লোকাল ট্রেনের চাকা ফের গড়াবে কবে? হাপিত্যেশ করে বসেছিল মানুষজন। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ একটু স্তিমিত হয়ে আসতেই লোকাল ট্রেন চলল, তবে বকলমে। মানে রেল, রাজ্য দুই তরফ থেকেই সরকারি ভাবে জানানো হয়েছে আপাতত লোকাল ট্রেন চলবে না। তবু হযবরল-র গেছো দাদার মতো লোকাল ট্রেন দিব্যি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলছে, সরকারের কর্তাব্যক্তিরাই শুধু প্রশাসনিক চশমার অন্দর থেকে তা দেখতে পাচ্ছেন না।
প্রথম শিয়ালদা ডিভিশন, তারপর হাওড়া— লোকাল ট্রেন চালু করার দাবিতে বিভিন্ন স্টেশনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন নিত্যযাত্রীরা। যাত্রীদের বিক্ষোভে আটকে পড়েছে স্টাফ স্পেশাল ট্রেন। শেষে সপ্তাহ দুই আগে কোনওরকম ঘোষণা ছাড়াই রেল সাধারণের জন্য লোকাল ট্রেনের দরজা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমে জংশন স্টেশন, তারপর ক্রমে মেজ-ছোট স্টেশনগুলো থেকেও দৈনিক টিকিট দেওয়া শুরু হয়। অবশ্য এক্ষেত্রে ঢাকঢাক গুড়গুড় ব্যাপার বজায় রেখে ট্রেনগুলির জন্য কোনও আলাদা নাম্বার বা নামের উল্লেখ থাকছে না। সব ট্রেনেরই গন্তব্য স্টেশনটির নামোল্লেখ করে বলা হচ্ছে, ‘স্টাফ স্পেশাল ট্রেন’! ট্রেনে উঠে তো চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। কামরা জুড়ে ভিড়ে ঠাসাঠাসি করে এতজন রেল ও স্বাস্থ্যকর্মী? তাও কি সম্ভব!
অবশ্য ট্রেনের নাম ধাম নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন নিত্যযাত্রীরা। তাঁদের একজনের কথায়, ‘গত বছর কোভিডের জন্য অফিস সবেতন ছুটি দিয়েছিল। এবারে ব্যাপারটা গা সওয়া হয়ে গেছে। এতদিন ট্রেন না চলায় দ্বিগুণ সময় ও অর্থ ব্যয় করে গন্তব্যে পৌঁছতে হয়েছে।' পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন হরিপালের বাসিন্দা সৌম্য দাশ। তাঁর কথায়, ‘ট্রেন হচ্ছে গ্রাম আর শহরের মধ্যেকার সেতু। অনেকগুলো যান পালটে এতটা পথ যেতে হত। এতে যা খরচ হত, তা প্রায় মাসিক আয়ের কাছাকাছি। লোকাল ট্রেন না চালানোয় আগে খুব ক্ষোভ প্রকাশ করেছি দুই সরকারের ওপর। এখন তাঁরা অস্বীকার করুন বা ট্রেনের নাম স্টাফ স্পেশাল দিন— কিছু যায় আসে না। আমরা আগের মতো আবার যাতায়াত করতে পারছি এই অনেক।'
দ্বিতীয় ঢেউয়ের গ্রাফ নিম্নমুখী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধাপে ধাপে বহু জিনিসের ওপর থেকেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু লোকাল ট্রেন চালানোর বিষয়ে তারা এখনও দ্বিধান্বিত। রাজ্যের যুক্তি এখনই লোকাল ট্রেন চালু করে দিলে, গ্রাম শহরের মানুষ একত্রে যাতায়াত শুরু করবেন। এতে সংক্রমণ বাড়বে। তাই গ্রামাঞ্চলে অন্তত 50 শতাংশ মানুষের টিকাদান না হলে এ ব্যাপারে এগোতে চায় না রাজ্য। কিন্তু এই যুক্তির পালটা যে প্রশ্নগুলো উঠছে, তা হল- লোকাল ট্রেন না চললে কি গ্রাম আর শহরের সংযোগ হচ্ছে না, না হয়নি? শহর মফঃস্বলের বাসগুলোতে বাদুড়ঝোলা ভিড় কীসের ইঙ্গিত দেয়? তাছাড়া রেল কর্তৃপক্ষ বকলমে ট্রেন চালাচ্ছে তা কি রাজ্য প্রশাসন, রাজ্যের প্রভাবশালী শাসকদল জানে না?
আরও পড়ুন: লোকাল ট্রেন চলাচল নিয়ে রাজ্য সরকারের দ্বিচারিতার ব্যাখ্যা নেই
অনেকেই মনে করছেন, এর পিছনে আছে রাজ্য সরকারের দায় এড়ানোর প্রবণতা। একদিকে রাজ্য প্রশাসনের নীরব সম্মতিতে ট্রেন চালানো হল, অন্যদিকে ঘোষণা করা হল ট্রেন চলবে না। একাধারে জনবাদী নীতি নিয়ে চলা শাসক জনগণের বিরাগভাজন হতে চাইল না, আবার প্রকাশ্যে ঢাকঢোল পিটিয়ে দেখানো হল কোভিড মোকাবিলায় তারা কতটা বুঝেশুনে পা ফেলতে চাইছে। এর পিছনেও যে রাজনীতির অঙ্ক নেই, তা নয়। রাজ্যের বকেয়া নির্বাচনগুলি দ্রুত নির্বাহ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে বারংবার তদ্বির করেছে শাসক তৃণমূল। তার জন্য রাজ্যের কোভিড গ্রাফ যে নিম্নমুখী, তা দেখানোর একটা দায় তাদের আছে। আবার লোকাল ট্রেন চালিয়ে সংক্রমণ যদি বাড়েও রেল এককভাবে তার দায় নিতে বাধ্য থাকবে। রাজ্য প্রশাসন দায়িত্ব নেবে না। রেলের দাবি, বারংবার যাত্রী বিক্ষোভে বিব্রত হয়ে তারা রাজ্য প্রশাসনের কাছ থেকে লোকাল ট্রেন চালানোর ব্যাপারে সবুজ সংকেত পাওয়ার আশা করেছিল৷ কিন্তু তা না হওয়ায় তারা ধাপে ধাপে যাত্রীদের জন্য ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে থাকে। আপাতত সকালের অফিস আওয়ার ও সন্ধের দিকে ট্রেনের সংখ্যা প্রায় আগের মতো হলেও দুপুর বা রাতের দিকে ট্রেন তুলনায় কম থাকছে। তবে এতে নিত্যযাত্রীদের বিশেষ অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
জনৈক রেল আধিকারিক বলছিলেন, ‘এর আগেও আমরা বহু জায়গায় কড়া চেকিং না দিয়ে, বা দেখেও না দেখার ভান করে বহু মানুষকে স্টাফ স্পেশালে যেতে দিয়েছি। কারও চাকরি যাক, এমনটা আমরা চাই না।' নিত্যযাত্রীদের একাংশও নির্দিষ্ট কিছু স্টেশনকে এড়িয়ে আগে পরের কিছু আনকোরা স্টেশনে নেমে বিনা বাধায় গন্তব্যে যেতেন। এখন তাঁরা বৈধ উপায়েই, নির্ভয়ে গন্তব্যে যেতে পারেন। বৈদ্যবাটির বাসিন্তা নিত্যযাত্রী অনন্ত সেনগুপ্তকে জিজ্ঞাসা করা গেল, কেমন লাগছে এখন? তিনি বললেন, ‘ভাল লাগছে এখন। চোরের মতো ট্রেনে উঠতে হচ্ছে না। বাবুরা আগে বলছিল, এসেনসিয়াল সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত মানুষরাই শুধু লোকাল ট্রেনে উঠতে পারবে। কিন্তু প্রত্যেকটা মানুষের কাছেই তাদের পেশাটা ভেরি এসেনসিয়াল।' অকাট্য যুক্তি, সন্দেহ নেই।
শুধুই কি উন্মাদনা, জনারণ্য আর আবেগ? মানুষের রুজিরুটিও তো এসব মেঠো সভা সমাবেশের সঙ্গে যুক্ত ছিল
সরকার বিরোধী মত উঠে আসাতেই কি মন্ত্রীর কাছে ‘সাম্রাজ্যবাদী’ ইন্টারনেট?
তালিবানি মৌলবাদের রোগ পালটা মৌলবাদী দাওয়াইতে সারবে না, এটা দেশের রাজনৈতিক তালেবরদের বুঝতে হবে।
দায়িত্বশীল নাগরিককে 74 বছর বয়সী স্বাধীন রাষ্ট্রের উপহার একটা কেক আর চকোলেট
নীলকন্ঠ পাখি ওড়াতে গিয়ে যারা নীলকন্ঠ হল যারা, তাদের প্রণাম।
এককালের নবজাগরিত কলকাতার বহু অন্তর্জলি যাত্রা দেখা নন-এসি মেট্রোর বিদায় হল গীতাপাঠের মাধ্যমে!