×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • যেতে পারি, কিন্তু কেন যাব: বদ্দা

    রজত কর্মকার | 10-11-2020

    তখনও হার স্বীকার করতে নারাজ ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজে।

    ‘এ কী হল, কেন হল, কবে হল, জানি না...

    শুরু হল, শেষ হল, কী যে হল জানি না তো...

    হুম হুম হুম...... এ কী হলওওওওওওও......

     

    আলো নিভিয়ে জানালার ধারে বসে ছোদ্দা কিশোর কুমারের গান শুনছেন। মাঝে মাঝে সুরুৎ সুরুৎ শব্দে গোমূত্র পান করছেন আর বড় বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন। বদ্দার যে এমন অবস্থা হবে তা ছোদ্দা স্বপ্নেও ভাবেননি। একে তো বদ্দার দেশে গিয়ে ভারতের গ্যাস লাড্ডু খাওয়ানোর চেষ্টা করেছেনভেবেছিলেন যে ভাবে জম্বুদ্বীপে ভাগ-বাটোয়ারা করে, বা যেখানে হারবে সেখানে বেচাকেনা করেন, সে ভাবেই ভোটের কেল্লা মেরে দেবেন। কিন্তু সাত সমুদ্দুর তেরো নদী পেরিয়ে একই ফর্মুলা খাটেনি। ডাহা ফেল। ছোদ্দার দেশে যা খুশি বলো, যা খুশি করো, রাজনীতিকদের সব ছাড় আছে। বদ্দাকে সে সব শিখিয়েছে সে। বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশুকে ভ্যাঙাও, সাদা-কালো চামড়ার ঘুঁটি সাজিয়ে সব ওলটপালট করে লুটেপুটে খাও। কিন্তু সে এখন অতীত...। হল না, কিস্যু হল না।

     

    বদ্দা তো এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না। ঘুমের মধ্যেও বলে উঠছেন, ‘আআআআআআআমি চুরি করিনি... বিশ্বাস করো.... আআআআআআআআমি চুরি করিনি।’ ঘুম ভাঙিয়ে মিলু বৌদি ঝাঁকিয়ে দিতেই পুরনো বদ্দা ফেরত আসছেন। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লাইন বলে ফেলছেন ‘যেতে পারি, কিন্তু কেন যাব...

     

    বদ্দার দেশে আবার কুশপুতুল পোড়ানো হয় না। দূষণ নিয়ে ও দেশের মানুষ সচেতন। খামোখা পুরনো জামাকাপড়... খড়-বিচালি এনে গ্যাসোলিন খরচ করে আগুন-টাগুন ধরিয়ে উল্লাস করা পোষায় না। ওখানে শৈল্পিক কায়দায় ভিজিয়ে ভিজিয়ে জুতো মারার রীতি। সোশাল মিডিয়ায় এমন বহু ভিডিও দেখেছেন বদ্দা। যেখানে তাঁর মূর্তির প্যান্টুল খুলে শ্বেতাঙ্গ পশ্চাৎদেশ বার করে রাখা হয়েছে, যার যখন মনে হচ্ছে ঢুই ঢাই খান দু’য়েক লাথি কষিয়ে চলে যাচ্ছেন। কোনও বিশৃঙ্খলা নেই, হট্টগোল নেই, দূষণ নেই। কিন্তু মনের ঝাল মিটছে পুরো মাত্রায়। এক বিখ্যাত নায়িকা আবার বদ্দার গো-হারান হারে ঘরের পাজামা পরেই রাস্তায় নেত্য করেছেন। সব ব্যাটা বদমাশ! সবাই মিলে চক্রান্ত করে বদ্দাকে হারিয়েছে।

     

    গো-হারান শব্দে বদ্দার মনে পড়ে যায়, গো-সন্তান ছোদ্দা তাঁর জয় নিয়ে একশো শতাংশ নিশ্চিত ছিল। ব্যাটা বেল্লিক, মর্কট... এখন ফোনের ওপার থেকে গ্যাস মারছে। ‘জয় বিদ্বান’ (জো বাইডেনকে এ নামেই ডাকছেন অনেক ভক্ত)-এর জয়ে গদগদ হয়ে ব্যাটা শুভেচ্ছাও জানিয়েছে। দেখাচ্ছি মজা। হঠাৎ মিলু বৌদিকে তিনি বলেন, ‘কই গো, ব্যাটা ছোদ্দাকে ফোন লাগাও তো...’ ঝাঁঝিয়ে উঠে বৌদি বলেন, ‘ধ্যাষ্টামো বন্ধ করো... যা করার নিজে করো। বাড়ি পাল্টাতে হবে। বিস্তর গোছগাছ আছে। বেশি কথা বললে স্রেফ পেঁদিয়ে বৃন্দাবন দেখাব। আগে বাড়ি পাল্টাই তার পর দেখাচ্ছি তোমার মজা। ভোটের আগে কত বড় বড় কথা... আট বছর নট নড়ন চড়ন... চারেই হাওয়া বেরিয়ে গেল... হুঃ।’

     

    বদ্দা দেখল হাওয়া ভাল নয়নিজেই হাত বাড়িয়ে মোবাইল নিয়ে ছোদ্দাকে ফোন করেন তিনি। বদ্দার নম্বর দেখেই ছোদ্দার হাওয়া টাইট। জানে গালাগাল দিয়ে কানের পোকা নাড়িয়ে দেবেন বদ্দা। তবুও মিনমিন করে ফোনটা ধরেই নাটক শুরু। প্রথমেই উচ্চস্বরে খানিক ভেউ ভেউ করে কেঁদে নেন। তার পর কাঁদো কাঁদো হয়ে বলেন, ‘কী বলব বদ্দা, খবর শোনার পর থেকে দু’চোখের পাতা এক করতে পারিনি। কিচ্ছুটি মুখে তুলিনি। এ আপনার কী অবস্থা প্রভু...’ বদ্দা রেগে বলেন, ‘অনেক ন্যাকামো হয়েছে। এবার থামো। বজ্জাতি তোমার দেশের জনতার সঙ্গে করো। ওসব নাকিকান্না আমি বুঝি। ব্যাটা আমার বিড়াল হয়ে আমাকেই ম্যাও দেখাচ্ছে...কী হল তোমার জ্যোতিষির ভবিষ্যদ্বাণী? সাপ-ব্যাঙ-শকুনির ঠ্যাং নিয়ে যে সার্কাস করলে, চ্যালা কাঠের গুষ্টি পুড়িয়ে তোমার চ্যালারা যে যজ্ঞ করল, তাতে আখেরে হলটা কী শুনি! খালি ধাপ্পাবাজি।’

     

    ছোদ্দা ফোনের এপারেই হাতজোড় করে বলেন, ‘বিশ্বাস করুন বদ্দা, আমি সব চেষ্টা করেছি, এখন আপনার দেশের পাবলিক যদি ঢপের লপসি না খায় তো আমি কী করব? আপনাকে প্রথমেই বলেছিলাম, জিশুর নামে একখান ঢাউস মন্দির বানিয়ে ফেলুন। পারলে অন্য কোনও উপাসনাস্থল ভেঙে ওখানে করুন, আর বলুন ‘মন্দির ওহি বনেগা...’আপনি শুনলেন না। আরে এ একেবারে শিওর শট চাল। ভাতে বাড়বেই। আমার দেশে দেখছেন না, নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসের উপর থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় ট্যাগ হাপিস করে দিয়েছি। আমার জাতভাইরা সে সব মাল মজুত করে ক্রাইসিস তৈরি করে দেদার কামাচ্ছে। কোনও ট্যাঁ ফোঁ আছে? ...সব কেমন চুপচাপ শান্ত হয়ে আছে। বেশি শিক্ষিত হলে এই হয়। আমায় দেখুন, আমি তো ইস্কুলের গণ্ডিও ঠিক করে...’

     

    ‘চুপ করো... তোমায় হাম্পটি-ডাম্পটি শিখিয়ে পড়িয়ে এ দেশে নিয়ে এলুম, কী করতে পারলে শুনি... যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা। তোমার পেটেন্ট নেওয়া 56-র গেরোতে আটকে গেলাম। উঠতে বসতে মিলু আমায় গালমন্দ করছে। ছেলেটাকে আমার মতো আটভাট বকা শিখিয়েছি ঠিকই, কিন্তু ওর দ্বারা হবে না। ওকে আমি আলাদা করে বলেছি, বেটা তুমসে না হো পায়েগা... তুমহারে লকছন ঠিক নেহি হ্যায়। এখানে পৈতৃক ব্যবসার মতো রাজনৈতিক ব্যবসা খুব কম পরিবার চালাতে পেরেছে। তোমার দেশের মতো নয়।

     

    ছোদ্দা সঙ্গে সঙ্গে ঢপের কীর্তন শুরু করে বলেন, ‘আমি বলি কী বদ্দা, আপনি এ দেশে চলে আসুন। নাগরিকত্ব নিয়ে চিন্তা নেই, আমি তো আছি। আপনার ডলারের তো অভাব নেই। আমার নামের কেয়ার ফান্ডে বেশ কিছু মাল দিয়ে দেবেন, ব্যাকডোর দিয়ে সে মালের বেশির ভাগটাই আপনার ঘরে ফেরত দিয়ে দেব। তার পর রাজনীতি। শুধু আপনি কেন, আপনার চোদ্দ পুরুষকে আর কিছু করতে হবে না, এ দেশের রাজনীতি এমনই দুগ্ধবতী গরুখালি দুইয়ে বালতি ভরে নিয়ে যান।

     

    ‘শোনো, একবার তোমার ঢপের কেরামতি দেখেছি, আর ও পথে পা বাড়াচ্ছি না। তুমি যেমন 56 নিয়ে আমার অভিশাপ হয়ে এসেছে... আমিও তোমায় অভিশাপ দিচ্ছি, ঢপেন্দ্র ছোদ্দা, তুমিও 56-র গেরোয় আটকে যাবে বারবারতোমার দিন শেষ...’ বলেই কুট করে ফোনের লাইন কেটে দেন বদ্দা।

     

    পাশ থেকে ছোদ্দার ডেপুটি জিজ্ঞাসা করেন, ‘কী ব্যাপার মোটাভাই, বদ্দা কী বললেন?’ ছোদ্দা কাঁচুমাচু মুখ করে বললেন, ‘আমায় অভিশাপ দিল, বলল আমিও 56-র গেরোয় আটকে যাব!’ জিভ কেটে টাক চুলকে ডেপুটি বলেন, ‘সব্বোনাশ! আজ সকালেই আপনার রাশিফল পড়ছিলাম, তাতে লেখা ছিল, যদি কোনও লালমুখো সায়েব আপনাকে অভিশাপ দেয় তবে তা ফলবেই।’

     

    কথা শুনে ছোদ্দা রেগে কাঁই। বললেন, ‘তো এইটা তুমি আগে বলবা না...?’

     

     


    রজত কর্মকার - এর অন্যান্য লেখা


    ৫ জানুয়ারি রবিবার সন্ধ্যায় জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখ ঢাকা গুন্ডাদের আক্রমণের পর এ ভাষায় গর্জে

    পোধানমন্তীর ডাকে সাড়া দিয়ে ঘটি-বাটি-খোল-করতাল-কাশি-বাঁশি সব নিয়ে দলবল-সহ বেরিয়ে পড়েছিলেন রাস্তায়।

    সম্প্রতি দিল্লিতে হিন্দু মহাসভা ‘ভগবানের অবতার করোনা ভাইরাস’ থেকে বাঁচতে গোমূত্র পার্টি অরগ্যানাইজ ক

    বিরাট অর্থনৈতিক ক্ষতে আপাতত মলমের কাজ করছে ওয়ার্ক ফর্ম হোম।

    এ বারের বক্তিমে “ছাত্রোঁ কে লিয়ে”। ওই “মিত্রোঁ”বলতে গিয়ে ছাত্রোঁ বলে ফেলেছেন। তা বলে ফেলেছেন যখন, তখ

    যে কোনও চলে যাওয়া শূন্যতা তৈরি করে যায়। এস পি-র শূন্যতা ভরাট হওয়ার নয়।

    যেতে পারি, কিন্তু কেন যাব: বদ্দা-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested