×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • ধর্মের সঙ্গে সব কিছু গুলিয়ে যায়, জনসংখ্যাও

    রিম্পা বিশ্বাস | 06-12-2021

    প্রতীকী ছবি

    বিশ্বে জনসংখ্যা(World Population) বৃদ্ধিতে ভারতের (India) ভূমিকাকে কেন্দ্র করে যে স্বতঃসিদ্ধ ধারণা করা হত তা বোধহয় ভবিষ্যতে ভুল প্রমাণিত হতে চলেছে। কারণ দেশে জনসংখ্যায় উর্বরতার হার (Population Growth) কমছে। গত 24 নভেম্বর প্রকাশিত জাতীয় পরিবার এবং স্বাস্থ্যসমীক্ষার (NFHS) তথ্য এই কথাই বলছে। উর্বরতার হার কমার ক্ষেত্রে যে কটি রাজ্য প্রথম সারিতে আছে পশ্চিমবঙ্গ তার অন্যতম। 2015-’16-র জাতীয় পরিবার এবং স্বাস্থ্য সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ভারতে জন্মের হার ছিল 2.2 2019-2020-তে তা কমে হয় 2.0, অর্থাৎ দেশের এক এক জন প্রজননক্ষম মহিলা গড়ে দুটি করে সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন। এবং রাজ্যে এর চেয়েও কম (1.6)

     

    জাতীয় পরিবার এবং স্বাস্থ্যসমীক্ষার (NFHS) তথ্য অনুযায়ী যে কয়েকটি রাজ্য উর্বরতার হারে কমের দিকে রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে গোয়া (1.3), কেরালা (1.8), অন্ধ্রপ্রদেশ (1.8), মহারাষ্ট্র(1.7), কর্নাটক (1.7), পাঞ্জাব (1.6) এবং পশ্চিমবঙ্গ (1.6) এর মধ্যে কেরল, মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম জনসংখ্যা অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বেশি তবুও তারা প্রথম সারিতে স্থান পেয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে দেখা যায় ধর্মের সঙ্গে আদপে জনসংখ্যার কোনও সম্পর্ক নেই, কিন্তু মেনে নেওয়া যায় কি?  এ ব্যাপারে সবিস্তার আলোচনার প্রয়োজন।

     

    যে কোনও দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি কয়েকটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন, দেশে মেয়েদের মধ্যম বয়স ( Median age) যে দেশে জনগোষ্ঠীর মধ্যে ‘সন্তান ধারণের উপযুক্ত বয়সে প্রবেশ করছে' এমন মেয়েদের সংখ্যা বেশি সেই দেশের জনসংখ্যা অন্যান্য দেশের জনসংখ্যার থেকে অপেক্ষাকৃত বেশি হয়। ভারতের ক্ষেত্রে এই মধ্যম বয়সের গড় হল 28 বছর। এই মধ্যম বয়সের গড় নির্ভর করে নারী শিক্ষা ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থার উপর। যে কোনও দেশে উচ্চশিক্ষিত নারীদের বিবাহ ও সন্তানধারণের বয়স অল্প শিক্ষিত নারীদের তুলনায় বেশি হয়। এ ছাড়া আর্থিক দিক থেকে দুর্বল পরিবারের নারীদের মধ্যে সন্তান নেওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায় কারণ এই সন্তানেরা পারিবারিক আয়ে ভূমিকা রাখতে পারে।

     

    জাতীয় উর্বরতার হার কমার পিছনে দেশের প্রতেকটি রাজ্যের ভূমিকা রয়েছে। পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে জাতীয় পরিবার এবং স্বাস্থ্য সমীক্ষার তথ্য চমকপ্রদ হলেও এই তথ্যের একটি নির্দিষ্ট ধারাবাহিকতা আছে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকেই জাতীয় উর্বরতার হার কমতে থাকে। অবশ্যই এর পিছনে রয়েছে সরকারি পরিবার পরিকল্পনা ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি। যার সূত্রপাত 1952 এ সরকারি সহায়তায় করা প্রথম পরিবার পরিকল্পনা যোজনা। 2016 -র পরিবার বিকাশ মিশন-এর ( Mission Pariwar Vikas) মাধ্যমে তা আরও উন্নত হয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নারীশিক্ষার বিষয়। ভারতের বেশির ভাগ মেয়ে এখনও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারে না ঠিকই, কিন্তু অনেক ছোট বয়স থেকে ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সরকারি খরচে শিক্ষাদান সমাজে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পারিবারিক জীবনে সিদ্ধান্ত গ্ৰহণে বিবাহিত মহিলাদের ভূমিকা যে বাড়ছে জাতীয় পরিবার এবং স্বাস্থ্য সমীক্ষার তথ্য এটাই নির্দেশ করে।

     

    জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে চিন্তাহীন ভাবে দায়ী করা  হয়। জাতীয় পরিবার এবং স্বাস্থ্য সমীক্ষায় পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে দেওয়া তথ্যের চিত্র অনুযায়ী সেই চিন্তাহীন দায়কে ভুল প্রমাণিত করা যায়। পশ্চিমবঙ্গের 30 শতাংশ জনসংখ্যা মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও 2015-2016 এবং 2019-2020 -এর সমীক্ষায় জন্মের হার কমের দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গ প্রথম সারির রাজ্যগুলির সঙ্গে রয়েছে। কেরালা (1.8), মহারাষ্ট্র (1.7), জম্মু কাশ্মীরে (1.4) মুসলিম জনসংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশি তবুও তাদের উর্বরতার হার জাতীয় স্তরের যথেষ্ট নীচে রয়েছে। অন্য দিকে উত্তরপ্রদেশ (2.4), বিহার (3.0), মেঘালয় (2.9), মণিপুর (2.2), ঝাড়খণ্ডের (2.3) মতো রাজ্যগুলি জাতীয় উর্বরতার হারের চেয়ে অনেক বেশি স্তরে রয়েছে। এই পার্থক্য স্বাভাবিক ভাবেই অনেক কিছুর উপর আলোকপাত করে। যা ধর্মীয় রংকে ছাড়িয়ে রাজ্যগুলির আর্থ-সামাজিক ব্যবধানকে চিহ্নিত করতে সহায়তা করে যার পশ্চাতে থাকে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব।

     

     1951-এর আদমশুমারি অনুসারে স্বাধীনতার পরে দেশে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা অন্যান্য ধর্মের জনসংখ্যার তুলনায় বেশি ছিল। অতএব ভারতে মুসলিম সমাজে উর্বরতার হার বেশি নয় বা কোনও দিন বেশি ছিল না এ কথা একেবারে ভুল। তবে তার নির্দিষ্ট কারণ ছিল, যা সম্পূর্ণ আর্থ-সামাজিক। মনে রাখতে হবে, আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে এই দেশের মুসলিম সমাজের পরিচয় হয়েছিল অনেক পরে। তাই সামাজিক ক্ষেত্রে তার প্রভাবও পরেছিল বেশ কযেক দশক পরে। তবে 1961 থেকে 2011 পর্যন্ত পাঁচটি আদমশুমারিতে দেখা যায়, ভারতীয় জনসংখ্যায় একটি স্থায়িত্ব এসেছে জন্মহার কমার দিক থেকে। এই জন্মহার কমার কৃতিত্ব কিন্তু দেশের সব ধর্মের মানুষেরই।

     


    রিম্পা বিশ্বাস - এর অন্যান্য লেখা


    একুশ যেভাবে ভাবতে শেখায়...

    সস্তা এলইডি আলোর রমরমায় বিপন্ন শহরের পাখিরা।

    সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বৈষম্যের শিকার হন গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী ছেলেমেয়েরা।

    হিজাব বা অন্য পোশাক নয়,মৌলবাদী শাসকদের আসল টার্গেট নারীর শিক্ষার অধিকার ও স্বাধীনতা।    

    সংস্কৃতির নামে মানুষের জীবন নিয়ে ভয়ঙ্কর খেলা জালিকাট্টু চলছে, বিরোধিতা করে না কোনও রাজনৈতিক দলই

    পুরুষতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় নারীদের উচ্চশিক্ষা মানায় না

    ধর্মের সঙ্গে সব কিছু গুলিয়ে যায়, জনসংখ্যাও-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested