বিদেশিরা এসে হইহই করে গুণগান করে যাচ্ছেন এই গ্রাম এবং সেখানকার শিল্পকে। কিন্তু ভারতবর্ষে প্রচার কোথায় এই গ্রামের? বাঙালি তো ভুবনেশ্বর বলতে পুরীর সমুদ্র, কটকি শাড়ি আর কোনারকের সূর্য মন্দির বোঝে। খুব বেশি হলে চিলকা হ্রদ, ধবলগিরি, খন্ডগিরি। আজ বরং একটু পথ হারিয়ে অন্য দিকে যাওয়া যাক।
ভুবনেশ্বর থেকে পুরী যাচ্ছেন সড়কপথে? লম্বা রাস্তাটা শেষই হতে চাইছে একদম? ঘুম পেয়ে গেল নাকি? রাস্তায় যেতে যেতেই দেখতে পাবেন, রংচঙে পটচিত্রের এক গ্রাম, রঘুরাজপুর। এটি ওড়িশার পুরী জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পীদের গ্রাম। পটচিত্র শিল্পী ও গোটিপুয়া নাচের (ওডিসির জন্য বিখ্যাত নামে পরিচিত ভারতীয় ক্লাসিকাল নাচের আদি রূপ) জায়গা এটি। এছাড়া গ্রামটি বিখ্যাত ওডিসি প্রচারক এবং গুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের জন্মভূমি। গ্রামটি তসরের উপর আঁকা, পাম পাতায় কারুকার্য, কাঠে খোঁদাই, কাঠ গোবর এবং কাগজ মণ্ড দিয়ে তৈরি পুতুল এবং মুখোশের জন্য বিখ্যাত।
রঘুরাজপুর 0.03 কিমি দুরে। সাইনবোর্ডটা ক্রস করেই গাড়ি যেই ঢুকবে গ্রামের মধ্যে, বর্ষাকালে ময়ূরের পেখম মেলে নেচে ওঠার মতোই নেচে উঠবে আপনার মনটা। এত রঙ, এত জীবন্ত গ্রাম, এত শান্তি এর আগে আপনি খুব কমই দেখেছেন। পুরো গ্রামটা জুড়ে লাল রঙের বাড়িগুলো সারিবদ্ধভাবে রয়েছে। লাল রঙের উপর সাদা রঙের নানা পটচিত্র, কৃষ্ণের জীবনাধ্যায়ের বিভিন্ন পর্যায় এবং আদিবাসীদের বিভিন্ন চিত্র রঙ তুলি দিয়ে আঁকা। আর প্রতিটি ঘরে ঢুকলে তো আপনি চমকেই যাবেন। এক একটি ঘর এক একটি শিল্পের আখর। গ্রামের প্রায় 300 ঘর সমস্ত প্রতিকূলতা কাটিয়ে, অন্য কোনো পেশায় নিয়োজিত না হয়ে, অর্থ উৎপাদনের কথা না ভেবে বংশ পরম্পরায় বাঁচিয়ে রেখেছে এই শিল্পকে। এক একটি তসর কাপড়ের উপর সূক্ষ্ম কিছু সৃজনশীলতা, যেগুলো আপনার চোখ সরতেই দেবে না, আপনি ভাবছেন এত সূক্ষ্ম কাজ করলেন কি করে তাঁরা, এর বুঝি অনেক দাম নেবেন তাঁরা। মাত্র 100 টাকার বিনিময়ে অবলীলায় বেচে দিলেন। এই জিনিসটাই আপনি কোলকাতায় হস্তশিল্প মেলায় কেনেন হাজার টাকার বিনিময়ে। 10 টাকা থেকে শুরু করে 10000 টাকা অবধি বিভিন্ন শিল্পকলা, কখনোও তা কাগজের উপর, কখনোও তা কাপড়ের উপর, কখনোও তালপাতার উপর, কখনোও বোতলের গায়ে, কখনোও ল্যাম্পসেডের উপর, চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সুপুরির উপর পটচিত্রের নিখুঁত কাজ। তা মাত্র 10 টাকা। খুব সামান্য পারিশ্রমিকে অতি মূল্যবান শিল্পসাধনা করে যাচ্ছেন মানুষগুলো।
বছর দুই হল, সরকার হেরিটেজ গ্রাম বলে স্বীকৃতি দিয়েছে এই গ্রামকে। তাই কিছু লোকজন চিনেছেন। বেশিরভাগ মানুষ এখনও সেভাবে জানেনই না এই শিল্পের খনির কথা। আসুন আরোও বেশি করে প্রচার করি ওড়িশার এই সোনার গ্রামের। সাহায্য করি এই শিল্পকে উত্সাহিত এবং দীর্ঘজীবী করতে।
শিয়ালদহে রেল প্রথমবার ঝড় থেকে বাঁচতে ‘সিকিউরিং' প্রক্রিয়ার সাহায্য নিচ্ছে।
আঁকা: অর্যমা দাস
বর্তমান থেমে গিয়েছে, ভবিষ্যৎ কী?? আমরা জানি না।
কীভাবে ফিরবে গ্রন্থাগারের হাল?
লকডাউনে সবার কাছে সেই মুক্তির জানলা হল সোশাল মিডিয়া।
রামায়ণের যুগের পরও দু-দুটো যুগ চলে গেল, মানুষ এখনোও বলবেন অযোধ্যা কিনা 'রামলালা'র একার?