×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • জয় কিষান কনভার্টেড টু জয় শ্রী রাম

    বিতান ঘোষ | 01-12-2020

    প্রতীকী ছবি।

    সকালের ধ্যান ও যোগাসন শেষে আনমনে বসেছিলেন রাজর্ষি, যিনি বহিরঙ্গে রাজা কিন্তু অন্তরে ঋষি। সন্ধে নাগাদ তাঁর বেনারসে বাতি জ্বালাতে যাওয়ার কথা। এমন সময়ে মনটা বড় অশান্ত লাগছে রাজর্ষির। ইদানিং এমন সব পরিস্থিতিতে রবীন্দ্রনাথের আশ্রয় নেন তিনি। তবে বাংলা জয়ে মুসলিম ভোট বড় ফ্যাক্টর। তাই, সঞ্চয়িতার পাশাপাশি সঞ্চিতাতেও চোখ বোলাতে হচ্ছে। মানে রবিঠাকুরকে সঙ্গে রেখেও নজরুলকেও একটু উল্টেপাল্টে দেখতে হচ্ছে। নজরুলের একটা কবিতা দু'দিনের চেষ্টায় মক্সো করেছেন, পরবর্তী "মনের কথা'য় বলবেন বলে। ঘোর দুর্দিনে সেই কবিতাই কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত হয়ে তার মনে ভেসে উঠল।

    ‘আসিতেছে বিপদের দিন,
    চাষিরা করিতেছে হম্বিতম্বি, চোখ রাঙাইছে চিন!’

    তাঁর দাড়ির বাড়বাড়ন্ত নিয়ে অনেকেরই মনে সন্দেহ জেগেছিল। প্রথমে সবাই ভেবেছিলেন বঙ্গ-বিজয়ে রবীন্দ্রনাথ সাজতেই রাজর্ষির এই উদ্যোগ। কিন্তু সাম্প্রতিক মনের কথায় তাঁর মুখে অরবিন্দ ঘোষের স্তুতি শুনে মনে হচ্ছে, অরবিন্দের মতো তিনিও চরমপন্থী নেতা থেকে পন্ডিচেরি মার্কা আশ্রমে গিয়ে ধর্মেকর্মে মন দিতে পারেন। যাইহোক, একদিন স্বপ্নে রাজর্ষি দেখছিলেন, তাঁর ব্যক্তিগত ক্ষৌরকার তাঁর সাধের দাড়িটি কেটে ফেলছে। তার আগে তাঁর সারা মুখাবয়বে ঠান্ডা জল লাগিয়ে দিয়েছেন ক্ষৌরকার। এটা দেখে তো ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়লেন রাজর্ষি। দিল্লির কনকনে ঠান্ডায় অমন ঠান্ডা জল! সেই সময় হেডমন্ত্রী এসে বার্তা দিলেন, ‘রাজন, দিল্লি সীমান্তে চাষিরা খুব হাঙ্গামা করছে, বলছে আমাদের আনা নতুন কৃষি আইন তারা মানবে না। আমরা যথাসাধ্য জলকামান এবং কাঁদানে গ্যাসের সেল ব্যবহার করছি।' জলকামান! রাজর্ষির গতরাতে দেখা ভয়ঙ্কর স্বপ্নটার কথা মনে পড়ে যায়। রাজর্ষি দু'দিন আগে থেকেই খবর পাচ্ছিলেন চাষিরা দিল্লি অভিমুখে এগিয়ে আসছে। তার হেডমন্ত্রীর দপ্তর চাষিদের সেই জমায়েতের কিছু ছবিও দেখিয়েছিল তাকে। সেই জমায়েতে মিশে থাকা বিভিন্ন বয়সের চাষিরা এই ঠান্ডায় ভিজে চৌপাট হচ্ছেন? ভেবেই আঁতকে ওঠেন রাজর্ষি।

    তাঁর ছাতির মাপ যদিও
    56 ইঞ্চি, কিন্তু এই সুবিস্তৃত ছাতির নিচে এক নরম মনও আছে, যার হদিশ দেশবাসীদের অনেকেই রাখেন না। যতই হোক, হিমালয় ফেরত হাফ-বিবাগী মন তাঁর, সাধারণ চাষা কষ্টে মরতে চলেছে তা কি তিনি সইতে পারেন? নিজের ঘরে জরুরি তলব করলেন হেডমন্ত্রীকে। বললেন, চাষিদের জন্য আইনটায় একটু বদল আনা যায় না? হেডমন্ত্রীর মাথায় চুল মোটে খান পাঁচেক, বাকিটা আকসাই চিনের ধূ-ধূ প্রান্তর। সেই মাথাতেই আঙুল ঘষে তিনি বললেন, ‘কিন্তু, দুই শিল্পপতি গোষ্ঠী আমদানি আর জামদানির থেকে তো হুকুম দেওয়া আছে, চাষের বাজার এবার তাদের হাতে তুলে দিতে হবে।'

     

    রাজর্ষি: ওদের একটু রিকোয়েস্ট করে দেখো না, যদি একটু নেগোশিয়েট করতে পারে।

    হেডমন্ত্রী: দাঁড়ান ওদের ফোন ঘুরিয়ে দেখি। (মনে মনে, আর বছর দুয়েক, তারপর আপনিও আপনার পদটা একটু নেগোশিয়েট করে আমায় দিয়ে দিন, আর মার্গদর্শক মন্ডলীতে গিয়ে ধৃতরাষ্ট্র হয়ে বসে থাকুন। আমি আপনার জন্মদিনে গিয়ে পায়েস খাইয়ে আসব।)

    হেডমন্ত্রী: রাজন, ওদের ফোনে পুরো বিষয়টা বলতেই ওরা রেগে কাঁই। বলছে, ওরা কোটি কোটি টাকা ঢালছে শুধু আপনার লার্জার দ্যান লাইফ ভাবমূর্তি তৈরিতে। প্রতিদানে খোলা বাজারে একটু খোলা হাতে লুটতে চাইছে। এতে বাধা দিলে ওরা নাকি আপনার ভাবমূর্তিকে ইউপিএ আমলের জিডিপি গ্রোথ থেকে আপনার আমলের জিডিপি গ্রোথে নামিয়ে দেবে।

    রাজর্ষি: (পাণ্ডুর মুখে) ছেড়ে দাও মন্ত্রী। আর নেগোশিয়েশনে কাজ নেই। কিন্তু এই কৃষকদের সামাল দিই কী করে? তোমার মাথা থেকে কিছু বেরোল?

    হেডমন্ত্রী: এখনই এত বিচলিত হয়ে পড়লে চলবে না রাজন। আমরা এখনই বিষয়টাকে অতটা পাত্তা দিচ্ছি না। আমরা মানুষকে বলছি, নতুন কৃষি আইন কতটা ভাল। আপনার কুর্তা পরা অবস্থায় লাঙল টানার ছবি চারদিকে ছড়িয়ে দিয়ে বলছি, আগামী পাঁচ বছরে কৃষকদের অবস্থা এমনই রাজকীয় হয়ে যাবে। মাঠে তারা মেহনত করে ফসল ফলাবে কিন্তু সাদা কুর্তায় কাদাই লাগবে না। হেঁহেঁ।

    রাজর্ষি: কিন্তু মন্ত্রী আমার যে বড় ভয় করছে এবার। আমি বাংলায় গিয়ে বক্তিমে দেব বলে আনন্দমঠ পড়ছিলাম। বঙ্কিম, অরবিন্দ এমনিতেই আমাদের হিডেন ওয়ারিয়র। তার কারণটা তুমি নিশ্চয়ই ভাল করে জানো। তা আনন্দমঠে জীবানন্দ, ভবানন্দর মতো চাষিরা কেমন ফিউরিয়াস হয়ে শাসকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তা উপন্যাসটা না পড়লে তুমি কল্পনাই করতে পারবে না৷ আমাদের ওপরও ওরা ঝাঁপিয়ে পড়বে না তো?

    হেডমন্ত্রী: (মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে) আরে না না। আমি কি এমনি এমনি বসে রয়েছি নাকি? ওদের ইতিমধ্যেই খলিস্তানি বলে দেগে দেওয়া হয়েছে। দুর্বলস্মৃতি জনগণের মনে নেই যে, আমরা এই কিছুদিন আগে পর্যন্ত, আটের দশকের নরমপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী অকালি দলের সঙ্গে ঘর করেছি। আর খলিস্তানি কারা? তারা খায় না মাখে, জনগণ কি অত বোঝে? ওরা দেশবিরোধী, এই আগ-মার্কটাই যথেষ্ট।

    রাজর্ষি: ওরা কি খুব কাছে চলে এল? যেন স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি, ‘জয় জওয়ান, জয় কিষান’ স্লোগান।

    হেডমন্ত্রী: চাপ নেবেন না রাজন। আমদানি আর জামদানি নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া এই জনসমাগমকে আমাদের জনসভা আর ওখানে তোলা স্লোগানকে ‘জয় শ্রী রাম’-এ কনভার্ট করে দেবে। আপনি
    1952-র ভাদোদারা স্টেশনে 2 টাকা কাপ চা বিক্রির দিনেই পড়ে আছেন দেখছি। কর্পোরেটদের ওপর ভরসা রাখুন। একদিকে আমি, আপনি আর অন্যদিকে ওরা। মাঝখানে অবোধ জনতা। ‘দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে, যাবে না ফিরে।' আপনার রবিন্দরনাথ টেগোরের কবিতা, মুখস্থ করে নেবেন। পরে কাজে লাগবে।


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    বামেদের শহীদ বেদীর সংখ্যা কমা আর তৃণমূলের ক্রমবর্দ্ধমান 'শহীদ স্মরণ’ সমানুপাতিক!

    বিপদের সম্মুখে অসহায় মানুষের আপাত দুর্বল জায়গাগুলো এইভাবেই বুঝি বেআব্রু হয়ে পড়ে।

    বাংলার রাজনীতি ও সংস্কৃতির এই অধোগমনে রবীন্দ্রনাথ ব্যথিতই হতেন।

    শাসক গ্যাস চেম্বারে সময়কে মারতে পারেনি, আমরা তাকে সবসময় আগলে রেখেছি।

    সরকার বিরোধী মত উঠে আসাতেই কি মন্ত্রীর কাছে ‘সাম্রাজ্যবাদী’ ইন্টারনেট?

    বাপের বাড়ির হালফিলের খবরে বিচলিত মা দুর্গা।

    জয় কিষান কনভার্টেড টু জয় শ্রী রাম-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested