×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • স্বাধীনতার সৈনিক বিপ্লবতীর্থ চন্দননগরের মতিলাল রায় ও মনীন্দ্রনাথ নায়েক

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 11-08-2021

    সবসময় সম্মুখসমরে নেমে যুদ্ধ করলেই হয় না, কখনও কখনও কাউকে পর্দার আড়ালে থেকে রসদ সরবরাহ করেও যুদ্ধের সাপ্লাই লাইন চালু রাখতে হয়। তেমনই দু’জন হলেন চন্দননগরের মতিলাল রায় এবং মনীন্দ্রনাথ নায়েক।

     

    1910 সাল, পাঁচ বছর আগেই লর্ড কার্জনের বিধানে বাংলা ভেঙে দু’টুকরো করা হয়েছে, যাতে ব্রিটিশ বিরোধী বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের উদ্দীপনা কিছুটা দমন করা যায়বিদেশি শাসকের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে উত্তাল গোটা দেশস্বাধীনতা সংগ্রামী অরবিন্দ ঘোষ ব্রিটিশদের হাত থেকে বাঁচতে চন্দননগর পালিয়ে এলেন। আশ্রয় নিলেন মতিলাল রায়ের বাড়িতে। কিন্তু কে এই মতিলাল রায়? 

     

    প্রবর্তক সংঘ এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন দুইই একে অন্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মতিলাল রায় হলেন এই প্রবর্তক সংঘের প্রতিষ্ঠাতা। অরবিন্দ ঘোষ সহ বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিল চন্দননগরের বোড়াইচন্ডীতলার মতিলাল রায়ের পৈতৃক বাড়ি। 

     

    1920 সাল, চারিদিকে তখন স্বাধীনতা আন্দোলন চরম পর্যায় চলছে। কিছুদিন পরেই গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেবেন, তখন চন্দননগরের বোড়াইচন্ডীতলায় মতিলাল রায় শুরু করলেন প্রবর্তক সংঘ। এবং তার মুখপত্র প্রবর্তন পত্রিকা। মতিলাল রায়কে সাধু সন্ন্যাসীদের মতো শান্ত প্রকৃতির দেখতে হলেও তিনি বিপ্লবীদের মধ্যে বিপ্লবের বারুদ কোনওদিন নিভতে দিতেন না। তাঁদের অনবরত উৎসাহ দিতেন দেশের কাজে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। ফরাসডাঙা, আজকের চন্দননগর যেহেতু তখন ফরাসিদের হাতে ছিল, তাই ব্রিটিশরা তেমন সেখানে আসতে পারত না। আর সেটারই সদ্ব্যবহার করতেন মতিলাল রায়। অনুশীলন সমিতি সহ অন্যান্য সকল বিপ্লবী সমিতির সদস্যদের নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিতেন। 

     

    শুধু তাই নয়, রাজসাক্ষী হয়ে বিশ্বাসঘাতক নরেন গোঁসাই যখন অনেক বিপ্লবীদের আখড়া এবং অন্যান্য তথ্য ব্রিটিশদের কাছে ফাঁস করে দেয়, তখন তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। মতিলাল রায়ই কানাইলাল দত্তকে সেই বন্দুক জোগাড় করে দেন, যার সাহায্যে কানাইলাল দত্ত নরেন গোঁসাইকে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে হত্যা করেন। 

    আরও পড়ুন: স্বাধীনতার সৈনিক কানাইলাল ভট্টাচার্য

     

    মতিলাল রায়ের নাম করলেই আর একজন বিপ্লবীর নাম উঠে আসতে বাধ্য, যিনি নিজেও পর্দার আড়ালে থেকে কাজ করে গেছেন চিরকাল, মনীন্দ্রনাথ নায়েক। তিনি প্রবর্তক সংঘের সদস্য এবং প্রবর্তন পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। অরবিন্দ ঘোষ মতিলাল রায়কে ফরাসি ভাষায় যত চিঠি লিখতেন, সব মনীন্দ্রনাথ নায়েক অনুবাদ করে দিতেন। 

     

    মনীন্দ্রনাথ স্বচেষ্টায় নারকেলের খোল ব্যবহার করে বোমা বানাতে শেখেন। পরবর্তীকালে রিপন কলেজের রসায়নের অধ্যাপক সুরেশ চন্দ্র দত্তের থেকে আধুনিক এবং উন্নত মানের বোমা বানাতে শেখেন। তাঁর বানানো বোমা অরবিন্দ ঘোষ দিল্লি, লাহোর প্রভৃতি জায়গায় পাঠাতেন, যা স্বাধীনতা আন্দোলনে ব্যবহৃত হত। এমনকি বড়লাট হার্ডিঞ্জকে লক্ষ্য করে বিপ্লবী বসন্ত বিশ্বাস যে বোমা ছুঁড়েছিলেন, সেটাও মনীন্দ্রনাথ নায়েকেরই তৈরি করা ছিল। 

     

    সামনে থেকে যাঁরা লড়াই করেছিলেন তাঁদের অনেকেরই নাম আমরা জানি, কিন্তু নেপথ্যে যাঁরা থেকে যান তাঁদের কতজনকে আমরা চিনি? তেমনই দু’জন হলেন এই দুই বন্ধু এবং কর্মী, মতিলাল রায় এবং মনীন্দ্রনাথ নায়েক, যাঁদের কোনওদিন ব্রিটিশ পুলিশ ছুঁতে পারেনি। চন্দননগরকে বিপ্লবতীর্থ বলা হয়ে থাকে, এবং এই বিপ্লবতীর্থের দুই যুগপুরুষ হলেন মতিলাল এবং মনীন্দ্রনাথ, যাঁদের আজ আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি।


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    ওজোন স্তরে একটি বিশালাকার ফাটল তৈরি হয়েছে, যা ক্রমশ আরও বেড়ে চলেছে।

    64 বছর বয়সে মেডিক্যাল পড়তে ভর্তি হলেন জয় কিশোর।

    মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখেও দমে না গিয়ে নিজের স্বপ্নপূরণের ও আরও অনেককে কাজের সুযোগ করে দিচ্ছে সন্নিতি।

    ভোট পুজোর আগে এই ছড়া, কার্টুন, ইত্যাদির মধ্যে দিয়েই বাংলার সুস্থ সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে।

    ভোটের সময় ছাড়াও অন্যান্য সময় সরকার তৎপর হলে মানুষ বাঁচে।

    এনগেজড হওয়ার পরেও মনে নানান সমস্যা, চিন্তা উঁকি দেয়, তাদের কী সামলানো যায়?

    স্বাধীনতার সৈনিক বিপ্লবতীর্থ চন্দননগরের মতিলাল রায় ও মনীন্দ্রনাথ নায়েক-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested