ক্যান্সারকে হারিয়ে জীবনের নানান প্রতিকূলতা পেরিয়ে প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্য আজ একজন সফল ব্যবসায়ী। "বাঙালিদের দ্বারা ব্যবসা হয় না, মেয়েদের দ্বারা তো আরওই হয় না’ বলে যে প্রচলিত ভাবনা অনেকের মনেই আছে তাকে ভুল প্রমাণ করে এগিয়ে চলেছে প্রিয়াঙ্কা।
2020 লকডাউন চলছে গোটা দেশ জুড়ে। কাজ হারিয়েছে দেশের বহু মানুষ। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্য। তিনি যে কনস্ট্রাকশন ফার্মে চাকরি করতেন সেখান থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। এদিকে গোটা পরিবার, মা, বাবা, সহ বাড়ির দায়িত্ব তার উপর। কী করবেন বুঝতে পারেননি। তখন বন্ধু সপ্তর্ষি বৈশ্যর পরামর্শে “আনাড়ি’ শুরু করেন।
আনাড়ি প্রিয়াঙ্কার প্রতিষ্ঠানের নাম। "আনাড়ি’ কারণ তাঁরা দুই বন্ধু স্রেফ চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে ঠিক করেছিলেন ব্যবসা করতে হবে বাঁচতে গেলে, সংসারটাকে বাঁচাতে গেলে। কিছু করে খেতে হবে। এদিকে ব্যবসার কিছুই জানতেন না তাঁরা। শুধু জানতেন কেক বানাতে। সেটাকেই সম্বল করে যেহেতু তাঁদের পথ চলা শুরু তাই সংস্থার নাম হল আনাড়ি। বাড়িতে তৈরি খাবারের হোম ডেলিভারি সংস্থা।
প্রিয়াঙ্কা জানান, "আমরা প্রথমে কাপ কেক, কুকিজ নিয়ে শুরু করি। আমার কাছে মাত্র 5000 টাকা ছিল, ঘুরতে যাব বলে। সেটা দিয়েই শুরু। একটা ওটিজি আর কেক বানানোর সামগ্রী কিনি সেই টাকা দিয়ে। বানাই বিভিন্ন ধরনের কাপ কেক আর কুকিজ। তারপর ফেসবুকের মাধ্যমে তা প্রচার করা হয়।’ সব থেকে অভিনব বিষয় ছিল এই সংস্থার, সমস্ত কেকের নাম বাংলায় দেওয়া হয়েছিল। বাংলায় কেকের নাম! ব্যাপারটা অনেককেই আকৃষ্ট করেছিল।কোনও রকম পেড প্রমোশন না করে শুধু মাত্র বন্ধুদের রিভিউ, শেয়ার, লাইকের উপর ভরসা করেই ব্যবসা বাড়তে শুরু করে আনাড়ির।
আনাড়ি বা প্রিয়াঙ্কা কেউই তারপর কেক কুকিজে থেমে থাকেননি। তাঁরা সপ্তাহান্তে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের বেশ কিছু খাবারকে একসঙ্গে থালি হিসেবে কাস্টোমারদের কাছে নিয়ে আসতে থাকেন। এবং এখানেও ভাল সাড়া পান। কেক কুকিজের মতোই এক্ষেত্রে তাঁদের ইউএসপি ছিল জৈব বা বিষমুক্ত জিনিসের ব্যবহার। 2020 এর দুর্গাপুজোর সময় মাত্র তিনদিনে আনাড়ি ত্রিশ হাজার টাকার ব্যবসা করে।
নিজের ব্যবসা সম্পর্কে প্রিয়াঙ্কা বলেন, "প্রথম থেকেই ইচ্ছে ছিল নিজের একটা কিছু করব। কিন্তু কী জানতাম না। তার থেকে বড় কথা সাহস ছিল না। কিন্তু লকডাউনের ফলে যখন কাজ হারালাম কিছু একটা করতেই হতো, তখনই শুরু করা। প্রথমে ভাবতাম আমায় কেউ চেনে না, কে কিনবে আমার থেকে খাবার। মানুষের কাছে পৌঁছব কী করে। এখন সেখানে 300-350 জনের রান্না হয়।’ সাধারণ মানুষ তো বটেই সরকারি দপ্তরেও এখন আনাড়ির খাবার পৌঁছে যায়।
যেখানে প্রিয়াঙ্কা নিজে কাজ হারানোর পর নিজের সংসার বাঁচাতে গিয়ে এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন সেখানে তিনি আজ আরও চারজনকে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। কিন্তু শুধুই কী ব্যবসা?
আরও পড়ুন:অমৃতার ‘ন হন্যতে’ হয়ে ওঠা
প্রিয়াঙ্কা নিজের ব্যবসার পাশাপাশি নানান সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গেও যুক্ত। তিনি পুরুলিয়ার বিরহড় জনজাতিদের নিয়ে কাজ করেন বন্ধুদের সঙ্গে মিলে। সেখানকার মহিলাদের স্বনির্ভর করার চেষ্টায় ব্রতী তিনি। এছাড়া করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে যখন অর্ধেক কলকাতা কোয়ারেন্টাইনে তখন তিনি ব্যবসাকে এক পাশে সরিয়ে কোভিড কিচেন শুরু করেছিলেন। দক্ষিণ কলকাতা জুড়ে বহু মানুষের কাছে পুষ্টিযুক্ত খাবার পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি। যাঁরা পেরেছেন টাকার বিনিময়ে সেই খাবার নিয়েছেন, যাঁরা পারেননি তাঁদের বিনা অর্থেই একই পুষ্টিকর খাবার পৌঁছে দিয়েছে আনাড়ি।
যে প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে এত কথা, তিনি কিন্তু বরাবরই এমন যোদ্ধা নইলে কর্কটের মতো মারাত্মক রোগের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে আবার পূর্ণ জীবন শক্তি নিয়ে মূলস্রোতে ফিরে আসা হয়তো বড্ড কঠিন।একটা রোগ তাঁর গোটা সাজানো জীবন, সংসার ভেঙে দিয়েছিল। তারপরেও থামেননি তিনি। 2018 সালে যখন ক্যান্সার ধরা পড়ে বাঁ হাতে তিনি তার চিকিৎসা করান। সুস্থ হয়ে ওঠেন ক্রমশ। কিন্তু এখনও তাঁর সেই ক্যান্সার ফিরে আসার তুমুল সম্ভাবনা রয়েছে। তবুও সেসব ভেবে তিনি থেমে নেই। রোগকে ভুলে তিনি তাঁর কাজ নিয়েই ব্যস্ত আছেন। শহরের বহু মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন খাবার।
এই ব্যবসার মূলমন্ত্র কী? মাত্র দুবছরে এত কম পুঁজি নিয়েও কী করে এত ভাল ভাবে ব্যবসা দাঁড় করানো যায়? প্রিয়াঙ্কা বলেন, "আনাড়ির মন্ত্র তিনটে, কোয়ালিটি, কোয়ান্টিটি এবং সততা। আমরা কখনও এগুলোর সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করি না। একবার কথা দিলে যাই হয়ে যাক সেটাকে রাখি। নিজের 100 শতাংশ দিয়েই কাজটা করি।’
প্রিয়াঙ্কা শুধুই কলকাতার নয়, দেশ তথা বিশ্বের আরও অনেকের কাছেই একটা উদাহরণ স্বরূপ। জীবন বাধা, বিপত্তি আসবেই। কিন্তু তাই বলে তো থেমে থাকা যায় না। আর ইচ্ছে থাকলে স্বপ্নকে সফল করা যায়, একা হাতে একটা গোটা ব্যবসা দাঁড় করানো যায় সেটাই যেন তিনি সবাইকে দেখিয়ে দিলেন। যেখানে তিনি তাঁর অস্তিত্ব রক্ষার্থে এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন আজ সেই ব্যবসাই আরও পাঁচজনের বেঁচে থাকার, স্বাবলম্বী হওয়ার কারণ। নিজে যেটা ভাল পারতেন আজ সেই বেকারি আর রান্নাই তাঁকে যেন নতুন ভাবে বাঁচতে শিখিয়ে দিল।
বর্ষাকালে এখন আর রোজ রোজ বৃষ্টি হয় না, মাঝে মাঝে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি হয়।
সারোগেসির সুবিধা অসুবিধার কথা নিয়ে নতুন ছবি মিমি।
বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমারের খালবিলে থিকথিক করছে রাক্ষুসে সাকার মাছ
স্মরণকালের মধ্যে পূর্ব অ্যান্টার্কটিকায় গরম বাড়ছে নজিরবিহীনভাবে!
পদক পেলে তবেই উন্নয়ন দোরগোড়ায় আসবে, নতুবা নয়।
মৌমাছিবিহীন মধু তৈরি করছে ইজরায়েলি সংস্থা Bee-io যাতে শুধু মৌমাছিই বাঁচবে না