×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • ভাবনার দাসত্বেই হীনবল ভারত

    রিম্পা বিশ্বাস | 01-02-2022

    নিজস্ব ছবি

    অজানাকে জানার এবং অচেনাকে চেনার আকাঙ্ক্ষা থেকেই মানুষ তার সমগ্র ইতিহাস জুড়ে নানা উদ্ভাবনী সৃষ্টিকার্যে মগ্ন থেকেছে। কিন্তু রাষ্ট্র এবং সমাজের অচলায়তনে এসে থমকে গেছে ব্যক্তির মৌলিকত্ব, স্বকীয়তা। বিশেষ করে ভারতে বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনকে চিরকালই সম্মুখীন হয়ে হয়েছে সন্দেহে ভরা কুটিল প্রশ্নের মুখে। প্রথম নলজাতক মানবসন্তান (First test tube baby) থেকে শুরু করে মানুষের শরীরে শূকরের হৃদপিণ্ড স্থাপন (xenotransplantation) যে প্রবণতার দু'টি জাজ্জ্বল্যমাম উদাহরণ।


    সম্প্রতি আমেরিকার বাল্টিমোরে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক যুগান্তকারী কাজ হলমানবদেহে শূকরের হৃদযন্ত্রের সফল প্রতিস্থাপন হল! শূকরের জিনে মাত্র দশটি বদল ঘটিয়ে 57 বছর বয়সী একজন ব্যক্তির দেহে এই অস্ত্রোপচারটি করা হয়। এর জন্য সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকরা দেশ সেই দেশে সরকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সংবাদ মাধ্যমের অবিমিশ্র আনুকূল্য পেয়েছেন। বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে সেই বিষয়ে অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠিত কর্তৃপক্ষের যে পরীক্ষায় পাশ করতে হয়, তা তাঁরা করেছেন। কিন্তু বিষয়ে সম্পর্কে সমপূর্ণ অনভিজ্ঞ মাতব্বরদের খবরদারি তাঁদের সহ্য করতে হয়নি। মৌলিক গবেষণাকে সরকারের তরফে এতটা পৃষ্ঠপোষকতা করা হয় বলেই চিকিৎসাশাস্ত্রে নিত্যনতুন নানা আবিষ্কারের নিরিখে বিশ্বের মধ্যে সর্বাগ্রে রয়েছে আমেরিকা। সমষ্টির চিন্তাভাবনাকে রাষ্ট্রের উন্নয়নের কাজে প্রাধান্য দিলেও, আবিষ্কার ও গবেষণার ক্ষেত্রে আমেরিকা সর্বদাই ব্যক্তির স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দিয়েছে। এই ব্যক্তিস্বাতন্ত্র‍্যের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ায়  আমেরিকাকে কখনও কখনও দেশের মধ্যে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। কিন্তু জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে আমেরিকা এখনও পর্যন্ত এই ভাবনা থেকে পশ্চাদপসরণ করেনি।

    ভারতের ক্ষেত্রে বিষয়টি একেবারেই উলটো। এখানে মৌলিক গবেষণার জন্য কখনওই বিশেষ অর্থ, শ্রম কিংবা মনোযোগ ব্যয় করা হয় না। আবিষ্কারের ক্ষেত্রে খুব কমই আমরা ব্যক্তির ভাবনাগত স্বাতন্ত্র্যকে গুরুত্ব দিয়েছি। মানবদেহে শূকরের হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন কিংবা টেস্টটিউব বেবি-র মতো বেশ কিছু বৈপ্লবিক কাজের পরেও অন্যান্য শাখার মতো চিকিৎসাশাস্ত্রেরও এই দেশের কদর হয়নি। অথচ বিশ্বের তথাকথিত উন্নত দেশগুলি এইসব আবিষ্কারের মৌলিকত্ব ছিনিয়ে নিয়ে গেছে, আমরা 'চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে'-র মতোই অনেক পরে হৃদয়ঙ্গম করেছি যে, এই সব আবিষ্কার ও আবিষ্কর্তাদের কদর আমরা করিনি। নয়ের দশকে ডাক্তার ধনিরাম বড়ুয়া (Dhaniram Boruah) প্রথম মানব শরীরে জেনো- ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনেরXenotransplantion) কাজ করেছিলেন। ডাক্তার বড়ুয়া তখন দাবি করেছিলেন যে, শূকরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মানবদেহে জেনো-ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের কাজে সবচেয়ে বেশি উপযোগী। এই কারণেই 32 বছর বয়সী পূর্ণ সাইকিয়া নামক এক ব্যক্তিকে বড়ুয়া বেছে নিয়েছিলেন, যার হৃদপিণ্ডে ভেন্ট্রিকুলার স্ট্যাপলসের (Ventricular Staples) সমস্যা ছিল। 1997-এর 1 জানুয়ারি সাইকিয়ার শরীরে শুকরের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়।

    শূকরের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের প্রায় এক সপ্তাহ পর সাইকিয়া মারা যান।

     

    সম্ভাব্য আবিষ্কার-নেশায় মত্ত থেকে কোনও ব্যক্তির জীবন নিয়ে যথেচ্ছ পরীক্ষানিরীক্ষা করাকে এই প্রতিবেদনে কোনও রকম সমর্থন করা হচ্ছে না। ওই ঘটনার পরবর্তী কালে ডাক্তার বড়ুয়ার বিভিন্ন অবৈজ্ঞানিক দাবিও এই আলোচনায় প্রান্তিক গুরুত্ব পেতে পারে মাত্রকিন্তু শূকরের হৃদপিণ্ড মানবদেহে সংস্থাপনের যে ঘটনাটি বাস্তবে ঘটেছিল, সেই সম্পর্কে যথেষ্ট প্রামাণ্য বিজ্ঞানসম্মত অনুসন্ধানই করা হয়নিএই দেশেই বিশ্বের দ্বিতীয় টেস্ট-টিউব বেবির জন্মদাতা, ডাক্তার সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে সরকার ও সমাজের চাপে আত্মহননের পথ বেছে নিতে হয়। এমন অনেক সম্ভাবনাকেই ভারতে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তার জন্যই ধনিরাম বড়ুয়ারা "পাগলের ডাক্তার' হয়ে রয়ে যান। শাসনব্যবস্থায় অনেক আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করার "দোষে' মহম্মদ বিন তুঘলক যেমন ইতিহাসের পড়ুয়াদের কাছে "পাগলা রাজা' পরিচয়েই বেঁচে থাকেন।

     

    সমষ্টিগত ভাবনা (Collectivism) আর ভাবনার স্বাতন্ত্র‍বাদের (individualism) মধ্যে দ্বন্দ্ব নতুন কোনও বিষয় নয়। এই দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয় যে কোনও মৌলিক ভাবনার ক্ষেত্রে। বিশেষ করে যে সকল ভাবনা সময়ের চেয়ে অগ্ৰগামী, কিংবা যে সমস্ত ভাবনা সাবেক কাঠামোর বিরুদ্ধে যায়, সেই সমস্ত ভাবনাকে নস্যাৎ করেই রাষ্ট্র তথা প্রতিষ্ঠান স্বস্তি বোধ করে থাকে। ব্যক্তির একক চিন্তাকে "ভুল' বা "পাগলের প্রলাপ' বলে দেগে না দিয়ে, সেই চিন্তাকে যদি যথার্থ ভাবে পরিচর্যা করা যায়, ব্যবহারিক জীবনে কাজে লাগানো যায়, তাতে দেশের ও দশের কিছু মঙ্গল হলেও হতে পারে। ইউরোপের সেই জ্ঞানদীপ্তির যুগ থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত ভাবনার এই স্বাতন্ত্র‍্যকে গুরুত্ব দিয়েই সমাজ পেয়েছে নিত্যনতুন নানা আবিষ্কার, সৃষ্টি। 

     


    রিম্পা বিশ্বাস - এর অন্যান্য লেখা


    উত্তর কলকাতার সবচেয়ে পুরনো বাড়ি বর্তমানে যা রাষ্ট্রীয় সৌধ হিসেবে পরিচিত তাকে কেন্দ্র করে স্বাধীনত

    মানব সভ্যতায় সঙ্কট ও প্রয়োজনই সর্বদা আবিষ্কারের জন্ম দিয়েছে, কোভিড আবারও তা প্রমাণ করল। 

    ধর্মীয় বিশ্বাস কখনওই জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে না

    দেশের মহানগরগুলিতে নারী সুরক্ষার জন্য গঠিত নির্ভয়া তহবিলের টাকায় শহরে শুধুমাত্র আলো দেখা যায়।

    সংস্কৃতির নামে মানুষের জীবন নিয়ে ভয়ঙ্কর খেলা জালিকাট্টু চলছে, বিরোধিতা করে না কোনও রাজনৈতিক দলই

    সস্তা এলইডি আলোর রমরমায় বিপন্ন শহরের পাখিরা।

    ভাবনার দাসত্বেই হীনবল ভারত-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested