×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • অ্যাসিমভের কল্পনা আজ বাস্তব

    অয়ন্তিকা দত্ত মজুমদার | 09-05-2020

    অ্যাসিমভ

    স্কুলের সিলেবাসে, বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান লেখক, Isaac Asimov-এর লেখা একটা গল্প পড়েছিলাম, ‘The Fun They Had’গল্পটি 2157 সালের পড়াশোনার পদ্ধতি নিয়ে লেখা। 2157 সালে বসে, মার্জি নামের একটি ছোট্ট মেয়ে তার ডায়রিতে লিখছে যে, টম (মার্জির এক বন্ধু) একটা টেক্সট বই খুঁজে পেয়েছে। অর্থাৎ এমন একটা জিনিস যেখানে কাগজে অক্ষর ছাপিয়ে, সেই পাতাগুলো বাঁধিয়ে বই তৈরি হয়েছে। আমার-আপনার মনে হতেই পারে যে এতে অবাক হওয়ার কী আছে? আমাদের কাছে এটাই স্বাভাবিক। গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় 1951 সালে। লেখক সেই সময়েই কল্পনা করেছিলেন যে এমন একটা দিন আসবে যখন বইয়ের পাতায় ছাপা অক্ষর অতীত হয়ে যাবে। সকলেই ই-বুকে অভ্যস্ত হবে। শুধু তাই নয়, পড়াশোনার গোটা ধরনটাই বদলে যাবে। কোনও পড়ুয়াই তখন স্কুলে যাবে না। সকলেই মার্জি আর টমের মতো বাড়িতে, কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে, নির্দিষ্ট সময়ে বসে পড়বে নির্দিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনা করার জন্য। হোমওয়ার্কও জমা হবে পাঞ্চকোড-এর মাধ্যমে। প্রত্যেকের বয়স অনুযায়ী সিলেবাস সেট করা থাকবে ওই যন্ত্রের মধ্যেই। কল্পবিজ্ঞান!

     

    করোনার প্রকোপে প্রায় মাস দুয়েক ধরে স্কুল-কলেজ সব বন্ধ। তাই বলে পড়াশোনা আর কতদিন আটকে রাখা যায়। ফলে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই এখন অনলাইন ক্লাস চালু করেছেঅনলাইন অ্যাপ যেমন, গুগল মিট বা এমএস টিমস বা জুম ইত্যাদির মাধ্যমে চলছে পড়াশোনা। সিলেবাস যতটা এগিয়ে রাখা যায় আর কী! কখনও অ্যাপেই, আবার কখনও স্কুলের ওয়েবসাইটে আপলোড হয়ে যাচ্ছে হোমওয়ার্ক। সেগুলো সাবমিটও করতে হচ্ছে অনলাইনে দেখা-সাক্ষাৎ না করেই, স্কুলে না গিয়েই, নতুন ক্লাসরুমে পা না রেখেই পড়া এগোচ্ছে তরতর করে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা এই ব্যাপারটা এত বেশি উপভোগ করছে যে তারা প্রয়োজনের বেশি হোমওয়ার্ক করে ফেলছে, পড়াশোনায় উৎসাহ পাচ্ছেযদিও আমাদের দেশে এমন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাই হয়তো বেশি যাদের কাছে এই অনলাইন ক্লাসের সুবিধা এখনও পৌঁছায়নি। মূলত যারা গ্রামাঞ্চলের পড়ুয়া। সেটা আলাদা তর্কের বিষয়।

     

    তবে আমার চারপাশের ছাত্রছাত্রীদের এই অনলাইন ক্লাসের হিড়িক দেখে আমার ওই গল্পটির কথা বারবার মনে পড়ছেগল্পটি পড়ার সময় আমিও টম আর মার্জির মত খুব অবাক হয়েছিলাম। এরকমও হয় নাকি? স্কুলে না গিয়ে, টিউশনে না গিয়ে সর্বোপরি বন্ধুবান্ধবদের না চিনেই পড়াশোনা? কিন্তু যা দেখা যাচ্ছে, আমরা সত্যিই ধীরে ধীরে সেই দিকেই এগোচ্ছি না কি? এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, অনেক এডুটেক সংস্থা এই অবস্থাকে কাজে লাগিয়েই ফেঁদে ফেলেছেন ব্যবসা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলিত হয়ে তারা সেই সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলিকে এক ডোমেন তৈরি করে দিচ্ছেন যেখানে অনলাইন পড়াশোনার সব সুবিধা থাকবে। সেখানে শিক্ষক-শিক্ষিকারা লাইভ ভিডিওতে পড়াতে পারবেন, ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে অনলাইন ইন্টারঅ্যাকশন করতে পারবেন, ক্লাসওয়ার্ক-হোমওয়ার্ক সেটিংও থাকবে। বাড়িতেই ঠাঁই পাবে মার্জির সেই large and black and ugly, with a big screen on which all the lessons were shown and the questions were asked.

     

    করোনার চক্করে এই অনলাইন পড়াশোনার কথা ঘরে ঘরে শোনা যাচ্ছে ঠিকই, তবে ব্যাপারটা অতটাও নতুন নয়। বেশ কয়েক বছর ধরেই অনলাইন ক্লাসের একটা চল তৈরি হয়েছে দেশে। যাকে বলে লার্নিং অ্যাপক্লাস অনুযায়ী, সিলেবাস অনুযায়ী মুঠোফোনে শিশুকে নির্দিষ্ট বিষয়ে পড়ান অভিজ্ঞ শিক্ষকেরাকরোনা পরবর্তী বিশ্বে এই ব্যবস্থাই কী তবে স্থায়ী হবে? বিশ্ব কী তবে হিউম্যান টাচ ভুলে যান্ত্রিক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে?
     

     

     


    অয়ন্তিকা দত্ত মজুমদার - এর অন্যান্য লেখা


    সোশাল মিডিয়া ব্রেকিং নিউজ দেওয়ার উপযুক্ত স্থান নয়।

    এই মানুষগুলোর খাদ্যের ব্যবস্থাও কিন্তু রাষ্ট্রকেই করতে হবে

    এই বিশ্ব মহামারীর সুযোগ নিয়ে অনেক হ্যাকার ডানা মেলেছে

    পরিবেশ দূষণ, ভূমিক্ষয় ইত্যাদির ফলে প্রাকৃতিক দূর্যোগ এখন জলভাত। কিন্তু প্রাণ বাঁচানোর উপায় কী?

    জীবন অতিবাহিত করার জন্য পড়াশোনা আবশ্যিক, কিন্তু সেটাই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়

    এক সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞের মতে, এই অ্যাপ ব্যবহার করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

    অ্যাসিমভের কল্পনা আজ বাস্তব-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested