×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • গোমূত্র নেগেটিভ, করোনা পজিটিভ!

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 21-09-2020

    প্রতীকী ছবি।

    বুজলে গিন্নি, কাল তর্পণ করতে যাব!ঠাকুর শিরোমণি তাঁর গিন্নির উদ্দেশে এ হেন বাক্য ছুঁড়ে দিয়ে শুতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে লাগলেন। গিন্নি মা এসব শুনে ব্যস্ত হয়ে ছুটে এসে বললেন, ‘এ বছরটি ছেড়েই দাও লক্ষ্মীটি! কিন্তু ঠাকুর শিরোমণি সে কথা শুনবেন কেন? আরে ভাই করোনা আসবে যাবে, কিন্তু পিতৃপুরুষকে তো এই একদিনই বছরে জলদান করা হবে নাকি? সেটা বাদ দেওয়া চলে? তাই গিন্নিকে গম্ভীর কণ্ঠে জানিয়ে দিলেন, ‘দেখো গিন্নি, এবার ভিড় বেশি হবে না। যাব। ভয় নেই। আর আমি তো সারাদিন পুজো-আচ্চা করি, গোমূত্র খাই আমার আবার করোনার ভয় কী?’ অগত্যা গিন্নি মা রাজি হলেন। শিরোমণি মশাই যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিশ্চয়ই ভেবেই নিয়েছেন। আর উনি যখন কাল যাবেনই তখন না হয় বলব ছেলেটার জন্য দু'সেট জামা আনতে, পুজোয় তো কিছুই হয়নি। এই সুযোগেই না হয়...

     

    কিন্তু এ কী! সকালে ঘাটে এসে এ কী দৃশ্য দেখা দিল! এ যে মেলা বসেছে। শিরোমণি মশাই ছবিটা দেখে দুবার ভাবলেন, তবে কি করোনা বিদায় নিয়েছে? লোকজনের মনের ফূর্তি দেখে তো তাই মনে হচ্ছে! হাসছে, খাচ্ছে, স্নান করছে। সে একেবারে হইহই রইরই ব্যাপার। কিন্তু এসেছে যখন তর্পণ তো করতেই হবে। আর ওঁর ভয় কী? তিনি তো পুজো-আচ্চা করেন, প্রদীপ জ্বালান, গোমূত্রও খেয়েছেন, ওঁকে করোনা ধরবে না। জ্জ্যয় মা, জ্জ্যয় তারা বলে নেমে এলেন ঘাটে। এখানে থুথু, ওখানে নোংরা ভর্তি। এ কাশছে, ও কফ ফেলছে, তাতেই বা কী! পুণ্য অর্জন করার সময় অত ভাবতে নেই। শিরোমণি মশাই দিলেন ডুব। তর্পণ সারলেন। গঙ্গা চিরকালের মতো সমস্ত আবর্জনা বয়ে নিয়ে চলতে থাকল। শুধু কুসংস্কার নিয়ে যেতে পারল না কোনওদিন! 

     

    তর্পণ সেরে শিরোমণি মশাই একটু এদিক ওদিক ঘুরে এলেন নিউ মার্কেটে। ভাবলেন এইটা অন্তত ফাঁকা থাকবে। সবাই নিশ্চয়ই অনলাইন শপিং করছে বা হয়তো কিছুই কিনবে না এবার। কিন্তু সেখানেও যে লোকের ঢল নেমেছে। পিলপিল করছে লোক। সবাই জামা কিনছে, জুতো কিনছে, গায়ের উপর উঠে দরদাম করছে। কারও মাস্ক গলায় ঝুলছে, কারও বা আবার কানে। কারও তো সেটাও নেই। এই গরমে ওসব পরে থাকা যায় নাকি! ঠিকই তো ঠিকই তো! শিরোমণি মশাই নিজেই ঘাড় নেড়ে দোকানের দিকে এগিয়ে গেলেন। ছেলে বউ সবার জন্যই কিছু নিয়ে যাবেন। আরে বাবা দুগ্গা পুজো তো বছরে একবারই আসে নাকি! আর ওঁর কী হবে? তিনি তো পুজো করেন, কাঁসর বাজান, গোমূত্র খানওঁর করোনা হবে না।

     

    ঠাকুর শিরোমণি বাড়ি এলেন। বিকেল থেকেই জ্বর, স্বাদ নেই মুখে। কিন্তু ওঁর আর কী হবে! উনি তো পুজো-আচ্চা করেন! সবটা সগ্গো থেকে দুগ্গা আর শিব দেখলেন। শিব দেখে গিন্নিকে বললেন, ‘আর এক মাস দেরি করতে হবে না। এখনই বেরিয়ে পড়। মর্ত্যের যা হাল, ওখানে গিয়ে মাসখানেক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে, নইলে নিস্তার নেই! দেখছ না তোমার ভক্তদের দশা! দুগ্গাও ঘাড় নেড়ে সম্মতি বলল, ‘ঠিকই বলেছ কত্তা। কিন্তু এবার তোমাকেই কিন্তু আমাদের ছাড়তে যেতে হবে, গাড়ি ঘোড়া নইলে কিছু পাওয়া যাবে না। শুধু যাওয়ার সময় খেয়াল রেখো, সঙ্গে যেন গাঁজার একটা পাতাও না থাকে, তবে কিন্তু আর কৈলাসে ফিরতে হবে না। কৃষ্ণের জন্মস্থানে ঘুরতে যেতে হবে! শুনে শিব ভ্রূ কুঁচকে বললেন, ‘বটে! দেবতাকে গারদে পুড়বে! এত বড় আস্পদ্দা কার?’ দুগ্গা মিচকি হেসে বললেন, ‘তোমার শ্বশুরবাড়ির লোকের খিক খিক! শুনে শিবের তো মাথায় হাত! কিন্তু কী আর করা যাবে, বউ যখন বলেছে মানতে তো হবেই।

     

    বরের কথা মেনে দুগ্গা সপরিবারে পরদিনই শিবের বাইকে চড়ে থুড়ি বাহনে চেপে রওনা দিলেন মর্ত্যে, ওদিকে ঠাকুর শিরোমণির রিপোর্ট এল, করোনা পজিটিভ! গোমূত্র সেবন, কাঁসর বাজানো, প্রদীপ জ্বালানোর ফল হল নেগেটিভ। কিন্তু কী আর করা যাবে, বচ্ছরকার দুগ্গা পুজো, আর তর্পণ তো একবারই হয়, প্রাণ দিয়ে না হয় সেটাই পালন করা হোক! মা আসছেন বলে কথা।

     


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    ক্রমাগত ভাঙনের ফলে ফুলহার নদ এবং গঙ্গার ব্যবধান এক কিলোমিটারে এসে দাঁড়িয়েছে

    অবশেষে আত্মনির্ভরতা অর্জন ভারতীয় ফ্যাশন শিল্পের, বস্ত্র মন্ত্রক সরকারিভাবে প্রকাশ করল ভারতীয় পোশাকের

    কলকাতা মেডিক্যালের ইন্টার্নরা জানিয়েছেন, প্রত্যেক স্বাস্থ্যকর্মী N95 মাস্ক পাননি। হচ্ছে না স্বাস্থ্

    ফ্লিপকার্ট জানায় যে নাগাল্যান্ড ভারতের বাইরে বলে সেখানে ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব না।

    ভাষণের দিন শেষ, রাজনৈতিক প্যারোডিই এখন প্রচারের নতুন ভাষা

    জীবনের প্রতিপদে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েও সব বাধা জয় করে এগিয়ে চলেছেন অমৃতা ‘ন হন্যতে’ মুখার্জি।

    গোমূত্র নেগেটিভ, করোনা পজিটিভ!-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested