দেশের অন্যতম বড় গয়না প্রস্তুতকারক সংস্থা উৎসবের মরশুমে বাধ্য হল, তাদের অডিও ভিস্যুয়াল বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে নিতে। মুসলিম পরিবারে হিন্দু মেয়ের বিয়ে নাকি লাভ জিহাদ - প্রেমের নামে ধর্ম প্রচার! মত প্রকাশের স্বাধীনতা কি শুধু সংবিধানের পাতায় আটকে থাকবে? এই নিয়েই গত 16 অক্টোবর, শুক্রবার www.4thpillars.com একটি আলোচনার আয়োজন করেছিল। এই আলোচনায় সাংবাদিক সুদীপ্ত সেনগুপ্তের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্রকার সুব্রত সেন এবং সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র।
1) এ দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নতুন কোনও ঘটনা নয়। এর আগেও মকবুল ফিদা হোসেনকে নগ্ন সরস্বতী আঁকায় দায়ে দেশ ছাড়তে হয়েছে। এমনকি বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ আইন রুখতেও বহু মানুষ জোট বেঁধেছিলেন। এখন তো গান্ধী ঘাতক গডসের সমর্থনেও মিছিল বেরোচ্ছে। আসলে এই বিদ্বেষ, একমুখিনতা আগেও ছিল। রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়ে এখন সেটাই এমন উগ্র রূপে প্রকাশ পাচ্ছে।
2) কোনও ধারণাকে সবার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার এই 'ট্রেন্ড' মোটামুটি 2010 সাল থেকেই চলে আসছে। মূলত সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে কোনও মিথ্যা কিংবা অর্ধসত্যকেও প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা হচ্ছে। এখন কোনও ঘটনা বা বিষয়বস্তুকে প্রচারের আলোয় আনার সহজতম উপায় হল সেটা সম্পর্কে ব্যঙ্গ, বক্রোক্তি দিয়ে আক্রমণ (ট্রোল) করা। বিভিন্ন দেশের নির্বাচনেও সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে একমুখী একটা প্রচার করে ভোটের ফলে প্রভাব বিস্তার করা হচ্ছে। সোশাল মিডিয়া শক্তিশালী হওয়ার আগে এমনটা দেখা যেত না।
3) 'ধর্মনিরপেক্ষ' শব্দটিকেও ঠাট্টার পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছে। মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যঙ্গ করে বলছেন, আপনি হঠাৎ সেকুলার হয়ে গেলেন নাকি? ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটি সংবিধানের প্রস্তাবনায় পরে যুক্ত হলেও, তা কিন্তু গোড়া থেকেই সংবিধানের ধারণার মধ্যে নিহিত ছিল। সংবিধানের অন্যতম এই আদর্শটিকেই এখন অসুস্থতার পর্যায়ে (সিকিউলার) ফেলার চেষ্টা চলছে।
4) এমনও হতে পারে, বিতর্ক হবে জেনেই সংস্থাটি এমন বিজ্ঞাপন তৈরি করেছিল। ফলে তারা আরও বেশি প্রচারের আলোয় আসতে পারল। উল্টোদিকে, সেই সেলুলয়েডের 'অমর-আকবর-অ্যান্টনি' হোক কিংবা 'লগান', ভিন্ন ধর্ম কিংবা জাতের মধ্যে একতার একটা ছবি দেখিয়ে বিজ্ঞাপন করাটা কিন্তু অনেকদিন ধরেই চলে আসছে। বিজ্ঞাপন নির্মাতারাও মনে হয় ভাবেননি, তাদের এমন বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হবে।
5) বিগত দিনে দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। দেশের একটা অংশকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া হচ্ছে না। এই কাজে রাষ্ট্রেরও সমর্থন মিলছে, যেটা আগে কখনও হয়নি। আশঙ্কার জায়গা মূলত এটাই।
6) একটি বাণিজ্যিক সংস্থার বিজ্ঞাপন আটকে দেওয়া বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। 2014 সালে নব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী 'সব কা সাথ, সব কা বিকাশ'-এর কথা বললেও ধারাবাহিক ভাবে আখলাক, আফরাজুলদের ঘটনাগুলো ঘটে গেছে। গোটা দেশে একটা সংগঠিত রাজনৈতিক হিন্দুত্বের আস্ফালন দেখা যাচ্ছে, যার একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা আছে। কিন্তু চিরায়ত হিন্দুত্বের উদারতা নেই।
7) 'লাভ জিহাদ' বা ধর্মান্তরকরণের যে বিষয়টির কথা বলা হচ্ছে, তার স্বপক্ষে কোনও ঐতিহাসিক তথ্যপ্রমাণ নেই। তাহলে, এতকাল মুসলিম শাসনাধীন দিল্লি ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় মুসলমান জনসংখ্যা বহুগুণ বাড়ত। সেটা কিন্তু হয়নি। তাছাড়া কে কাকে বিয়ে করবেন, সেটা তার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। হিন্দু কোড বিল কিংবা মুসলিম পার্সোনাল ল'- বাইরেও ভিন্ন ধর্মে বিয়ে দেশের নাগরিক আইনে স্বীকৃত। এভাবে ভিন্ন ধর্মে বিয়ে করা বহু দম্পতি সুখে সংসারও করছেন।
8) বিজ্ঞাপনটার স্বপক্ষে কেউ কথা বলেনি। কেউ মুক্তচিন্তায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলে কোর্টেও যায়নি। এখানেই সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসক জিতে যাচ্ছে। এতে দেশের মনন, বহুত্ববাদ আক্রান্ত হচ্ছে। এখনই বলা মুশকিল যে অদূর ভবিষ্যতে এটার কি পরিণতি হতে চলেছে।
আলোচনায় বসতে বাধ্য হলেও নতি স্বীকার করছে না সরকার।
কলকাতার নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সাংবাদিকদের চোখে কেমন সেই লকডাউন চিত্র, আসুন দেখে নেওয়া যাক।
আজ তৃতীয় পর্বে গায়িকা সারণির বাড়ির অন্দরে চোখ রাখব আমরা।
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফা ভোটের দিনই বাংলাদেশে মন্দিরে মন্দিরে পূজারত মোদী।
নির্বাচনী বন্ডের টাকাই কি বিধায়ক কেনাবেচার খেলায় কাজে লাগছে?
নির্বাচনী বন্ডোর মাধ্যমে বেসরকারি সংস্থা গোপনে রাজনৈতিক দলকে টাকা জোগাচ্ছে।