্ষণ করে ইংরেজি গোটা বিশ্বে তার আধিপত্য বিস্তার করেছে। বাংলার ক্ষেত্রেও এই আধিপত্য দেখা যায়। বাঙালির বাক্যে সত্তর শতাংশ ইংরেজি, কুড়ি শতাংশ হিন্দি এবং দশ শতাংশ বাংলা শব্দের সমষ্টি আজকের নতুন বিষয় নয়। এ আগেও ছিল, এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে পীড়নের সূত্রপাত তখনই হয়, যখন আজকের তরুণ বাঙালি প্রজন্ম রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, সুকুমারদের লেখা ইংরেজিতে পড়তে চায়।
বাংলা ও বাঙালির লড়াই বহু পুরনো। হিন্দি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাঙালির আজকের লড়াইকে তুলে ধরেন ভাষা ও চেতনা সমিতির সম্পাদক ইমানুল হক। বাইরে থেকে শাসক যতবার এই ভূখণ্ডে এসেছে, শাসনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের ভাষাকেও চাপিয়ে দিয়েছে বাঙালির উপর। বাঙালি মুঘল যুগে শিখছে উর্দু, ফারসি। ঔপনিবেশিক শাসনকালে শিখেছে ইংরেজি ও ফরাসি, কিন্তু প্রিয় বাংলাকে কখনও ভোলেনি। আজ অসাধু প্রক্রিয়ায় বাঙালিকে বাংলা ভুলতে বলা হচ্ছে। শুধু বাঙালিকে নয় দেশের শাসক দল ভারতের অন্যান্য ভাষাভাষীদের থেকে কেড়ে নিতে চাইছে তাদের মাতৃভাষা। হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুত্বের মোড়কে মিশিয়ে অ-হিন্দি ভাষীদের ধমনীতে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে মিথ্যে, আরোপিত জাতীয়তাবাদকে। প্রচার করা হচ্ছে দেশকে ভালবাসলে হিন্দি জানতেই হবে। 1999-এ ইউনেস্কোর তরফে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়, মান্যতা দেওয়া হয় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে। আজ বিশ্বের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় দেশে বিভিন্নতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শাসক দলের হিন্দি আগ্রাসন কতটা কার্যকরী হবে তা সময় বলবে।
ভাষা উৎসবে পরিবেশিত অনুষ্ঠান ভাষা দিবসের ঐতিহ্যকে তো তুলে ধরেই একই সঙ্গে সমাজের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কেও তুলে ধরে। দর্শকদের নতুন করে ভাবতে শেখায়, রক্তে একুশের স্পর্ধা জাগায়। তাই একুশের ভাষা উৎসব শুধু অনুষ্ঠান নয়, এ এক আন্দোলন। তামিল ভাষীদের মতো বাঙালি হয়তো তাঁর ভাষাকে নিয়ে আত্মাভিমানকে আগলে রাখতে পারেনি। উর্দু ,ফারসি, ইংরেজির বিভিন্ন শব্দ বাংলায় মিশে গিয়েছে, ভবিষ্যতে আরও মিলবে। কারণ ভাষা তো বহতা স্রোতের মতো। তবে যে কোনও বাধাকে অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা যে বাংলা ও বাঙালির আছে এর প্রমাণ ইতিহাসে বহু আছে। একুশের দিনটি তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
হলোকস্ট স্মরণ করায় গণতন্ত্রী শাসকের সবচেয়ে ভয়াবহ স্বরূপের।
স্বতন্ত্র ভাবনাই জন্ম দেয় নতুন সম্ভাবনার, ভারতে সমষ্টিবাদের রাজত্ব উদ্ভাবন ও নতুন পথের স্বীকৃতি দেয়
মানব সভ্যতায় সঙ্কট ও প্রয়োজনই সর্বদা আবিষ্কারের জন্ম দিয়েছে, কোভিড আবারও তা প্রমাণ করল।
সভ্যতা কীভাবে মানুষের পাগলামিকে ব্যবহার করেছে ?
ধর্মীয় বিশ্বাস কখনওই জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে না
রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ বদলে দিতে পারে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সমীকরণ