করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বের মতোই ভারতও লড়ছে। অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও, ওয়াকিবহাল মহল মনে করছেন, আমাদের এখনও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। এই দীর্ঘ সময়জুড়ে জনপরিসরে করোনা নিয়ে নানা রকম কথা শোনা যাচ্ছে, যার কিছুটা সত্যি, বাকিটা অর্ধসত্য বা মিথ্যা। আতঙ্কিত মানুষ কোনটাকে সত্য বলে মানবেন? ঠিক কী উপায়ে রোখা যাবে এই মহামারীকে? জনমানসে তৈরি হওয়া এই প্রশ্নগুলোকে নিয়েই www.4thpillars.com ডাঃ কৌশিক মজুমদারের সঙ্গে একটি লাইভ আলোচনার আয়োজন করেছিল। অভিজ্ঞ ডাক্তারবাবুর পরামর্শে দর্শকদের অনেক বিভ্রান্তির অবসান হল বলা চলে।
1) স্বাস্থ্যকর্মীদের সচেতন থাকতে হবে ভীষণভাবে। এই রোগে মৃত্যুহার কম হলেও দুর্বল করে দেয় এই রোগ, ফুসফুসেরও ক্ষতি করতে পারে। ফলে সবসময় মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা উচিত।
2) শুরুতে জ্বর, কাশি, হালকা শ্বাসকষ্ট, স্বাদহীনতা, গাঁটে গাঁটে ব্যথা— বিশেষত আঙুল, পায়ের পাতায় ব্যথা, আচ্ছন্ন ভাব থাকা প্রভৃতি হল করোনার উপসর্গ। এগুলো হলেই সচেতন হতে হবে, ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
3) করোনা মৃত্যুর মুখে ঠেলছে না ঠিকই, কারণ পরিসংখ্যান বলছে 100 জন প্রতি 2 জন মারা যাচ্ছেন। কিন্তু অন্য যে সমস্ত রোগ আছে, তাকে উসকে দিচ্ছে করোনা।
4) মানুষ এখনও সচেতন নন। মাস্ক ব্যবহার করছেন না অনেকেই, সামাজিক দূরত্বও মানছেন না। এই রোগকে এত হালকা ভাবে না নেওয়াই উচিত। কো-মর্বিডিটি, বিশেষত ডায়াবেটিস করোনার বিরুদ্ধে সামগ্রিক লড়াইটাকে দুর্বল করছে। এই রোগটাকে সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ভাবছেন চিকিৎসকদের অনেকে। চিকিৎসকরা এমন মনোভাব নিয়ে চললে সাধারণ মানুষও কিন্তু এমনটাই ভাববে। রাস্তাঘাটে যারা নিয়মবিধি না মেনে বেরোচ্ছেন, পুলিশকেই তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
5) ইংল্যান্ড কিন্তু এই মহামারীকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে সামাজিক দূরত্ববিধি, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার প্রভৃতি সাধারণ সুরক্ষাবিধি মেনে চলে। আমাদের দেশে এই বিষয়ে নিশ্চয়ই কিছু গাফিলতি থেকে যাচ্ছে।
6) যাঁদের ডায়াবেটিস আছে বা এমন ওষুধ খান যাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়— তাঁদের এখন একটু "আইসোলেট' করে রাখতে হবে।
7) প্রচারমাধ্যম, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের সচেতনতার প্রসারে এগিয়ে আসতে হবে। কেন এবং কীভাবে মাস্ক পরা উচিত, হাতে-কলমে সেটা দেখাতে পারলে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতার বার্তা দেওয়া সম্ভব। এর আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, দেশের প্রধানমন্ত্রী দেখিয়েছিলেন কীভাবে মাস্ক পরতে হয়। এখন কিন্তু সেটার ধারাবাহিকতা আর দেখা যাচ্ছে না।
8) আমার কিছু হবে না— এমন ভাবনা খুবই বিপজ্জনক। মহামারীটা অনেকের কাছে একঘেয়ে হয়ে গেছে, এটা সত্যি। কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে, করোনার সঙ্গে লড়াইটা আমরা এখনও জিতিনি। তাই, নিয়ম মেনেই চলতে হবে।
9) ইংল্যান্ডে আমি কোভিড আক্রান্ত রোগীকে সাহায্য করেছি। সুরক্ষাবিধি মেনে, সাবধানতা অবলম্বন করে কোভিড রোগীকে সাহায্য করা সম্ভব। কিন্তু আমাদের এখানে যেটা হচ্ছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা ডাক্তাররা কিন্তু পোশাক পাল্টে পিপিই পরে রোগী দেখছি। আবার পিপিই খুলে আগের পোশাক পরছি। এরপরেও আমাদের উপর ফতোয়া জারি করলে মুশকিল। আমরা প্রয়োজনীয় সুরক্ষাবিধি মেনেই কাজ করছি।
10) করোনার বিরুদ্ধে লড়াইটা "যুদ্ধ' হিসাবে দেখাটা ঠিক নয়। এটা একটা আর পাঁচটা রোগের মতোই একটা অসুখ। টিবি, ম্যালেরিয়ার মতো রোগে এর চেয়ে অনেক বেশি মানুষ মারা যান। করোনাকে "যুদ্ধ' আখ্যা দিয়ে, একটা আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। সেই সঙ্গে আমরা কিছু মানবিক মূল্যবোধের সঙ্গেও আপস করছি।
11) 65 বছরের ঊর্ধ্বে যাঁরা এবং যাঁদের কো-মর্বিডিটিস আছে, তাঁদের জ্বর হলেই ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। 60 বছরের নীচে যাঁদের বয়স এবং যাঁদের শুধু জ্বর আছে, কিন্তু অন্য কোনও রোগ বা উপসর্গ নেই, তাঁরা বাড়িতে থেকেই প্যারাসিটামল খেতে পারেন। তবে, তিনদিনের মধ্যে জ্বর না ছাড়লে ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন। 60 বছরের নীচে বয়স অথচ উপসর্গ আছে, এমন ব্যক্তিদের অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত। তেমন উপসর্গ না থাকলে বা তেমন শরীর খারাপ না হলে হসপিটালে ভর্তি হওয়ার দরকার নেই। প্রবীন নাগরিকরা আক্রান্ত হলেও জ্বর নাও থাকতে পারে। জ্বর বা কাশি না হলেও শরীরে যদি অস্বাভাবিক কোনও উপসর্গ থাকে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
12) এক শ্রেণির লোক মনে করছেন, "আমার কিছু হবে না'। আর এক শ্রেনির মানুষ অহেতুক প্যানিক করছেন। এই দু'টোকেই পরিত্যাগ করা উচিত।
13) বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে উপসর্গ থাকলে ব্যক্তিটি কোভিড পজিটিভ হতে পারেন। কিন্তু উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও কোভিড পজিটিভ না হলে বুকের এক্স-রে এবং মাথার স্ক্যান করা উচিত।
14) রোগী আক্রান্ত হলে বা অসুস্থ হলে কোথায় যাবে এটা একটা বড় প্রশ্ন, রোগীর পরিবার-পরিজনের কাছে এটা একটা দুঃস্বপ্নও বটে। যাদের বয়স 60-এর নীচে, কো-মর্বিডিটিস নেই, উপসর্গহীন কিংবা মৃদু উপসর্গযুক্ত— তারা বাড়িতে থাকতে পারেন।
15) করোনায় আক্রান্ত হলে সবাই মেডিকেল কলেজে আসতে চাইছেন। মাঝারি বা মৃদু উপসর্গের জন্য জেলা হাসপাতালগুলোর উপরেই ভরসা রাখুন।
16) রোগী বাড়িতে থাকলে বারবার টেম্পারেচার মাপা উচিত, সঙ্গে পালস অক্সিমিটার দিয়ে অক্সিজেন লেভেল। 92-এর নীচে অক্সিজেন লেভেল থাকা মানেই তা বিপজ্জনক। সিওপিডি-র মতো রোগ থাকলে স্যাচুরেশন লেভেল 92 মতো থাকতে পারে।
17) হোয়াটসঅ্যাপ বিশ্ববিদ্যালয়কে বেশি ভরসা না করাই ভাল। অহেতুক বিষয়কে জটিল করবেন না। অতিরিক্ত আতঙ্ক কিংবা বেপরোয়া ভাব— দু'টোই নিষ্প্রয়োজন। প্রয়োজনে ডাক্তারবাবুদের পরামর্শ নিন। অযথা আতঙ্কিত না হয়ে রোগটার বিরুদ্ধে লড়াই করুন।
সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই শাস্তি পেতে হচ্ছে। বিশেষ উদ্দেশ্য থেকেই ইউএপিএ আইনে বদল আনা হয়েছে।
সবাই জানত করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসবে এবং সেটা আরও মারাত্মক হবে। তবু কেউ সচেতন হল না।
লকডাউনের উদ্দেশ্যকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে দিল প্রবাসী শ্রমিকদের ঘরে ফেরা।
মুসলিম পরিবারে হিন্দু মেয়ের বিয়ে নাকি লাভ জিহাদ - প্রেমের নামে ধর্ম প্রচার!
ইন্টারনেট সাম্রাজ্যবাদ মানবে না ভারত, বলছেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী।
সাধারণ মানুষ আর কি কমিশন কিংবা আধাসেনার ওপর ভরসা করে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে?