এই হপ্তাখানেক আগেও রবিবার বিকেলে যারা আক্ষেপের স্বরে বলতেন, ‘আবার কাল সকালে যুদ্ধ শুরু। ধুরররর... ভাল্লাগে না। একটামাত্র ছুটির দিন। আর তাতে হাজার গন্ডা কাজ। ঠিকমতো এনজয় করতেও পারি না। পোড়া দেশে জন্মেছি।’
তাদের মুখেই এখন সাংঘাতিক কাজের কথা। কাজ মানে, ওই পাড়ার মোড়ে সংসার বিতাড়িত মাঝ বয়সিদের সঙ্গে আড্ডা। বা বন্ধুস্থানীয় কারও বাড়ি গিয়ে বকবক। তবে বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি গিয়ে আড্ডা ঠিক জাতে ওঠার মতো ব্যাপার নয়। বাড়ি থেকে বেরনো যখন বারণ, সে সময় বাড়ির বাইরে না গেলে ইজ্জত থাকে? কর্মবীর জাতি বলে কথা!
এরা কতটা কর্মবীর তার নমুনা ২২ মার্চ বিকেলে পাওয়া গিয়েছিল। সারাদিন বাড়িতে লুকোচুরি খেলার পর বিকেল পাঁচটায় আর নিজেদের ধরে রাখতে পারেননি। আরে মশাই ‘নাগরিক সমাজের পাথমিক কত্তব্য বলে তো একটা কথা আছে নাকি।‘ তাই ‘ছাত্ত’ জীবনে যেমন ‘বল বীর বল উন্নত মম শির’ শুনে কেঁপে কেঁপে উঠতেন, তেমনই পোধানমন্তীর ডাকে সাড়া দিয়ে ঘটি-বাটি-খোল-করতাল-কাশি-বাঁশি সব নিয়ে দলবল-সহ বেরিয়ে পড়েছিলেন রাস্তায়। করোনা খেঁদিয়ে যমের দুয়ার দেখাবেন বলে। ওই যে, বলেছি না কর্ম-বীর। কাজ ছাড়া থাকতে পারেন না।
এদের আরও একটা মস্ত গুণ আছে। অজুহাত দেওয়ায় ডক্টরেট করে ফেলেছেন। শোনা যায়, অজুহাত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এদের কাছ থেকে টিউশনি পড়তে আসেন। কয়েকটা মোক্ষম নমুনা না দিলে আপনারা বুঝবেন না। ধরুন, মুদির দোকানে ৫টা জিনিস আনতে বলা হল। সবটাই আনবেন কিন্তু ৪ বারে নিয়ে আসবেন। কারণ জিজ্ঞাসা করলেই আজুহাত রেডি। এক এক করে বলবেন, ‘দোকানে প্রবল ভিড় ছিল’, ‘সঞ্জয়ের দোকানে ছিল না, তাই গোপালের দোকান থেকে আনতে হল’, ‘টাকা শেষ হয়ে গিয়েছিল, এটিএমে গিয়েছিলাম’, ‘ঠাকুরের ফুল আনতে হতো, নোংরা হাতে আনব কী করে!’ ইত্যাদি ইত্যাদি।
এরা একাধারে অতিশয় সাহসী এবং ভীষণ ভীতু। ২৪ মার্চ থেকে পুলিশ প্রশাসনের টহল শুরু হয়েছে শহরের রাস্তায়। কোথাও বেশি ভিড় দেখে দোকান বন্ধ করাচ্ছে। কোথাও খেজুড় করতে দেখলেই লাঠি নিয়ে তেড়ে যাচ্ছেন উর্দিধারীরা। তাতে কাজও হচ্ছে। কিন্তু তেড়ে এলেই সুরসুর করে ঘরমুখো হচ্ছেন। চলে যেতেই আবার যে কে সেই। মুখে বলছেন, ‘ধুর, ওসব বেশি বেশি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে দু’ দণ্ড কথা বলে এমন কী মহাভারত অশুদ্ধ হবে। যত্তসব।’
এ সমস্ত কর্ম-বীর, সাহসী বঙ্গসন্তানদের বলছি, এই একই মনোভাব দেখিয়ে ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ যেচে করোনাকে মহামারীর আকার নিতে দিয়েছে। এ দেশের চেয়ে অনেক গুণ ভালো স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়েও মৃত্যুমিছিল ঠেকাতে পারেনি। সে মিছিল এখনও চলছে। তা হলেই বুঝুন, এ দেশের কী অবস্থা হবে। এই মহামারী থেকে বাঁচতে সক্কলকে নির্দেশ মানতে হবে। মানতেই হবে। দিনের মধ্যে সাড়ে তেইশ ঘণ্টা বাড়িতেই থাকুন। খুব অসহায় লাগলে ছাদে গিয়ে পায়চারি করুন। কিন্তু বাড়ি থেকে বার হবেন না। গান শুনুন। কবীর সুমনের ওই গানটা শুনুন, মনে বল পাবেন, ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু, বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে। দেখা হবে তোমায় আমায় অন্য গানের ভোরে...’
এতেও যদি মন না মানে, তবে একদান লুডোই খেলুন।
ওহঃ, একজন পুরুষ বটে! না, তিনি পুরুষ নন, মহাপুরুষ। না হলে এমন কথামৃত মুখ থেকে বার হয়?
সম্প্রতি দিল্লিতে হিন্দু মহাসভা ‘ভগবানের অবতার করোনা ভাইরাস’ থেকে বাঁচতে গোমূত্র পার্টি অরগ্যানাইজ ক
আন্তর্জাতিক খুশি দিবসেই ফাঁসিতে ঝোলানো হল নির্ভয়ার ধর্ষকদের। খুশির দিনই বটে!
দেশে ভূতের সংখ্যা কম নেই, তাদের মুখে রাম নামেরও বিরাম নেই। এমন পরিস্থিতিতে রামায়ণই আদর্শ ধারাবাহিক।
যে কোনও চলে যাওয়া শূন্যতা তৈরি করে যায়। এস পি-র শূন্যতা ভরাট হওয়ার নয়।
পোধানমন্তীর ডাকে সাড়া দিয়ে ঘটি-বাটি-খোল-করতাল-কাশি-বাঁশি সব নিয়ে দলবল-সহ বেরিয়ে পড়েছিলেন রাস্তায়।