×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • মহালয়ার সকাল এবং রেডিওর একাল সেকাল

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 05-10-2021

    প্রতীকী ছবি।

    রাত পোহালেই মহালয়া (Mahalaya)রেডিওতে (Radio) বেজে উঠবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের (Birendra Krishna Bhadra) গমগমে কণ্ঠস্বর। চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে সূচনা হবে দেবীপক্ষের সকাল। বাবা যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন মহালয়ার দু’দিন আগে থেকে শুরু হত তোড়জোড়। দাদুর পুরানো রেডিওটাকে সারাতে বসত বাবা। চশমা এঁটে, নানান জিনিসপত্র নিয়ে নিখুঁত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে চলত। পাশে বসতাম আমি, ফ্রক পরে মাথায় ঝুঁটি বেঁধে। বাবা একদিকে রেডিও সারাত, আর একদিকে গল্প বলে চলত এই রেডিওর, বাবার ছোটবেলার মহালয়ার। দু’দিনের মাথায় সেরে উঠত দাদুর স্মৃতি এবং তার জায়গা হত মাথার কাছের টেবিলে। অ্যালার্ম ক্লকে অ্যালার্ম দিয়ে শুতে যেতাম মহালয়ার আগের দিন। ঘুম আসতেই চাইত না সেদিন। ঠিক পৌনে চারটেয় বেজে উঠত ঘড়ি, বাবা উঠে চালিয়ে দিত রেডিওটাকে। কলকাতায় তখনও এতটা গরম থাকত না অক্টোবরে। বরং ভোররাতে হালকা শীত শীত করত। বাবা উঠে সোজা হয়ে চোখ বুজে শুনত, আমি কাঁথার নীচ থেকে বিড়াল ছানার মতন মুখ বের করে বসে শুনতাম। মানে শোনা শুরু করতাম। শুরু হত শঙ্খধ্বনি দিয়ে মহিষাসুরমর্দিনী, একের পর এক গান, পাঠ। মুগ্ধ হয়ে শুনতে শুনতে কখন ঘুমিয়ে পড়তাম বুঝতাম না, আবার শেষের দিকে রূপং দেহী হত যখন ঘুম ভেঙে যেত। তারপর চলত ডিডি বাংলায় মহিষাসুর নিধনপর্ব। 

     

     

    সময় বদলাল, দাদুর রেডিও দেহ রাখল, তারপরের বছর বাবাও চলে গেল। সময় বদলাল অভ্যেসও। রেডিওর জায়গা নিল ফোন। ফোনে অ্যালার্ম দেওয়া, ফোনের রেডিওতেই মহিষাসুরমর্দিনী শোনা। গত ছয় সাত বছর তেমনই চলছে। 

     

    আরও পড়ুন: এমন বর্ষার দিনে....

     

    আজকাল মিউজিক অ্যাপস আর ইউটিউবের চক্করে রেডিও যন্ত্রটা অব্যবহৃতই থাকে। আজকাল হাতে গোনা কয়েকটা বাড়িতে হয়তো রেডিওতে মহিষাসুরমর্দিনী শোনা হয়। তবুও কিছু কিছুদিন থাকে না, যেদিনগুলোয় বিশেষ কিছু জিনিসের কথা, স্মৃতি মনে পড়ে যায়; তেমনই একটা দিন হল মহালয়া, যেদিন রেডিওর কথা খুব মনে পড়ে। আজকাল অবশ্য ইউটিউবের দৌলতে সারা বছরই মহিষাসুরমর্দিনী শোনা যায়, তবুও মহালয়ার সকালে তার মাহাত্ম্য, সৌন্দর্য বোধহয় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। যদিও ইদানীং অধিকাংশ মানুষ টিভির মহিষাসুরমর্দিনী দেখতেই বেশি পছন্দ করেন, নাম করা অভিনেত্রীদের নানান নাচ, অভিনয় তাঁদেরকে মুগ্ধ করে। তবুও কিছু কিছু জিনিস ছাড়া বাঙালির পুজোটা ঠিক জমে না। তাই সময় বদলালেও, অভ্যেস বদলালেও কিছু জিনিস এক থেকে যায়। ওই রেডিওর মতোই। বিশেষত তাঁদের কাছে, যাঁরা পুজোর সময়েও নানান কাজে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের বাইরে থাকেন। সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে দেখা যায় তাঁদের আবেগঘন পোস্ট, ইউটিউবে সেখানে বসেই ঠিক চারটে নাগাদ মহিষাসুরমর্দিনী শোনে তাঁরা, যখন বাকি গোটা শহর গভীর ঘুমে মগ্ন থাকে। 

     

     

    তাই রেডিওর সুদিন গেলেও, নতুন মাধ্যম জায়গা করে নিলেও মহালয়ার পুণ্য প্রভাতে কলকাতার সুউচ্চ কোনও ফ্ল্যাটের ঘরে হোক বা পুরুলিয়ার কোনও প্রত্যন্ত গ্রামে, কিংবা পাহাড়ের কোলে কোনও গ্রামে, অথবা ভিনদেশে নিস্তব্ধ নগরীর কোনও একটি দু’টি ঘরে ফোনের রেডিও কিংবা ইউটিউবে আজও বেজে ওঠে ‘আশ্বিনের শারদ প্রাতে...'


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    নিয়তি আজ সময়ের কাছে, অর্থের কাছে, ক্ষমতার কাছে অসহায়। সে শুধু ধ্বংস খেলা দেখে চলেছে।

    চন্দননগরের শ্রীশচন্দ্র এবং কানাইলাল চারুচন্দ্র রায়ের থেকে স্বদেশমন্ত্রের দীক্ষা পেয়েছিলেন।

    হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামকে ছাপিয়ে সিগন্যাল এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

    মৃত্যুর পর কি সব আত্মাই মুক্তি পেয়ে যায় জাগতিক সমস্ত বন্ধন থেকে? 

    সচেতন এবং সতর্ক না হলে সময়ের আগেই ক্লাইমেট এমার্জেন্সির শিকার হতে হবে আমাদের।

    রাজ্যটা এখন চিড়িয়াখানা নাকি সার্কাসে পরিণত হয়েছে তা নিয়ে অনেকের মনেই ধন্দ।

    মহালয়ার সকাল এবং রেডিওর একাল সেকাল-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested