×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • অন্তর্কলহেই শক্তিক্ষয়, মানুষের কথা বলবে কী করে বিরোধী বিজেপি?

    শিবপ্রিয় দাশগুপ্ত | 13-11-2021

    নিজেদের মধ্যেই বিবাদে মশগুল রাজ্য বিজেপি।

    দলীয় সমস্যা গোপনে রাখার ক্ষেত্রে বিজেপির অতীত সুখ্যাতির আর কিছুই অবশিষ্ট নেই পশ্চিমবঙ্গে। রাজ্য দলীয় অন্তর্কলহে আদি বিজেপিরা এখন দলে ব্রাত্য, ক্ষমতা বাড়ছে নব্য বিজেপির। তার মধ্যেও বিশেষ করে আবার সেই নেতাদের তৃণমূল থেকে যাঁরা বিজেপিতে এসেছেন গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে। বিজেপি গড়ার পিছনে যে সংঘ পরিবারের মাথা কাজ করত, আজ রাজ্য বিজেপির ক্ষেত্রে সেই সংঘ পরিবার অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ অনেকাংশেই কোণঠাসা। তৃণমূল থেকে যাঁরা বিজেপিতে এসেছেন, এখন দলে তাঁদের রাজ চলছে। আর এই কাজকে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য অভিযোগ উঠছে দলের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে। এই তালিকা থেকে বাদ যায়নি দিলীপ ঘোষের নামও।

     

     

    বিজেপির এই অভ্যন্তরীণ কোন্দলে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের রাজনৈতিক ভাবে লাভ হতেই পারে। কিন্তু রাজনীতিকে দলীয় লাভ-ক্ষতির জিরো-সাম গেম হিসেবে দেখাই কি শেষ কথা? এক দলের যতটা ক্ষতি অন্য দলের ততটাই লাভ - এই সঙ্কীর্ণ অঙ্কের বাইরে গিয়ে যদি মানুষের স্বার্থের দিক থেকে দেখা যায়, তবে বিজেপির এই অন্তর্কলহে ক্ষতি কিন্তু সামগ্রিকভাবে গোটা রাজ্যেরই। মাত্র ছয় মাস আগেই মানুষের ভোটে বিজেপি এই রাজ্যে প্রধান এবং শক্তিশালী বিরোধী দলের মর্যাদা পেয়েছে। সরকারের ভুল সংশোধন করে দেওয়া ও জনগণের দাবি শাসক দলের কাছ থেকে আদায় করে আনার ক্ষেত্রে তাই তাদের বড় ভূমিকা আছে। অন্তত থাকার কথা ছিল।

     

     

    সেই দাবি কি শেষ পর্যন্ত জনগণের হয়ে শাসক দলের কাছ থেকে বিজেপি ছিনিয়ে আনতে পারবে? এটাই এখন প্রধান প্রশ্ন। কারণ বিধানসভার যিনি বিরোধী দলনেতা, সেই শুভেন্দু অধিকারীর প্রতি রাজ্য বিজেপির একটা বড় অংশের ভরসা, বিশ্বাস কিছুই নেই।

     

     

    এর সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হাওড়া সদর বিজেপি জেলা সভাপতি সুরজিৎ সাহার শুভেন্দুর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মন্তব্য করা ও পরিণতিতে দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়া। 

     

     

    বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি ও দলের বর্তমান সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ নিজেও মেনে নিয়েছেন, বিজেপি দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ আছে। তাঁর বিরুদ্ধেও অসন্তোষ থাকতে পারে বলে প্রকাশ্যেই তিনি জানিয়েছেন। তবে সেটা সঠিক জায়গায় বলতে হবে, বলে তিনি মনে করেন। তাঁর মতে, দলে এসব বলার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা আছে। দলে থাকতে গেলে তো দলের নিয়ম মানতে হবে। 

     

     

    প্রসঙ্গত সুরজিৎ সাহা বলেছিলেন, হাওড়ার আগামী পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বি টিমের অধীনে কাজ করব না। পাশাপাশি সুরজিৎ সাহা শুভেন্দু অধিকারীর নারদ কাণ্ডে জড়িত থাকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে নারদ কাণ্ডের সেই ভিডিওর প্রসঙ্গও উল্লেখ করেছিলেন শুভেন্দুর নাম করে। পাশাপাশি হাওড়ায় তৃণমূলের টিকিটে জয়ী মেয়র ও বর্তমান বিজেপি নেতা রথীন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয়েছেন। এই কারণে তাঁকে দল বহিষ্কার করেছে। 

     

     

    সুরজিৎবাবুর বক্তব্য, বিজেপিতে থেকে এখন কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষদের নামে সমালোচনা করলে দল শাস্তি দেয় না। তবে তৃণমূল থেকে যাঁরা বিজেপিতে এসেছেন, ক্ষমতা পেয়েছেন, তাঁদের কিছু বললেই দলের পক্ষ থেকে শাস্তি ঘোষণা হয়ে যায়। এখন শুভেন্দু অধিকারীর নামে বলে আমি বহিষ্কৃত হলাম। কেউ যদি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি সদ্য বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে গেছেন, যদিও বিজেপি এখনও তাঁকে বহিষ্কার করেনি, তাঁর নামে বলেন, তাঁর শাস্তি অবশ্যম্ভাবী। অনুপম হাজরার নামে কিছু বললেও শাস্তি হবে। এটাই এখন বিজেপিতে নিয়ম হয়ে গেছে।

     

     

    সুরজিৎ সাহার এই অভিযোগ যে নিছক কল্পনা নয় তেমন ইঙ্গিত দিয়েছেন বিজেপির দক্ষিণবঙ্গের আর এক সাংসদ, যিনি সংঘ পরিবার থেকে উঠে এসেছেন বিজেপিতে। যিনি গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি ভোটে জিতেছেন। অথচ তাঁর অভিযোগ তাঁকে প্রার্থী করার ক্ষেত্রেও রাজ্য বিজেপির তৎকালীন নেতৃত্ব বিরোধিতা করেছে। তাঁর অভিযোগ, সম্প্রতি নতুন যে জেলা নেতৃত্ব গঠন করা হয়েছে সেখানেও নদীয়া জেলার সমস্ত দলীয় পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য কমিটিতে তাঁকে জায়গা দেওয়া হয়নি। অথচ দিলীপ ঘোষ বিজেপির রাজ্য সভাপতি পদ থেকে সরার পর তাঁরই বিজেপির রাজ্য সভাপতি হওয়া একপ্রকার ঠিকই হয়ে গিয়েছিল বলে এই বিজেপি সাংসদের দাবি। তাঁর আরও অভিযোগ, তিনি রাজ্য সভাপতি হবেন, এটাই ঠিক হয়ে গিয়েছিল। তাঁর কাছে এই নির্দেশ আসবে অমিত শাহর কাছ থেকে, সেটা তাঁকে দলের তরফে জানানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল তাঁর ফোন যেন তিনি বন্ধ বা ব্যস্ত না রাখেন। সেই মতো তিনি ফোন নিয়ে সারাদিন বসেও ছিলেন। কিন্তু অমিত শাহর ফোন আর এল না। তারপর কে বিজেপির রাজ্য সভাপতি হয়েছেন সেটা রাজ্যের মানুষ দেখেছেন। 

     

     

    এই বিজেপি সাংসদের অভিযোগ, তৃণমূল ছেড়ে আাসাদের গুরুত্ব দিয়ে সংঘ পরিবারের থেকে যাঁরা বিজেপিতে এসেছেন, তাঁদের খাটো করা হচ্ছে, সব কিছু থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা দিলীপ ঘোষের সময় থেকে শুরু হয়ে এখনও চলছে। এই ঘটনা ঘটানোর পিছনে রাজ্য বিজেপির একঝাঁক নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন এই বিজেপি সাংসদ।

     

     

    তিনি দাবি করেন তাঁর জেলার আটটি বিধানসভার আটটিতেই বিজেপি জিতেছে। সেটা তারই কৃতিত্ব। আর উপনির্বাচনে এই জেলার আসন বিজেপির হাতছাড়া হয়েছে। তৃণমূল থেকে যাঁরা বিজেপিতে এসেছেন তাঁরা নির্বাচনে কটা জেলা বিজেপিকে উপহার দিতে পেরেছেন? দলকে এত কিছু দেওয়ার পর দল তাঁকে সমস্ত রকম দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এমনকি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার তালিকায় এই রাজ্য থেকে প্রথম নাম তাঁর ছিল বলে তিনি দাবি করে বলেন, আমায় বাদ দিয়ে শেষে কারা মন্ত্রী হলেন সেটা তো দেখেছেন। 

     

     

    তবে এই অভ্যন্তরীণ কলহে বিজেপির সঙ্কট বাড়বে। সুবিধা হবে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের। আখেরে রাজ্যের সাধারণ মানুষের তো কোনও লাভ হবে না! কেননা বিজেপি হচ্ছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর বিরুদ্ধেই দলের মধ্যে একটা বড় অংশ অসন্তুষ্ট হয়ে আছেন। যাঁরা শুভেন্দুর বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন তাঁদের শাস্তি হচ্ছে। আর কৈলাস বিজয়বর্গীয়র ছবির পাশে সারমেয়র ছবি লাগিয়ে সেটা নিজের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করে রেহাই পাচ্ছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়। কারণ তিনি শুভেন্দুকে যোগ্য বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন, এটাই মনে করছেন বিজেপির মধ্যে থাকা রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বের একটা বড় অংশ। এটাই এখন রাজ্যের প্রধান বিরেধী দলের অভ্যন্তরীণ রসায়ন।

     

    আরও পড়ুন: দেউচা যেন সিঙ্গুর না হয়

     

    আসলে সংসদীয় রাজনীতিতে বিরোধী দলের ভূমিকাটা অনেক বড়। তারা সেটা সঠিকভাবে পালন করতে না পারলে রাজ্যের জনসাধারণের ক্ষতি হয়। কারণ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে জনস্বার্থবিরোধী বা স্বৈরতান্ত্রিক কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে, তার গঠনমূলক সমালোচনা করে সরকারকে সঠিক পথে পরিচালনা করাই বিরোধী দলের কাজ।

     

     

    রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় ঘটা ঘটনা, দুর্ঘটনা, কোনও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ইত্যাদি বিষয়ে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে বিরোধী দলের কাজ। সরকারি কোনও নীতি জনজীবনে সমস্যার সৃষ্টি করলে সরকারের প্রতি জনগণের ক্ষোভ সরকারের সামনে তুলে ধরে বিরোধীরাই। এর ফলে সরকার জনবিরোধী কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করে। আর সেই বিরোধী দল নিজেরাই যদি অভ্যন্তরীণ কলহে সবসময় ব্যস্ত থাকে তাহলে জনস্বার্থে কাজ করবে কখন? কখনই বা সরকারের ত্রুটি সংশোধনে কাজ করবে?

     

     

    গণতন্ত্র রক্ষায় বিরোধীদের দায়িত্ব অতন্দ্র প্রহরীর মতো। তারা সব সময়ই যে শাসক দলের  সমালোচনা করে তাই নয়, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা করাও বিরোধীদের অন্যতম দায়িত্ব। যদি সেই বিরোধী দল বিজেপি, বিজেপিরই এক শ্রেণির নেতৃত্বের কথায় তৃণমূলের বি টিম হয়, তাহলে সেই বিরোধীরা যে সঠিক অর্থে বিরোধী দলের ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হবেই, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। 


    শিবপ্রিয় দাশগুপ্ত - এর অন্যান্য লেখা


    নেতাজির 125তম জন্মদিন নিয়ে কমিটি, প্রধানমন্ত্রী চেয়ারম্যান, নেই কোনও বৈঠক।

    কলকাতা পুর নির্বাচনে বামফ্রন্টের ইস্তাহার দেখে মনে হচ্ছে তৃণমূলের সাফল্য অনুসরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। 

    নজরে করোনা, আড়ালে বাড়ছে না তো ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া?

    ‘প্লাসমোডিয়াম ওভাল’, করোনার পাশাপাশি নতুন সমস্যা!

    গণতন্ত্র রক্ষায় অতন্ত্র প্রহরী হওয়ার বদলে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এখন দলীয় কোন্দলে বিদীর্ণ।

    ছিন্নমূল হয়ে ওপার থেকে এপার বাংলায় এসে বাজি বানিয়ে বুড়িমা কালীপুজোর মহালগ্নে বাঙালির শ্রেষ্ঠ ব্র্যান

    অন্তর্কলহেই শক্তিক্ষয়, মানুষের কথা বলবে কী করে বিরোধী বিজেপি?-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested