×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • মর্ত্য হতে বিদায়, পাতাল থেকে স্বর্গলোকে

    বিতান ঘোষ | 27-10-2021

    কলকাতার শেষ নন-এসি মেট্রো রেককে চিরবিদায় জানাচ্ছেন রেলকর্তারা।

    কলকাতা মেট্রোর (Kolkata metro rail) 37 তম জন্মদিনে সাড়ে তিন দশকের পথচলায় ইতি টানল নন-এসি মেট্রো রেক। কলকাতা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এখন থেকে সব রেকই বাতানুকূল হবে। কলকাতা মেট্রো রেলের জিএম প্রত্যুষ ঘোষ বলছিলেন, ‘37 বছরের বার্ধক্যের ভারে ক্রমশ ন্যুব্জ হয়ে পড়ছিল নন এসি মেট্রো (Non AC reck) পরিষেবা। আমাদের হাতে এখন পর্যাপ্ত এসি মেট্রো রেক এসে যাওয়ায় আমরা যাত্রীদের বহুদিনের প্রত্যাশা মতো বাতানুকূল কামরার মেট্রো চালাতে পারব।' সময়ের দাবি মেনে নিয়ে নন-এসি মেট্রোকে বিদায় জানিয়েও কিছুটা অতীতচারী, স্মৃতিভারাক্রান্ত মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। তাই, দেশের প্রথম মেট্রো রেককে তাই যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে, ফুল মালায় সাজিয়ে, মায় গীতাপাঠ করিয়ে আলভিদা জানানো হয়েছে। প্রত্যুষ বলছিলেন, হাওড়া স্টেশনের রেল মিউজিয়ামে (Howrah railway museum) ঠাঁই পাবে এই নন-এসি মেট্রো রেকের একটি, যাতে ভাবীকাল এই বর্ণময় যাত্রাপথকে পরবর্তীকালেও মনে রাখতে পারে

     

     

    চেন্নাই (তৎকালীন মাদ্রাজ)-এর ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি থেকে1984 সালে কলকাতায় এসেছিল দেশের প্রথম মেট্রো রেক। 1979 সাল থেকেই শহর কলকাতাকে যানজটের নাগপাশ থেকে মুক্ত করতে পাতালপথে কাজ শুরু হয়ে যায়। তারপর কলকাতা মেট্রো বহু দৃশ্য, বহু ঘটনা, বহু পট পরিবর্তনের সাক্ষী

     

     

    সাতের দশকের টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির শেষে রাজ্যে এসেছিল প্রথম বামফ্রন্ট সরকার। তারপর অপারেশন বর্গা থেকে পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ — বহু ঘটনার সাক্ষী তিলোত্তমা আর তার অন্তঃস্থল দিয়ে চলে যাওয়া কলকাতা মেট্রো। সেদিনের কলকাতা ক্রমে আর্থ-সামাজিক মানদণ্ডে নেমে গিয়েছে কয়েকগুণ। বড় বড় কর্পোরেট সংস্থা পাততাড়ি গুটিয়ে চলে গেছে দক্ষিণের ব্যাঙ্গালোর কিংবা পশ্চিমের মুম্বাইয়ে। কত স্বপ্নের অপমৃত্যু হতে দেখেছে কলকাতা মেট্রো। তার লাইনেই ঝাঁপ দিয়ে মুক্তি পেতে চেয়েছে ভাবীকালের কেউ কেউ

     

     

     

    মাথাপিছু আয়ে একসময় দেশের বাকি সব রাজ্যকে টেক্কা দেওয়া পশ্চিমবঙ্গ সামাজিক উন্নয়নের প্রায় সবক'টা মাপকাঠিতেই অন্যান্য অগ্রবর্তী রাজ্যগুলির থেকে পিছিয়ে পড়েছে। কলকাতাকেন্দ্রিক বাঙালি মনীষার যে বিশ্বব্যাপী কৌলীন্য ও সমাদর ছিল, তাতেও ধীরে ধীরে ক্ষয় এসেছে। এসব কিছুর সাক্ষী কলকাতা মেট্রো। বাংলা ও বাঙালির শিক্ষা, মেধা, শিল্পায়নের একের পর এক অন্তর্জলি যাত্রা দেখা কলকাতা মেট্রোর সাবেক রেককেও বিদায় জানানো হল গীতাপাঠের মধ্য দিয়ে। বিশ্বায়িত কলকাতা আরও অনেক কিছুর মতোই স্মৃতিপটে ঠেলে দিল তার অন্যতম এক আভরণকে

     

    আরও পড়ুন: স্মৃতি হাতড়ায় মফঃস্বলের পুজো

     

    কলকাতার পরে দেশের অন্য মেট্রো সিটিগুলিতেও পাতাল রেল এসেছে। প্রযুক্তি, সময়ানুবর্তিতায় তারা শুরু থেকেই কলকাতা মেট্রোর তুলনায় কয়েক কদম এগিয়ে গেছে। তবু গুরুগম্ভীর আওয়াজে, খানিক মান্ধাতা আমলের প্রযুক্তি নিয়েই এতকাল ছুটে চলেছে কলকাতা মেট্রো। তাই খানিক আবেগতাড়িত পাতাল পথের দৈনন্দিন সওয়ারিরা। তাঁদেরই একজন বলছিলেন, ‘শেষ কয়েক বছর আমরাও চেয়েছি নন-এসি রেক তুলে সব রেক বাতানুকূল করা হোক। এমনকি অনেক সময় আমরা নন-এসি রেক ছেড়ে পরবর্তী বাতানুকূল রেলের জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু পুরনো এই রেকগুলো সেই ছাত্রবেলা থেকে আমাদের সঙ্গী। সেই ঘরঘর আওয়াজের বড় পাখা, খোলা জানলা দিয়ে অন্ধকার সুড়ঙ্গে ছুটে চলা, হালের ডিসপ্লে বোর্ডহীন কামরায়, কোনদিকে পার্ক স্ট্রিট কিংবা কালীঘাট পড়বে জিজ্ঞেস করা— এসব কি ভোলা যায়?’

     

     

    সত্যিই তো, সময়ের বলিরেখা বার্ধক্যের শরীরে ফুটে উঠলেই সবকিছু ভুলে ফেলা যায়? শহর কলকাতার সিগনেচার স্টাইল বলতে যা কিছু বোঝায়, তাদের মধ্যে হলুদ ট্যাক্সি, ট্রাম এবং কলকাতার সাবেক নন-এসি মেট্রো সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। দ্রুতগতির জীবনে এরা যতই বেমানান হোক, এদের চিরবিদায় জানাতে মন সায় দেয় না যে। ডমিনিক ল্য পিঁয়ের তাঁর ‘সিটি অফ জয়’ গ্রন্থে যে বোহেমিয়ান, আপন খেয়ালে চলা এক শহরের নগরজীবনের ছবি এঁকেছেন, এই সবগুলো যেন তার সঙ্গে মানানসই। গতির দুনিয়ায় কলকাতা মেট্রোও তাই আপন গাম্ভীর্যে পাতাল দাপিয়ে বেরিয়ে এসেছে এতকাল

     


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    শিল্পীর শিল্প কালোত্তীর্ণ হয় মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় সরকারের দেওয়া রাষ্ট্রীয় খেতাবে নয়।

    ইতিহাস শুধু অতীতের স্মৃতিচারণ নয়, সেটা বর্তমানের পটভূমিতে অতীতকে জরিপ করে নেওয়াও বটে।

    সোশাল মি়ডিয়া আর রাজনীতিতে রামের একচ্ছত্র আধিপত্য় হরণ করে এবার আবির্ভূত হলেন কৃষ্ণ!

    এইসব মানুষগুলোর সুরাহা করে দিতে দেশের ‘অর্থমন্ত্রী' নামক এক চরিত্র তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেবেন বলছেন।

    বালিগঞ্জ উপনির্বাচনে বাবুল সুপ্রিয়র জয়ে প্রমাণ হল শাসক দলে ভিড়লে সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত হওয়া যায়!

    কথা রাখে না সরকার, রেললাইনে মরাই যেন ভবিতব্য পরিযায়ী শ্রমিকদের।

    মর্ত্য হতে বিদায়, পাতাল থেকে স্বর্গলোকে-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested