নদীবক্ষে ভ্রমণের কথা শুনলেই মনে পড়ে যায় অতীতের রাজাদের নৌকো বিহারের কথা, ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে উজানে শুধুই ভেসে চলা। বর্তমানে ব্যস্ত জীবনে সময়ের অভাবে তা সম্ভব হয় না, আবার সময় হলেও পকেটে টান পড়ে যায়। নৌকো/লঞ্চে বিহার করবে আর কম করে 200-500 টাকা দেবে না, তা কি হয়? এটা কি তুমি রোজ ভিড়ে ঠাসাঠাসি করে নদী পেরিয়ে অফিস যাচ্ছ নাকি? এ হচ্ছে প্রমোদতরীতে চেপে ভ্রমণ, অতএব তার জন্য মূল্যও চোকাতে হবে বেশি। কিন্তু যদি বলা হয় সাধের এই গঙ্গাবিহার করা যায় মাত্র 39 টাকায়, তাও এক ঘন্টারও অধিক সময়ের জন্য?
রিভার ক্রুজের টিকিট কাউন্টার
কলকাতায় যে হেরিটেজ গঙ্গা রিভার ক্রুজ চালু হয়েছে, তার দু’ মাস পূর্ণ হল। উদ্দেশ্য? কম মূল্যে গঙ্গাবক্ষে প্রমোদ ভ্রমণের ব্যবস্থা করা। রাজ্য সরকারের অন্যতম ভাল উদ্যোগ বলা যেতেই পারে এটাকে। মিলেনিয়াম পার্কের কাছেই হচ্ছে এই হেরিটেজ ক্রুজের টিকিট কাউন্টার, যেখান থেকে ক্রুজ শুরু হওয়ার অন্তত আধ ঘন্টা আগে টিকিট কাটতে হবে মাত্র 39 টাকার বিনিময়ে। একদিনের নির্দিষ্ট সংখ্যাক টিকিট ফুরিয়ে গেলে সেদিনের মতো আর ক্রুজে চড়া হবে না আপনার, অথবা পরের রাইডের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তারপর লাইন দিয়ে ক্রুজে উঠে বসতেও পারেন, দাঁড়াতেও পারেন আপনার ইচ্ছে মতো। এরপর শুরু হবে নদী পথে ভ্রমণ। ক্রুজ একে একে বাবুঘাট, আর্মেনিয়ান ঘাট, নিমতলা ঘাট প্রভৃতি ঘুরিয়ে হাওড়া ব্রিজ ছাড়িয়ে আরও একটু এগিয়ে আবার ফিরে আসতে থাকবে মিলেনিয়াম পার্কের দিকে, কিন্তু তখনই আপনার ট্রিপ শেষ হবে না। সে মিলেনিয়াম পার্ককে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাবে ইডেন গার্ডেন্সের দিকে, ছাড়িয়ে যাবে প্রিন্সেপ ঘাট। অবশেষে দ্বিতীয় হুগলি ব্রিজ থেকে ঘুরিয়ে ফিরে আসবে। এই গোটা যাত্রাপথে মোট দেড় ঘন্টা সময় লাগে।
এত কম মূল্য হওয়ার দরুণ কলকাতা ও শহরতলির বাসিন্দাদের অন্যতম পছন্দের ছুটি কাটানোর ঠিকানা হয়ে উঠেছে কলকাতার এই হেরিটেজ গঙ্গা রিভার ক্রুজ। এছাড়াও ট্রিপ চলাকালীন ক্রুজে সারাক্ষণ হয় মিউজিক চলে, নইলে রবীন্দ্র সংগীত। একইসঙ্গে সেখানে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার ও কফি। দিনে দু’টো করে ট্রিপ হয়। একটা 4টে থেকে 5.30টা আরেকটা 6টা থেকে 7.30টা। কিন্তু বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে তা কতটা নিরাপদ? ভ্রমণপিয়াসীরাই বা কতটা খুশি গঙ্গাবক্ষে প্রমোদতরীতে সওয়ার হয়ে?
রাতের আলো ঝলমলে ক্রুজ
দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা মঞ্জিরা ঘোষাল বলছিলেন, ‘বহুদিন বাদে বাড়ি থেকে বেরোলাম। কোথায় যাব ভেবে না পেয়ে ঠিক করলাম ক্রুজ থেকেই ঘুরে আসি। আমরা ক্রুজ শুরু হওয়ার আধ ঘন্টা-পঁয়তাল্লিশ মিনিট আগেই টিকিট কাউন্টারের সামনে পৌঁছে যাই, তারপর টিকিট কেটে উঠে পড়ি ক্রুজে। আমরা যেদিন যাই, সেদিন মিউজিক চালানো হয়েছিল। মাইকেও বারবার সতর্কবার্তা ভেসে আসছিল, যেন সবাই মুখে মাস্ক পরে থাকে, দূরত্ব বজায় রাখে। কেউ কেউ শুনছিল, কেউ আবার মাস্ক নামিয়ে ছবি তোলা, গল্প করা চালিয়ে যাচ্ছিল। তবে ওখানকার কর্মীরা সর্বক্ষণ মাস্ক পরে, গ্লাভস পরেই কাজ করছিলেন। ভিড় মোটামুটি ছিল, আসলে এত কম টাকায় এত সুন্দর একটা ট্রিপ। সব থেকে ভাল লাগল গঙ্গার প্রতিটা ঘাটের নাম এবং তার ইতিহাস ও বৈশিষ্ট বারবার বলে দেওয়া হচ্ছিল মাইকে। ফলে যারা এই বিষয়গুলো জানেন না, তারা নতুন কিছু জানার সুযোগ পাচ্ছিলেন।' মঞ্জিরাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তারা কোন সময়ের ট্রিপে গেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা 4টের ট্রিপে গিয়েছিলাম। আমার মতে ওই ট্রিপটাতেই যাওয়া ভাল, কারণ এখন দিন ছোট হয়ে আসছে ক্রমশ, ফলে অন্ধকার হয়ে গেলে হাওড়া ব্রিজ আর দ্বিতীয় হুগলি ব্রিজের আলো ছাড়া আর কিছুই দেখা যাবে না। এখন কুয়াশাও পড়ছে। ফলে প্রথম ট্রিপটায় গেলে সব যেমন দেখা যাবে, উপরি পাওনা হিসেবে সূর্যাস্ত আর নামার সময় আলো ঝলমলে ক্রুজটাকেও দেখা যাবে।'
সঙ্গে তিনি আরও জানান, যেহেতু এখন শীত পড়ছে, এমনি বোঝা না গেলেও নদীবক্ষে অতক্ষণ থাকার ফলে ঠাণ্ডা লেগে যেতেই পারে, তাই প্রয়োজনীয় শীত পোশাক সঙ্গে রাখা আবশ্যক। অতএব সব মিলিয়ে রাজ্য সরকারের নতুন উদ্যোগ এবং এই শীতে কলকাতার নতুন ছুটি কাটানোর ঠিকানা কোভিড পরিস্থিতিতেও পর্যটকদের নিয়ে জমজমাট।
যে জায়গায় সারা বছর তুষারপাতই নিয়ম, হিমাঙ্কের উপরে ওঠে না তাপমাত্রা, সেখানে টানা তিনদিন ভারী বর্ষণ।
জয় শ্রীরাম বনাম জয় বাংলা ধর্মীয় সত্তার রাজনীতি বনাম ভাষা সত্তার রাজনীতি
ভাল-খারাপ দুই’ই আছে, তবু ই-বুকেই অভ্যস্ত হচ্ছেন পাঠক
উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাকি অংশের যোগাযোগের প্রধান সেতু আজ বিপন্ন
29 জুন ভারতীয় সরকার 59টি চিনা অ্যাপের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল, কিন্তু এতে কার কতটা লাভ আর ক্ষতি
ভারতের শাস্ত্রীয় নৃত্য তথা সাংস্কৃতিক জগতে এক বিশাল শূন্যতা রচনা করে চলে গেলেন বিরজু মহারাজ।