×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • করোনায় বাড়তি নজর, গোপনে বাড়ছে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, বলছেন চিকিৎসকরা

    শিবপ্রিয় দাশগুপ্ত | 30-11-2021

    প্রতীকী ছবি।

    রাজ্যে এই মুহূর্তে ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই। রাজ্যের স্বাস্থ্য (State Health Department) দফতর সম্প্রতি একটি  তথ্য প্রকাশ করে এই দাবি করেছে। এই তথ্য বলছে, গত দেড় বছরে পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে৷ তাই কোভিড পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বেগের বিশেষ কারণ নেই৷ তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, রাজ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণ কম হলেও এখনও হচ্ছে। তাই করোনার (Corona) দিকে নজর দিতে গিয়ে ডেঙ্গু (Dengue), ম্যালেরিয়া (Malaria), চিকনগুনিয়ার প্রতিরোধে কোনও ভাবেই গাফিলতি করা যাবে না। তাতে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতিই হবে।

     

     

    সরকার যখন ডেঙ্গু নিয়ে এই মত প্রকাশ করছে, রাজ্যের চিকিৎসকদের একটা বড় অংশের বক্তব্য তখন সরকারের সঙ্গে মিলছে না। বাস্তবেও দেখা যাচ্ছে, রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়ার মতো রোগের খবর আসছে। আসছে এই কারণেই বর্ষায় জল জমার যন্ত্রণা থেকে রাজ্য এখনও সার্বিক ভাবে মুক্তি পায়নি।

     

     

    রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণ শুরুর পরেই রাজ্যের স্বাস্থ্য সচেতনতার চেহারাটা আমূল বদলে গিয়েছে৷ অতীতেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন বহু মানুষ৷ তাতে বহু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছিল৷ তবে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এখন অনেক কম৷

     

    একই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে কলকাতা, দমদম, দুই 24 পরগনার স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলি থেকে। এই সব ল্যাবরেটরিতে ডেঙ্গু নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা করতে আসা রোগীর ভিড় নেই বললেই চলে৷ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, 2019 সালে রাজ্যে মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল 40 হাজারের বেশি৷ 2020 সালে এই সংখ্যা ছিল 5 হাজারের কিছু বেশি৷ আর 2021 সালে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা 250-রও কম।

     

     

    সরকারের এই মতের সঙ্গে আংশিক সহমত প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘এখন করোনার উপসর্গ নিয়ে কেউ হাসপাতালে এলে আমরা তাঁদের করোনা পরীক্ষার পাশাপাশি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া পরীক্ষা করিয়ে নিচ্ছি। এটাতে আমাদের যেমন সুবিধা হচ্ছে তেমনই রোগীদেরও ভাল হচ্ছে। কারণ, করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া বা চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ ওই রোগীর শরীরে থাকলে সেটা ধরা পড়ছে, চিকিৎসা হচ্ছে। তাই রাজ্যের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই বছর এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার আক্রমণ রাজ্যে তেমন ভাবে কামড় বসাতে পারেনি।’’

     

     

    তবে অরিন্দমবাবু সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, ‘‘এই বছর ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ বাড়েনি বলে জনস্বাস্থ্যের প্রতি নজর কমালে চলবে না। জমা জল দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে। না হলে সেই জলে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুর মশার জন্ম হবে। সেই মশা কামড়ালে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া হতেই পারে।’’ তবে অরিন্দমবাবুর আশা, শীতের প্রভাব যত বাড়বে মশার দাপট ততই কমে আসবে। তাই বলা যায় শীতটা ভাল করে পড়লেই ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

     

     

    চিকিৎসকরা বলছেন, করোনার ফলে রাজ্য জুড়ে দীর্ঘ দিন লকডাউন চলছে৷ অর্থনৈতিক কাজকর্ম থেকে শুরু করে নির্মাণকাজ সবই তার ফলে বন্ধ ছিল৷ রাস্তার পাশের খাবারের দোকান চলেনি। তাদের রান্নার জল, বালতিতে জমা জল তার ফলে ছিল না। বন্ধ ছিল গণপরিবহণ৷ এর ফলে গাড়ি মেরামতের দোকান বন্ধ ছিল, তাই টায়ারে জল জমতে পারেনি। এলাকায় এলাকায় সচেতনতাও ছিল৷এই সমস্ত কারণেই ডেঙ্গু কম হচ্ছে।

     

     

    তবে কি বলা যায় মানুষ সচেতন হয়েছে? বাস্তব কিন্তু উল্টো কথা বলছে। তাই এখনও রাস্তায় ডাবের খোলা, থার্মোকলের বাক্স ফেলে দেওয়া থেকে শুরু করে চৌবাচ্চায় জল জমিয়ে রাখার প্রবণতা নজরে আসছে৷ পাশাপাশি, করোনার সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে পাড়ায় পাড়ায় মশা মারার জন্য ধোঁয়া বা কীটনাশক ছড়ানোর জন্য পুরসভা যে কাজ করত সেই কাজ থমকে গিয়েছে।

     

     

    পুরসভার 70 নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর অসীম বসু বলেন, ‘‘পুজোর আগে বৃষ্টি হয়েছে লাগামছাড়া। সেই জল কোনও কোনও জায়গায় জমে গিয়েছে সেটা ঠিক। আর এই জমা জলে মশা জন্মেছে। তার কামড়ে ম্যালেরিয়া হয়েছে আমার ওয়ার্ডের কিছু মানুষের। আমরা ম্যালেরিয়া সংক্রমণের খবর পেলেই ব্লিচিং ছড়িয়ে দিচ্ছি সংশ্লিষ্ট বাড়িতে ও তার পার্শবর্তী বাড়িতে, রাস্তায়। আমরা এখন কো-অর্ডিনেটর। আমাদের আর এর চাইতে বেশি কী করার আছে?’’ অসীমবাবুর মতো কলকাতা পুরসভার অনেক কো-অর্ডিনেটরই এ ভাবে তাঁদের দায় সেরেছেন। তবে এরই মধ্যে মশা নিধনে কাজ করছেন 112 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কো-অর্ডিনেটর অনিতা কর মজুমদার, 98 নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কো-অর্ডিনেটর মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী। 115 নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর রত্না শূর।

     

     

    ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের সদস্য চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণ বলছেন, ‘‘যে সব কারণে ডেঙ্গু কমতে পারে, সে সব দেখা যাচ্ছে বলে আমার জানা নেই৷ স্যানিটাইজেশনের কোনও উন্নতি হয়নি৷ হয়তো করোনা নিয়ে বেশি সচেতন হওয়ার কারণে ডেঙ্গুর রেকর্ড ঠিকঠাক রাখা হয়নি৷” ভাইরোলজিস্ট অমিতাভ নন্দী বলেন, ‘‘গত বছর থেকে দেখা যাচ্ছে, মশার জ্বালায় থাকা যাচ্ছে না, কিন্তু অসুখগুলো নেই৷ সচেতনতা যদি হত, তা হলে মশা এত থাকত না৷ সরকারের তরফ থেকে মশাবাহিত রোগ নির্মূলের পদক্ষেপও সেই অর্থে নেওয়া হয়নি৷’’

     

     

    অমিতাভবাবু বলছেন, ‘‘রোগ দমনে ন্যাচারাল ইমিউনিটি ও ক্রস ইমিউনিটির প্রভাব আছে৷ হতে পারে প্রাকৃতিক নিয়মেই মানুষের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠেছে৷ দু’-এক বছর পর আবার প্রতিরোধ কমে গেলে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে৷ যেমন, কালাজ্বর ভারতে ২০-২৫ বছর পর পর ফিরে আসে৷’’ তাঁর বক্তব্য, করোনা ভাইরাসের শারীরিক গঠনের সঙ্গে অন্যান্য ভাইরাসের কিছুটা হলেও সাদৃশ্য থাকা অসম্ভব নয়৷ সেই কারণে করোনার প্রতি ইমিউনিটি তৈরি করার পাশাপাশি করোনা সংক্রমিত মানুষগুলির মধ্যে অন্যান্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে কিছুটা হলেও ইমিউনিটি তৈরি হয়ে থাকতেই পারে৷ এটাকে ক্রস ইমিউনিটি (Cross Immunity) বলা হয়৷ অর্থাৎ, এ জন্য ডেঙ্গু ও করোনা ভাইরাসের (Corona Virus) মধ্যে অ্যান্টিজেনিক সাদৃশ্য থাকতে পারে৷ করোনা এত বেশি মানুষের মধ্যে হয়েছে যে তাঁদের মধ্যে একটা ডেঙ্গু (Dengue) প্রতিরোধের ইমিউনিটি স্বাভাবিক ভাবেই গড়ে উঠেছে।

     

     

    তবে, এর পরেও বহু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, ডেঙ্গুর পরীক্ষা ঠিক ভাবে হচ্ছে কি না সে ব্যাপারে যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে৷ চিকিৎসকদের একাংশের মতে, অনেক রোগী একইসঙ্গে করোনা ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু তাঁদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে করোনার উল্লেখ করা হয়েছে, ডেঙ্গু লেখা হয়নি, এমন প্রমাণও রয়েছে৷ এতেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সঠিক হিসেব সামনে আসছে না। ডেঙ্গুর দাপট কমায় স্বস্তি এলেও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, বর্ষার জল জমে যাতে এডিস ইজিপ্টাই মশার বংশবৃদ্ধির অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে৷ দমদম ও দক্ষিণ দমদম, উত্তর 24 পরগনার মতো ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকায় নজরদারিতে ফাঁক রাখা হচ্ছে না বলে দাবি করছেন পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্যরা। পুর প্রশাসকরা দাবি করছেন, সচেতনতার প্রচার চলছে৷ মশার তেল ও জীবাণুনাশক ছড়ানো হচ্ছে৷ করোনার জন্য মশা নিধনের কাজে কোনও ঢিলেমি দেওয়া হয়নি৷ তবে তার পরেও ম্যালেরিয়ার খবর আসছে।

     


    শিবপ্রিয় দাশগুপ্ত - এর অন্যান্য লেখা


    Retro Fitting পদ্ধতিতে ডিজেল চালিত বাসকে সিএনজিতে রূপান্তরিত করায় মত নেই বিশেষজ্ঞদের।

    ছিন্নমূল হয়ে ওপার থেকে এপার বাংলায় এসে বাজি বানিয়ে বুড়িমা কালীপুজোর মহালগ্নে বাঙালির শ্রেষ্ঠ ব্র্যান

    কালী একাধারে সংহার ও সৃজনের দেবী

    গণতন্ত্র রক্ষায় অতন্ত্র প্রহরী হওয়ার বদলে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এখন দলীয় কোন্দলে বিদীর্ণ।

    প্রকৃতির ক্যানভাসে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মণীশ মিত্রের দেবী মঙ্গলকাব্য

    কলকাতায় সার্কাসের তাঁবু উধাও। একসময় শহরে শীতের বার্তা নিয়ে আসত এই সার্কাসের তাঁবু।

    করোনায় বাড়তি নজর, গোপনে বাড়ছে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, বলছেন চিকিৎসকরা -4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested