গৃহবন্দি থাকতে থাকতে অনেকেরই ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে। বৃহত্তর স্বার্থে এবং অবশ্যই নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে গৃহবন্দি থাকাই এখন শ্রেষ্ঠ উপায়। কিন্তু চার ঘন্টার নোটিসে এক মাসের জন্য ঘরবন্দি হয়ে পড়া দেশের লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের কী অবস্থা? কোথায় থাকছেন, কেমন আছেন তাঁরা? খোঁজ করলে জানা যাচ্ছে যে এক এক জনের ভাগ্য এক এক রকম। স্থানীয় প্রশাসন, রাজ্য সরকার যেখানে যেমন, আটকে পড়া শ্রমিকের হালও সেই রকম।
(শিল্পী- চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্য)
আচমকা লকডাউনের ফলে কাজ বন্ধ। বাড়ি ফিরতে চেয়েও ফিরতে পারেননি। দেশের অর্থনৈতিক রাজধানী তথা করোনারও এখন রাজধানী বলা চলে মুম্বইকে। সেখানকার ভিখরোলি ইস্টের ছবি। সেখানে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকছেন নয়নচাঁদ মণ্ডল। পেশায় রাজমিস্ত্রি। আসল বাড়ি বীরভূমের চাঁদপাড়া। সঙ্গে আটকে আরও প্রায় ১৫০-২০০ জন। কেউ বীরভূমেরই বাসিন্দা, কেউ আবার মুর্শিদাবাদের। দিন দশ-পনেরো আগে ‘বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ’-এর সাহায্যে চাল-আটা-চা-চিনির বন্দোবস্ত হয়। কিন্তু তাও এখন ফুরিয়েছে। প্রথম কিছুদিন একজন শেঠও (স্থানীয় ব্যবসায়ী) খাইয়েছিলেন। আপাতত জলের কোনও সমস্যা না থাকলেও কিন্তু খাদ্য সমস্যা দেখা যাচ্ছে। কাজকর্ম বন্ধ। এরপর খাবারের জোগান দেবে কে? যাঁদের হয়ে কাজ করতেন তাঁরাও আর ফোন তুলছেন না। শেষবার বলেছিলেন, কাজ না হলে তাঁরাই বা খাবারের যোগান দেবেন কীকরে! পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে কোনও সাহায্য পাওয়া গেছে কিনা প্রশ্ন করা হলে উত্তর আসে, ‘এরকম যে অবস্থা তা তো সকলেই জানতে পারছে। আমাদের সব কাগজপত্রও সরকার নিয়েছে।‘ কিন্তু সাহায্য মেলেনি।
দেশে করোনা মোকাবিলায় সবচেয়ে এগিয়ে কেরালা। খুব কঠোরভাবে এবং সুপরিকল্পিতভাবে সেখানে এর সংক্রমণ কমানো গেছে। কমেছে আক্রান্ত এবং মৃতের হারও। সেখানেও কাজের সন্ধানে যান অনেকেই। এমনই একজন আটকে পড়া হোটেলকর্মী রাজু শেখের কথায়, ‘কেরালায় সরকার থেকে সাহায্য করা হয়েছে। বহু শ্রমিকই সরকার দ্বারা বরাদ্দ খাদ্যসামগ্রী পেয়েছে। কিন্তু আমরা থাকি অন্যদিকে। এখানে সরকারের সাহায্য এসে পৌঁছয়নি।’
যে বিল্ডিংয়ে তাঁরা ভাড়া থাকতেন আপাতত সেখানেই গৃহবন্দি। মোট 16 জন মতো আছেন। কারোর বাড়ি মুর্শিদাবাদের জলঙ্গী, কারোর আবার নদীয়া জেলায়। বাড়ির সামনের মন্দিরের এক পুরোহিত প্রথমদিকে চাল-ডাল দিয়েছিলেন। সেটা ফুরোতেই নিজেদের সঞ্চিত অর্থ ভরসা। সেটাও শেষ হয়ে গেলে কী হবে, জানা নেই। কাছেই পঞ্চায়েত। সেখানে লিখিতভাবে জানানো হয়। কিন্তু তাঁদের দাবি, দু’বার করে জানানো হলেও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।
(শিল্পী- চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্য)
অন্যদিকে অবশ্য কাল অবধিও সাংঘাতিক চিত্র ছিল মাইথনের বি.এস.কে কলেজে। সেখানে আটকে প্রায় শ’তিনেক শ্রমিক। কারোর বাড়ি মুর্শিদাবাদ, কেউ বা বীরভূমের বাসিন্দা। কেউ পেটের তাগিদে কাজ করতে গেছিলেন ঔরঙ্গাবাদে, আবার কেউ ধানবাদে। সকলেই আটকে আছেন এই কলেজে। তেষ্টা মেটানোর জন্য জলও অমিল। ট্যাঙ্কারে জল দেওয়া হচ্ছিল, গতকাল সকাল থেকে সেটাও আর দেওয়া হচ্ছিল না বলে দাবি। এক সূত্র মারফত তাঁরা যোগাযোগ করেন ‘বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ’-এর সঙ্গে। খবরটা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নজরে আসতেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আপাতত ঝাড়খণ্ড সরকারের সহযোগিতায় সেখানে খাবার এবং জল দুইই পাওয়া যাচ্ছে।
কমবেশি এরকমই চিত্র দেশের আরও কিছু রাজ্যের। কোথাও শ্রমিকেরা খাবার পাচ্ছেন তো কোথাও তাঁরা অভুক্তই থেকে যাচ্ছেন। তৈরি হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশও। গোটা দেশে এখন যা অবস্থা, অনেকেরই ধারণা লকডাউন আরও বাড়তে পারে। স্বাস্থ্যের প্রয়োজনে সেই সিদ্ধান্ত যদি সরকার নেয়, তা আমাদের মানতেই হবে, সেটাই কর্তব্য আমাদের। কিন্তু এই প্রান্তিক মানুষগুলোর কী হবে? তাঁরা কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন কেউ জানে না। বিভিন্ন রাজ্যে সরকার ক্যাম্প করে পরিযায়ী শ্রমিকদের খাদ্য এবং বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছেন ঠিকই। কিন্তু তা সত্ত্বেও ক্যাম্পের বাইরে থেকে যাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। এই মানুষগুলোর খাদ্যের ব্যবস্থাও কিন্তু রাষ্ট্রকেই করতে হবে। নয়তো দেশের এই চিত্র দিনদিন আরও খারাপ হতে থাকবে।
'দঙ্গল'-এর মত হিট ছবির পর পরিচালক নীতেশ তিওয়ারির 'ছিঁছোড়ে' দ্বিতীয় পরিচালনা। কেমন হল সিনেমা?
তাস নিয়েই জব্বর কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন আলিপুরদুয়ার জংশনের শুভ্রনীল মিত্র।
পড়ন্ত বেলায় ইতিউতি চাউনি। যদি কেউ ভুল করেও ডাবের জলের খোঁজে আসেন।
নিজের মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা নজরে এলে সঙ্গে সঙ্গে সাহায্য নিন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের।
সবকিছুর মাঝে লাভ হয় বিল্লুর। দোকানে হুড়মুড়িয়ে বিক্রি শুরু হয় তার।
বাড়ি থেকে কাজে অন্তত চাকরি আছে, মাসের শেষে স্যালারি মিলছে। আপাতত অভিযোগ না করে এতেই সকলে খুশি।